Thursday, January 30, 2025

লেজবিহীন ষষ্ঠ প্রজন্মের যুদ্ধবিমান প্রকাশ্যে এনে চীন চমক, চাপে আমেরিকা ও ভারত

Share

যুদ্ধবিমান প্রকাশ্যে এনে চীন চমক

ষষ্ঠ প্রজন্মের লেজবিহীন যুদ্ধবিমান প্রকাশ করে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে চীন। অত্যাধুনিক এই যুদ্ধবিমানের নাম ‘জে-৩৬’, যা চীনের প্রতিরক্ষা গবেষণার সাম্প্রতিকতম সাফল্য। এই উন্নতমানের প্রযুক্তি বেইজিংকে আকাশপথের শক্তি প্রদর্শনে এক ধাপ এগিয়ে দিয়েছে। চীনের এই পদক্ষেপ আমেরিকা ও ভারতের মতো দেশগুলিকে নতুন করে প্রতিযোগিতার মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।

চমকে দেওয়া ক্ষমতা

লেজবিহীন ‘জে-৩৬’ যুদ্ধবিমানের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এর উন্নতমানের স্টেলথ প্রযুক্তি। বিমানে তিনটি টার্বোফ্যান ইঞ্জিন থাকায় এটি অত্যন্ত গতিশীল এবং কার্যকরী। লেজ না থাকার কারণে এই বিমান রাডারে সহজে ধরা পড়ে না। একই সঙ্গে এর দীর্ঘক্ষণ আকাশে থাকার ক্ষমতা এবং মাঝ আকাশে জ্বালানি ভরার সুবিধা এটিকে অন্য যুদ্ধবিমানের চেয়ে আলাদা করেছে। জে-৩৬ এর হাতিয়ার বহনের ক্ষমতাও পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমানের তুলনায় অনেক বেশি।

মাওয়ের জন্মদিনে আত্মপ্রকাশ

২৬ ডিসেম্বর, মাও জে দং-এর জন্মদিনে সিচুয়ান প্রদেশের চেংডুতে আয়োজিত ‘ঝুহাই এয়ার শো’-তে প্রথমবারের মতো আকাশে উড়লো জে-৩৬। এটি চীনের প্রতিরক্ষা সংস্থা ‘চেংডু এয়ারক্রাফ্ট ইন্ডাস্ট্রি গ্রুপ’-এর নির্মিত একটি বিমান। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি চীনের প্রতিরক্ষা প্রযুক্তিতে এক যুগান্তকারী অগ্রগতি।

আমেরিকার প্রতিক্রিয়া

ষষ্ঠ প্রজন্মের যুদ্ধবিমান তৈরির দৌড়ে চীনের এই সাফল্য আমেরিকার জন্য একটি বড় ধাক্কা। আমেরিকার ‘লকহিড মার্টিন’ দীর্ঘদিন ধরে ষষ্ঠ প্রজন্মের যুদ্ধবিমান তৈরির প্রকল্পে কাজ করলেও, চীনের মতো সাফল্য এখনও আসেনি। আমেরিকার এই প্রকল্পটি ‘নেক্সট জেনারেশন এয়ার ডমিন্যান্স’ (এনজিএডি) নামে পরিচিত। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আমেরিকা খুব শিগগিরই নতুন প্রজন্মের যুদ্ধবিমান প্রকাশ্যে আনতে পারে।

ভারতের উদ্বেগ

চীনের এই সাফল্য ভারতকেও চিন্তায় ফেলেছে। দীর্ঘদিন ধরে ভারতীয় বায়ুসেনা যুদ্ধবিমানের ঘাটতির সমস্যায় ভুগছে। চীনের নতুন যুদ্ধবিমান ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে শক্তির ভারসাম্য বিঘ্নিত করতে পারে। এই পরিস্থিতিতে, ভারত আমেরিকা এবং রাশিয়ার কাছ থেকে পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান কেনার পরিকল্পনা করছে। ভারত ইতিমধ্যে ১১৪টি নতুন যুদ্ধবিমান কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পাশাপাশি, দেশীয় প্রযুক্তিতে ‘তেজস’ বিমানের উন্নত সংস্করণ তৈরির কাজও চলছে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

চীনের এই পদক্ষেপ ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ক্ষমতার ভারসাম্যে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, চীন তার আকাশপথের শক্তি বাড়ানোর মাধ্যমে এই অঞ্চলে নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে। পশ্চিমি দেশগুলোর প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা চীনের এই সাফল্য নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। কেউ কেউ মনে করছেন, চীনের প্রযুক্তিগত অগ্রগতি চমকপ্রদ হলেও, তাদের তৈরি অস্ত্র এখনো যুদ্ধক্ষেত্রে আমেরিকার মতো সাফল্য দেখাতে পারেনি।

ভবিষ্যৎ প্রভাব

চীনের ষষ্ঠ প্রজন্মের যুদ্ধবিমান শুধু প্রতিরক্ষা প্রযুক্তির ক্ষেত্রে নয়, ভূরাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। এটি যুক্তরাষ্ট্র, ভারত এবং তাদের মিত্রদের চীনের প্রতিরক্ষা কৌশলের প্রতি নতুন করে মনোযোগ দিতে বাধ্য করবে। একই সঙ্গে চীন তার ক্ষমতার প্রদর্শনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে প্রভাব বাড়ানোর চেষ্টা করবে।

উপসংহার

চীনের লেজবিহীন ষষ্ঠ প্রজন্মের যুদ্ধবিমান জে-৩৬ শুধু প্রতিরক্ষা প্রযুক্তির অগ্রগতির প্রতীক নয়, এটি ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক রাজনীতির গতিপথও বদলে দিতে পারে। তবে চীনের এই পদক্ষেপ বিশ্ব শক্তিগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা আরও বাড়াবে এবং প্রযুক্তিগত উন্নতির মাধ্যমে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে নতুন দিক খুলে দেবে।

Read more

Local News