Monday, December 1, 2025

লাদাখের অংশ নিয়ে নতুন প্রদেশ দাবি চিনের! ভারত জানাল, ‘এটি বরদাস্ত করা হবে না’

Share

লাদাখের অংশ নিয়ে নতুন প্রদেশ দাবি চিনের!

লাদাখের কিছু অংশকে নিজেদের বলে দাবি করেছে চিন। এর প্রতিবাদে কড়া বার্তা পাঠিয়েছে ভারত। বিদেশ মন্ত্রক স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, বেআইনি ভাবে চিনা দখলদারি মেনে নেওয়া হবে না। লাদাখ সীমান্তে দুই দেশের সম্পর্ক কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ার পরও এই নতুন দাবি আবারও বিতর্ক উসকে দিয়েছে।

চিনের নতুন প্রদেশ ঘোষণা

গত ২৭ ডিসেম্বর চিনের সরকারি সংবাদমাধ্যমে ঘোষণা করা হয় যে, উত্তর-পশ্চিম চিনে দুটি নতুন প্রদেশ তৈরি করা হয়েছে— হেয়ান প্রদেশ এবং হেকাং প্রদেশ। শিনজিয়াংয়ের উইঘুর স্বশাসিত অঞ্চলের প্রশাসনের অধীনে এই প্রদেশগুলি তৈরি করা হয়েছে। চিনা কমিউনিস্ট পার্টি এবং স্টেট কাউন্সিল এই নতুন প্রদেশগুলোকে অনুমোদন দিয়েছে। এই দুটি প্রদেশ পরিচালিত হবে হোতান শহর থেকে। এর মধ্যে কিছু অঞ্চল লাদাখের অংশ বলে দাবি করছে চিন।

ভারতের প্রতিক্রিয়া

ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল জানিয়েছেন, এই তথাকথিত প্রদেশগুলোর একটি অংশ ভারতের লাদাখ অঞ্চলের অন্তর্গত। তিনি বলেন, “চিনের এই বেআইনি দাবি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না। ভারতীয় ভূখণ্ডে অবৈধ দখলদারিকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে না। নতুন প্রদেশ তৈরির ফলে আমাদের সার্বভৌমত্বে কোনো প্রভাব পড়বে না।”

তিনি আরও জানান, দিল্লি ইতিমধ্যে কূটনৈতিক স্তরে বেজিংকে এই বিষয়ে বার্তা দিয়েছে। লাদাখের সীমানা নিয়ে আগেও সমস্যার সৃষ্টি করেছে চিন, যা আন্তর্জাতিক স্তরেও আলোচিত হয়েছে।

\

অতীতের সংঘাত এবং সমাধানের প্রচেষ্টা

২০২০ সালের এপ্রিলে পূর্ব লাদাখের বিভিন্ন এলাকায় চিনা সেনার অনুপ্রবেশ নিয়ে উত্তেজনা শুরু হয়। একই বছরের ১৫ জুন গালওয়ান উপত্যকায় সংঘর্ষে ২০ জন ভারতীয় সেনা শহিদ হন। পাল্টা ভারতীয় সেনার আক্রমণে চিনের বেশ কয়েকজন সেনাও নিহত হয় বলে আন্তর্জাতিক রিপোর্টে উল্লেখ রয়েছে।

এই ঘটনার পর সীমান্তে উত্তেজনা কমাতে কূটনৈতিক এবং সামরিক স্তরে বেশ কয়েক দফা বৈঠক হয়। ২০২১ সালে চুশুল-মলডো পয়েন্টে দুই দেশের কোর কমান্ডারদের মধ্যে বৈঠকে এলএসি বরাবর সেনা সংখ্যা কমানো এবং ডিসএনগেজমেন্ট নিয়ে ঐক্যমত্য হয়। তবে প্যাংগং হ্রদ, ডেপসাং উপত্যকা-সহ বেশ কয়েকটি অঞ্চলে সমস্যা থেকে যায়।

সম্প্রতি লাদাখ সীমান্তে স্থিতাবস্থা ফেরাতে দুই দেশ আবারও উদ্যোগী হয়। ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল এবং চিনা বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই-র মধ্যে বৈঠক হয়। সীমান্ত-বিরোধ মেটাতে একটি ন্যায্য এবং পারস্পরিক গ্রহণযোগ্য সমাধানের বিষয়ে আলোচনা হয়।

চিনের অতীত কৌশল

চিনের অতীত আচরণের দিকে তাকালে দেখা যায়, ১৯৬২ সালে ভারতীয় ভূখণ্ডে আগ্রাসন, ১৯৬৭-তে সিকিমের নাথু লা এবং চো লায় সংঘর্ষ, এবং ২০২০-তে গালওয়ান উপত্যকায় সংঘাতের মতো ঘটনা ঘটিয়েছে তারা। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, চিনের সাম্প্রতিক দাবি সেই একই কৌশলেরই পুনরাবৃত্তি।

ভবিষ্যৎ পরিপ্রেক্ষিত

চিন যখন লাদাখ সীমান্তে স্থিতাবস্থা বজায় রাখার জন্য আলোচনা করছে, তখনই নতুন প্রদেশ ঘোষণার মাধ্যমে বিতর্ক তৈরি করেছে। এই পদক্ষেপ দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের উন্নতিতে অন্তরায় হতে পারে।

ভারতের প্রতিরক্ষা এবং কূটনৈতিক মহল চিনের এই দাবি সম্পর্কে সতর্ক। ভারতের বার্তা স্পষ্ট— দেশীয় সার্বভৌমত্ব এবং সীমান্ত অখণ্ডতার ওপর কোনো ধরনের আঘাত বরদাস্ত করা হবে না।

উপসংহার

চিনের নতুন প্রদেশ দাবি এবং লাদাখের অংশকে অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। এই পরিস্থিতিতে ভারতের কূটনৈতিক ও প্রতিরক্ষা মহলের তৎপরতা আরও বাড়ানোর প্রয়োজন। ভারতের অবস্থান স্পষ্ট— বেআইনি দখলদারির বিরুদ্ধে কড়া প্রতিক্রিয়া জানানো হবে।

উত্তাপ ক্রমে চড়ছে সিডনিতে, দিনের শেষ বলে খোয়াজাকে আউট করে কনস্টাসের দিকে সটান তেড়ে গেলেন জসপ্রীত বুমরাহ

Read more

Local News