Saturday, May 3, 2025

‘লভ জিহাদ’ রুখতে কড়া আইন আনতে চলেছে মহারাষ্ট্র! বিরোধীদের অভিযোগ— ব্যক্তিস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ

Share

লভ জিহাদ!

মহারাষ্ট্র সরকার এবার ‘লভ জিহাদ’ বন্ধ করতে কঠোর আইন আনতে চলেছে। ইতিমধ্যে একটি সাত সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে, যা এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের খসড়া তৈরি করবে। এই কমিটির নেতৃত্বে রয়েছেন মহারাষ্ট্র পুলিশের ডিজি রশ্মি শুক্লা, আর বাকি সদস্যরা বিভিন্ন সরকারি দফতরের প্রতিনিধি। তবে বিরোধীদের আশঙ্কা, এই আইন ব্যক্তিস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করতে পারে এবং ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ানোর হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে।


মহারাষ্ট্র সরকারের পদক্ষেপ

মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডণবীস আগেই জানিয়েছেন, জোরপূর্বক ধর্মান্তরণ ঠেকাতে তাঁর সরকার কঠোর আইন আনতে চায়। বিশেষ করে বিয়ের মাধ্যমে ধর্মান্তরণ রুখতে তাঁরা আইন প্রণয়নের পরিকল্পনা করছেন।

সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে ‘লভ জিহাদ’ শব্দটি ব্যবহার করা হলেও, এর ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি। তবে যেসব রাজ্য ইতিমধ্যেই এই ধরনের আইন প্রণয়ন করেছে, তাদের আইন বিশ্লেষণ করে মহারাষ্ট্র সরকার নিজেদের খসড়া তৈরি করবে।


উত্তরপ্রদেশ, অসমের পর মহারাষ্ট্রও সেই পথে?

এর আগেই উত্তরপ্রদেশ এবং অসমের বিধানসভায় ‘লভ জিহাদ’ রুখতে বিল পাশ হয়েছে।

🔴 যোগী আদিত্যনাথের সরকার যে আইন এনেছে, তাতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ৫ লক্ষ টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে।

🔴 অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা-ও একই পথে হেঁটে ‘লভ জিহাদ’-এর বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির কথা বলেছেন।

🔴 এবার মহারাষ্ট্রও তাদের আইনে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে চাইছে।


বিরোধীদের কটাক্ষ— এটি ব্যক্তিস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ

এই আইন প্রণয়নের উদ্যোগ শুরু হতেই বিরোধী দলগুলি প্রতিবাদে সরব হয়েছে।

এনসিপি (শরদ পওয়ার গোষ্ঠী) নেত্রী সুপ্রিয়া সুলে বলেন—
“বিয়ে করা বা জীবনসঙ্গী বেছে নেওয়া সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত বিষয়। সরকার এই ধরনের ব্যক্তিগত বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করে প্রকৃত সমস্যাগুলোর দিকে নজর দিক।”

কংগ্রেস নেতা হুসেন দালওয়াই দাবি করেন—
“লভ জিহাদ বলে কিছু হয় না। আমাদের দেশ ধর্মনিরপেক্ষ। কিন্তু কিছু রাজনৈতিক দল ইচ্ছাকৃতভাবে এই বিষয়টিকে হাতিয়ার বানিয়ে বিভেদ সৃষ্টি করতে চাইছে।”

সমাজবাদী পার্টিও এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে বলেছে—
“এটি আসলে ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনীতি ছাড়া আর কিছুই নয়।”


বিজেপির পাল্টা দাবি— ‘লভ জিহাদ’ রুখতেই হবে

বিজেপির দাবি, ভারতে লভ জিহাদ দিন দিন বাড়ছে এবং মহারাষ্ট্রেও এর অনেক উদাহরণ রয়েছে।

বিজেপি বিধায়ক মঙ্গল লোধা বলেন—
“আমরা সবাই জানি শ্রদ্ধা ওয়ালকার হত্যাকাণ্ডে কী ঘটেছিল। মহারাষ্ট্রেও এমন ঘটনা ঘটছে, কিন্তু বিরোধীরা এ নিয়ে কোনও ব্যবস্থা নিতে চায় না।”

✔ বিজেপি নেতারা আরও বলছেন—
“এটি কোনও ধর্মীয় বিভেদ সৃষ্টি করার জন্য নয়, বরং জোরপূর্বক ধর্মান্তরণ ও প্রতারণার মাধ্যমে বিয়েকে বন্ধ করতেই এই আইন প্রয়োজন।”


শ্রদ্ধা ওয়ালকার হত্যাকাণ্ডের প্রভাব

২০২২ সালে দিল্লির ছাতরপুরে শ্রদ্ধা ওয়ালকার হত্যাকাণ্ডে দেশজুড়ে চাঞ্চল্য ছড়ায়।

🔴 শ্রদ্ধার লিভ-ইন পার্টনার আফতাব পুনাওয়ালা তাকে খুন করে ৩৫ টুকরো করে জঙ্গলে ফেলে দেয়।

🔴 এই ঘটনাকে বিজেপি দীর্ঘদিন ধরে ‘লভ জিহাদ’-এর উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরেছে এবং এবার সেটিকে হাতিয়ার করেই মহারাষ্ট্রে কড়া আইন আনতে চাইছে।


বিতর্কের মাঝে প্রশ্ন— এই আইন কতটা কার্যকর হবে?

✔ ইতিমধ্যেই বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা এই আইনের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
✔ অনেক বিশেষজ্ঞ বলছেন, এই আইন আসলে মানুষের ব্যক্তিস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করবে এবং আইনের অপব্যবহার হতে পারে।
✔ ধর্মনিরপেক্ষ দেশে বিয়ের সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত হওয়া উচিত, কিন্তু এই আইন সেটিকে নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে।


শেষ কথা

মহারাষ্ট্র সরকারের পরিকল্পিত ‘লভ জিহাদ’ বিরোধী আইন নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে। বিজেপি বলছে, এটি জোরপূর্বক ধর্মান্তরণ রুখতে জরুরি, আর বিরোধীরা বলছে, এটি ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনীতি।

এই আইন শেষ পর্যন্ত বাস্তবে পরিণত হয় কি না, আর হলে কোন পথে তা কার্যকর হয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

একদিনেই ২০ লাখ অনুগামী হারালেন! বিতর্কের কেন্দ্রে ইউটিউবার রণবীর ইলাহাবাদিয়া, কত আয় করেন তিনি?

Read more

Local News