লক্ষ্মীর ভান্ডারকে ‘মডেল’
বাংলায় শিক্ষার্থীদের জন্য ট্যাব কেনার জন্য অর্থ বিতরণের প্রক্রিয়া বর্তমানে নানা বিতর্ক ও অভিযোগের সম্মুখীন। বিশেষ করে, রাজ্যের শিক্ষা দফতরের বিরুদ্ধে ট্যাব বিতরণের ক্ষেত্রে বেনিয়মের অভিযোগ আসছে, যা তাদের জন্য একটি গুরুতর সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য রাজ্য সরকারের তরফ থেকে এক নতুন নির্দেশনা এসেছে, যেখানে শিক্ষা দফতরের শীর্ষ কর্মকর্তাদের ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ প্রকল্পকে একটি মডেল হিসেবে অনুসরণ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
লক্ষ্মীর ভান্ডার: সফলতা এবং মডেল
‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ প্রকল্পের সফলতা তৃণমূল কংগ্রেসের জন্য একটি নির্বাচনী জয় ছিল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে এই প্রকল্পটি চালু করা হয়, যার মাধ্যমে মহিলাদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়। তিন বছর ধরে প্রায় ২ কোটিরও বেশি মহিলাকে এই প্রকল্পের সুবিধা দেওয়া হয়েছে এবং এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের বেনিয়মের অভিযোগ পাওয়া যায়নি। প্রকল্পের পদ্ধতি ও স্বচ্ছতা দেখে নবান্নের শীর্ষ কর্মকর্তারা শিক্ষা দফতরকে তাদের ট্যাব বিতরণ প্রক্রিয়ায় লক্ষ্মীর ভান্ডারের মডেল অনুসরণ করতে বলেছেন।
নবান্নের বৈঠক এবং পরামর্শ
সোমবার নবান্নে মুখ্যসচিব মনোজ পন্থের নেতৃত্বে একটি বিশেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে শিক্ষা দফতরের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যাতে আগামী বছর থেকে ট্যাব বিতরণের ক্ষেত্রে কোনও ধরনের বেনিয়মের ঘটনা না ঘটে। কারণ, রাজ্য সরকারের ভাবমূর্তি এই ধরনের প্রকল্পের সুষ্ঠু বাস্তবায়নের উপর নির্ভর করে। সুতরাং, স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে আধিকারিকদের আরও সতর্ক থাকতে হবে এবং লক্ষ্মীর ভান্ডারের মতো একটি প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে, যাতে কোনো ভুল বা অযাচিত ঘটনা ঘটতে না পারে।
ট্যাব বিতরণের প্রক্রিয়া এবং সমস্যা
বর্তমানে রাজ্য শিক্ষা দফতর স্কুলগুলিকে ‘বাংলার শিক্ষা’ পোর্টালে ছাত্রদের নাম নিবন্ধন করতে নির্দেশ দেয়। এর মধ্যে, একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রদের জন্য আলাদা একটি পোর্টালও রয়েছে। কিন্তু, সঠিক তথ্য এবং আধার কার্ডের অপ্রতুলতার কারণে এই প্রক্রিয়া সঠিকভাবে সম্পন্ন হচ্ছে না। বিশেষত, যেহেতু ছাত্রদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে আধার সংযুক্তির ব্যবস্থা নেই, তাই অনেক সময় ভুল অ্যাকাউন্টে টাকা চলে যাচ্ছে, যা একটি বড় সমস্যা তৈরি করছে।
লক্ষ্মীর ভান্ডারের প্রক্রিয়ার তুলনা
লক্ষ্মীর ভান্ডারের মাধ্যমে যে আর্থিক সাহায্য দেওয়া হয়, সেখানে প্রতিটি উপকারভোগীর নাম ও ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য অত্যন্ত সুসংগঠিত ও সঠিকভাবে যাচাই করা হয়। সেই কারণেই এই প্রকল্পে কোনো ধরনের ভুল লেনদেন হয়নি। এই সাফল্যের নজির দেখিয়ে, শিক্ষা দফতরকে একইভাবে স্বচ্ছতার সাথে ট্যাব বিতরণের প্রক্রিয়া তৈরি করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বিশেষত, যেখানে আধার সংযুক্তির মাধ্যমে অর্থ প্রেরণ করা হবে, সেক্ষেত্রে আরও সতর্ক থাকতে হবে।
উপসংহার
এখন থেকে, রাজ্যের শিক্ষা দফতরকে ট্যাব বিতরণে লক্ষ্মীর ভান্ডার মডেল অনুসরণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যাতে ছাত্রদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ প্রেরণের সময় কোনো ধরনের বেনিয়মের ঘটনা না ঘটে। রাজ্য সরকার আশা করছে, এই নতুন পদক্ষেপের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ট্যাব প্রদান প্রক্রিয়া আরও সুসংহত ও স্বচ্ছ হবে, এবং শিক্ষা দফতরের বিরুদ্ধে অভিযোগের সংখ্যা কমবে।