মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনমোহিনী প্রকল্প এবং সিপিএমের অক্ষমতা
পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চালু করা ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’-এর মতো প্রকল্পগুলি কার্যত তৃণমূলের ভোটব্যাংককে অটুট রেখেছে। মহিলাদের জন্য মাসিক আর্থিক সহায়তার এই উদ্যোগ শুধু বাংলায় নয়, অন্যান্য রাজ্যেও একটি মডেল হিসেবে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। মহারাষ্ট্র, ঝাড়খণ্ড, কর্নাটক এবং তেলঙ্গানার মতো রাজ্যে একই ধরনের প্রকল্পের সুফল পেয়েছে সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলগুলি।
এদিকে, সিপিএমের পক্ষে এই প্রকল্পের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা ক্রমশ কঠিন হয়ে উঠেছে। সিপিএমের এরিয়া স্তরের সম্মেলনে প্রায় সর্বত্র ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’-এর প্রভাব নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। এই প্রকল্পগুলি গ্রামীণ ও নিম্নবিত্ত মানুষের মধ্যে তৃণমূলের প্রতি এক অনন্য সমর্থন তৈরি করেছে। এমনকি সিপিএমের নিজেদের কর্মীরাও স্বীকার করছেন, দলের সমর্থন যেভাবে সরে যাচ্ছে, তা পুনরুদ্ধার করা অত্যন্ত কঠিন।
সিপিএমের সাংগঠনিক দুর্বলতা এবং জনমানসের ধোঁয়াশা
সিপিএমের সাংগঠনিক দুর্বলতা তাদের আরও বিপাকে ফেলছে। কখনও কংগ্রেস কিংবা আইএসএফের সঙ্গে জোট গঠন, আবার কখনও দূরত্ব বজায় রাখার মতো সিদ্ধান্তে দলটি সাধারণ মানুষের মধ্যে ধোঁয়াশার সৃষ্টি করেছে। অন্যদিকে, মমতার জনকল্যাণমূলক প্রকল্পগুলি গরিব মানুষের জন্য সুনির্দিষ্ট সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহজেই তাদের সমর্থন আদায় করছে।
বিভিন্ন এলাকার সম্মেলনের প্রতিবেদনে ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’, ‘কন্যাশ্রী’, ‘রূপশ্রী’-র মতো প্রকল্পগুলির সরাসরি উল্লেখ থাকছে। এসব প্রকল্পের কারণে ভোটের মাঠে সিপিএমের অবস্থান দুর্বল হচ্ছে। এমনকি সম্মেলনের রিপোর্টে এই ধরনের স্বীকারোক্তিও উঠে এসেছে যে, সিপিএমের মিছিলে উপস্থিত মহিলারা ভোটের সময় তৃণমূলকেই ভোট দিচ্ছেন।
মমতার মডেলের সফলতা এবং সিপিএমের অভ্যন্তরীণ মতবিরোধ
সিপিএমের প্রথম সারির নেতারা মমতার প্রকল্পগুলির সফলতার কথা স্বীকার করলেও, দলের একাংশ তা নিয়ে নাক সিঁটকোন। কেউ কেউ এই প্রকল্পগুলিকে ‘ভিক্ষা’ বলেও সমালোচনা করেন, যা দলীয় ভাবমূর্তিকে আরও ক্ষতিগ্রস্ত করছে। তবে সিপিএমের শীর্ষ নেতৃত্ব স্পষ্ট করেছে, এই ধরনের প্রকল্পকে ‘ভিক্ষা’ বলে অভিহিত করা আসলে সাধারণ মানুষকে অপমান করার শামিল।
সিপিএমের কিছু নেতা মনে করছেন, মমতার প্রকল্পগুলি শুধু ভোটের জন্য চালু হলেও সেগুলি মানুষের মৌলিক চাহিদা মেটাতে সাহায্য করছে। এদিকে, পশ্চিমবঙ্গের বাইরেও ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’-এর মতো প্রকল্পগুলি বিজেপি এবং অন্যান্য আঞ্চলিক দলগুলির জন্য ভোট বাড়ানোর একটি কার্যকর উপায় হয়ে উঠেছে।
ভোটের ময়দানে মমতার ‘অচলা’ লক্ষ্মী
মমতার জনকল্যাণমূলক প্রকল্পগুলি বাংলার গ্রামীণ এবং নিম্নবিত্ত মানুষের জীবনে একটি বিশেষ প্রভাব ফেলেছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে তৃণমূল কংগ্রেসের ভোটব্যাংককে সংহত করা হয়েছে। কেরলে সিপিএমের নেতৃত্বাধীন সরকারও একই ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা ভাবছে, যা স্পষ্টতই মমতার মডেলের সফলতা প্রমাণ করে।
সিপিএমের এক তরুণ নেতা মজার ছলে বলেন, “দিদির মডেল যেভাবে সর্বত্র অনুসৃত হচ্ছে, তাতে কেরলের সিপিএম সরকারকেও এই পথ নিতে হতে পারে!”
অন্যদিকে, মমতার এই প্রকল্পের প্রতি বিজেপিরও দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টেছে। এক সময়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই ধরনের উদ্যোগকে ‘রেউড়ি পলিটিক্স’ বলে সমালোচনা করলেও, ভোটের জন্য বিজেপিও এখন এই ধরনের প্রকল্পে আগ্রহ দেখাচ্ছে।
উপসংহার
‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’-এর মতো প্রকল্পগুলি শুধু বাংলার রাজনীতিকেই নয়, গোটা দেশের রাজনীতির গতিপথও পরিবর্তন করছে। মমতার জনকল্যাণমূলক মডেলের প্রতি মানুষের আস্থা এবং সিপিএমের সাংগঠনিক দুর্বলতা দলটির ভোটের ময়দানে অবস্থান আরও কঠিন করে তুলছে। তৃণমূলের সমর্থনে ‘লক্ষ্মী’ যেন অচল হয়েই থাকছে।