লন্ডন ছেড়ে নিউ ইয়র্কে সোনা!
আটলান্টিক পেরিয়ে লন্ডন থেকে বিপুল পরিমাণ সোনা চলে যাচ্ছে নিউ ইয়র্কে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ব্যাঙ্ক অফ ইংল্যান্ডের সোনার মজুত উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে, আর এর প্রধান কারণ বলে মনে করা হচ্ছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্ভাব্য শুল্কনীতি। আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ীরা আশঙ্কা করছেন, ট্রাম্প প্রশাসন আমদানি করা ধাতুর উপর উচ্চ শুল্ক আরোপ করলে বিশ্বব্যাপী সোনার বাজারে বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে।
ব্যাঙ্ক অফ ইংল্যান্ড থেকে কেন সরছে সোনা?
লন্ডনের ব্যাঙ্ক অফ ইংল্যান্ড দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং বেসরকারি সংস্থার সোনা সংরক্ষণের অন্যতম প্রধান জায়গা। এখানে ২১ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি মূল্যের সোনা মজুত রয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ব্যাঙ্কের ভল্ট থেকে দ্রুত সোনা সরিয়ে নিউ ইয়র্কে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
ফরচুন ম্যাগাজিনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছরের নভেম্বর থেকে ব্যাঙ্ক অফ ইংল্যান্ডের সোনার মজুত ক্রমাগত কমছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রাম্পের নতুন শুল্কনীতির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে সোনার দাম বাড়তে পারে, যা ব্যবসায়ীদের নিউ ইয়র্কে সোনা সংরক্ষণে উৎসাহিত করছে।
ট্রাম্পের শুল্কনীতি ও তার প্রভাব
চলতি বছরের জানুয়ারিতে দ্বিতীয়বারের জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। দায়িত্ব নিয়েই কানাডা ও মেক্সিকোর ওপর ২৫% শুল্ক এবং চীনের ওপর ১০% শুল্ক বসিয়েছেন তিনি। সেই সঙ্গে ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের আমদানির ওপর ২৫% শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন।
বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, ট্রাম্প যদি সোনার ওপরও অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করেন, তাহলে নিউ ইয়র্কে সোনার দাম আরও বেড়ে যাবে। ফলে বিনিয়োগকারীরা আগেভাগেই লন্ডনের ভল্ট থেকে সোনা সরিয়ে নিউ ইয়র্কে মজুত করছেন, যাতে ভবিষ্যতে বাড়তি লাভ করা যায়।
নিউ ইয়র্কে সোনার চাহিদা বাড়ছে
ব্যাঙ্ক অফ ইংল্যান্ডের ডেপুটি গভর্নর ডেভ র্যামসডেন জানিয়েছেন, নিউ ইয়র্কের ফিউচার মার্কেটে সোনার দাম লন্ডনের তুলনায় বেশি হওয়ায় অনেক ব্যবসায়ী সোনা সরিয়ে আনছেন।
বর্তমানে নিউ ইয়র্কে সোনার দাম প্রতি ট্রয় আউন্স (প্রায় ৩১ গ্রাম) ২,৯৩৫ ডলার, যা রেকর্ড ছুঁতে চলেছে। অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, খুব শীঘ্রই এটি ৩,০০০ ডলার অতিক্রম করতে পারে। এই মূল্যবৃদ্ধির প্রত্যাশায় অনেক সংস্থা ও বিনিয়োগকারী লন্ডন থেকে সোনা তুলে নিউ ইয়র্কে পাঠাচ্ছে।
ব্যাঙ্কের ভল্টে সোনার সরবরাহ সংকট
সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্যাঙ্ক অফ ইংল্যান্ড থেকে সোনা তোলার জন্য অপেক্ষার সময় আগের চেয়ে অনেক বেড়ে গেছে। যেখানে আগে কয়েকদিনের মধ্যেই সোনা তোলা যেত, এখন তা চার সপ্তাহের বেশি সময় লাগছে। এমনকি ভবিষ্যতে এটি আট সপ্তাহেও পৌঁছাতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, গত কয়েক মাসে ব্যাঙ্ক অফ ইংল্যান্ডের ভল্ট থেকে প্রায় ৮,০০০ সোনার বাট নিউ ইয়র্কে পাঠানো হয়েছে, যা মোট মজুতের ২%। তবে এই হিসাবের বাইরেও আরও বেশ কিছু সোনা ব্যক্তিগত ভল্টে স্থানান্তরিত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
নিউ ইয়র্কের ব্যাঙ্ক ও বিনিয়োগকারীদের তৎপরতা
জেপি মরগ্যান এবং এইচএসবিসির মতো বড় ব্যাংকগুলো এখন বড় পরিমাণ সোনা নিউ ইয়র্কে নিয়ে আসছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, শুধুমাত্র জেপি মরগ্যান ৪০০ কোটি ডলারের সোনা আমদানির পরিকল্পনা করছে।
ট্রাম্পের জয়লাভের পর থেকে নিউ ইয়র্কের কমেক্স কমোডিটি এক্সচেঞ্জ -এ প্রায় ৩৯৩ মেট্রিক টন সোনা ফিরিয়ে আনা হয়েছে, যা সোনার বাজারে এক বিশাল পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
বিশ্ববাজারে নতুন সংকটের আশঙ্কা
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ট্রাম্পের শুল্কনীতি যদি বাস্তবায়িত হয়, তাহলে বিশ্বব্যাপী সোনার বাজারে নতুন সংকট তৈরি হতে পারে। লন্ডনের ভল্ট খালি হতে থাকলে, সোনার দামে আরও অস্থিরতা দেখা দেবে এবং বৈশ্বিক অর্থনীতিতে এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব পড়বে।
নতুন শুল্কনীতি বাস্তবায়িত হলে লন্ডন কি তার ঐতিহ্যবাহী সোনার ভাণ্ডারের অবস্থান হারাবে? নাকি বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগকারীরা নতুন কৌশল গ্রহণ করবেন? এর উত্তর সময়ই দেবে। তবে এক জিনিস নিশ্চিত—ট্রাম্পের নীতির ফলে বিশ্বব্যাপী সোনার বাজার এখন এক নতুন মোড় নিতে চলেছে।
মাটির নীচ থেকে গর্জনের শব্দ! ভূমিকম্পের নতুন অভিজ্ঞতায় আতঙ্কিত দিল্লিবাসী— কেন হল এমন?