ধর্মেন্দ্রের খালি হাতে শুরু, মনোজ–শশীর সহায়তায় গড়ে ওঠা এক কিংবদন্তির গল্প
রুপোলি পর্দার ‘হি-ম্যান’ ধর্মেন্দ্র আর নেই—এভাবেই বলিউডের এক অমূল্য যুগের ইতি টানলেন তিনি। ৯০ বছর বয়সে তাঁর প্রয়াণে ভেঙে পড়েছে ভারতীয় চলচ্চিত্র জগত। কিন্তু তাঁর আড়ালের গল্প—সংগ্রাম, দারিদ্র্য, আত্মবিশ্বাস, আর বলিউডের দুই তারকা মনোজ কুমার ও শশী কপূরের মানবিকতা—আজও সিনেমাপাগল মানুষের হৃদয়ে অনুপ্রেরণা হয়ে রয়েছে।
❖ লুধিয়ানার সাধারণ পরিবার থেকে অসাধারণ স্বপ্ন
১৯৩৫ সালে পঞ্জাবের লুধিয়ানার নাসরালি গ্রামে জন্ম ধর্মেন্দ্রর। বাবা ছিলেন স্কুলের প্রধানশিক্ষক। চেয়েছিলেন—ছেলে পড়াশোনাতেই জীবন গড়ুক। কিন্তু সিনেমার পর্দায় দিলীপ কুমারের ‘শহীদ’ দেখে কিশোর ধর্মেন্দ্রর মন স্থির হয়—তিনি অভিনেতাই হবেন। অর্থকষ্টে সেই স্বপ্ন বহুবার ম্লান হলেও নিভে যায়নি।
পরিবারের দায় কাঁধে নিয়ে রেলের কেরানির চাকরি পান তিনি—মাসিক বেতন মাত্র ১২৫ টাকা। চাকরি স্থির হলেও মন স্থির ছিল না। দৃঢ় সিদ্ধান্ত—অভিনেতা হতেই হবে।
❖ মুম্বইয়ে স্বপ্নের পিছু নেওয়া—কিন্তু পেটে খাবার নেই!
এক জাতীয় প্রতিযোগিতায় জয়ী হয়ে হাতে আসে সুযোগ। সেই সাহসে চাকরি ছেড়ে লুধিয়ানা থেকে মুম্বই চলে আসেন ধর্মেন্দ্র। কিন্তু সেখানে তাঁকে অপেক্ষা করছিলো কঠিন বাস্তব—
- সারাদিন স্টুডিও, পরিচালকের অফিসে দাঁড়িয়ে থাকা
- টাকার অভাবে দিনে বহুবার না খেয়ে থাকা
- নিজের বাড়ি ফেরা তো নয়ই—ট্রেনে ফিরে যাওয়ারও ভাড়া নেই
অভিনয়ের সুযোগ না পেয়ে প্রায় ঠিকই করে ফেলেছিলেন—পঞ্জাবে ফিরে যাবেন।
ঠিক তখনই এগিয়ে আসে বলিউডের মানবিক দিক।
❖ শশী কপূর—যে ভাই হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল ‘হি-ম্যান’-কে
একদিন এক পরিচালককে সঙ্গে নিয়ে ট্যাক্সিতে ছিলেন ধর্মেন্দ্র। ট্যাক্সিভাড়া দেওয়ার মতো টাকাও ছিল না তাঁর ব্যাগে। পরিচালকও ভাড়া দিতে রাজি হলেন না। লজ্জা, অপমান, অসহায়তা—সব একসঙ্গে ঘিরে ধরেছিল তাঁকে।
এই সংকটমুহূর্তে পৌঁছে গেলেন শশী কপূর। পরিস্থিতি দেখে সঙ্গে সঙ্গে—
- ট্যাক্সিভাড়া নিজে মিটিয়ে দিলেন
- ধর্মেন্দ্রকে নিজের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে খাওয়ালেন
- পরে অভিনয়-লড়াই ছাড়তে মানা করে সাহসও জুগিয়ে দিলেন
শশীর এই সাহায্যই ধর্মেন্দ্রর মনোবল ফিরিয়ে দেয়। আজও বলিউডে এই ঘটনা ‘বন্ধুত্বের সেরা উদাহরণ’ হিসেবে আলোচিত।
❖ মনোজ কুমার—প্রয়োজনে জামা পর্যন্ত কিনে দিয়েছেন
অন্যদিকে মনোজ কুমারও ধর্মেন্দ্রকে বিশ্বাস করতেন। সুযোগ না পেলেও মনোজ তাঁকে বারবার বলতেন—
“যে লড়াই ছাড়ে না, সে-ই একদিন উঠতে পারে।”
ধর্মেন্দ্রর এমন দিনও ছিল, যখন জামাকাপড় কেনার মতো পয়সা ছিল না। বলিউডের গুঞ্জন—মনোজ তাঁকে জামা কিনে দিয়েছিলেন। পরে সেই জামা ধর্মেন্দ্রর ‘লাকি শার্ট’ হয়ে ওঠে—তিনটি ছবিতে একই জামা পরে অভিনয় করে তিনটিই সুপারহিট হয়!
❖ পরিশ্রমের জয়—স্ট্রাগল থেকে সুপারস্টার
১৯৬০ সালে ‘দিল ভি তেরা হম ভি তেরে’ দিয়ে শুরু, তবে সাফল্য আসতে সময় লেগেছে। প্রথম পাঁচ বছর ২০টিরও বেশি ছবি করে বিশেষ কিছু পাননি।
১৯৬৬-তে ‘ফুল অউর পত্থর’ মুক্তি পেতেই সব বদলে যায়। এরপর—
- ‘সত্যকাম’
- ‘শোলে’
- ‘দোস্ত’
- ‘আঁখে’
- ‘জুগনু’
—সব মিলিয়ে তিন দশক তিনি হয়ে ওঠেন সর্বোচ্চ জনপ্রিয় অভিনেতাদের একজন।
❖ ব্যক্তিজীবনে আলো–ছায়া
১৯৫৪-তেই প্রকাশ কৌরকে বিয়ে করেন। পরে ১৯৮০ সালে হেমা মালিনীকে বিয়ে করেন, দুই স্ত্রী, দুই সংসার—ব্যক্তিগত জীবন হলেও তিনি সবসময়ই খবরের শিরোনাম ছিলেন।
সন্তান সানি, ববি থেকে ঈশা–অহনা—সবাইই বলিউডে নিজেদের জায়গা তৈরি করেছেন।
❖ শেষ অধ্যায়
জীবনের শেষদিন পর্যন্ত লড়াই করেছেন—শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন, হাসপাতালেও ভর্তি ছিলেন। ডিসেম্বরেই ৯০ পূর্ণ করার কথা ছিল। তার আগেই চলে গেলেন চিরনিদ্রায়।

