রোহিত শর্মার শিক্ষা!
ভারতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক রোহিত শর্মা অবশেষে তাঁর স্বপ্ন পূরণ করেছেন। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়ের মাধ্যমে ভারতকে দ্বিতীয়বার আইসিসি শিরোপা এনে দিয়েছেন তিনি। তবে এই সাফল্য একদিনে আসেনি। এর জন্য কঠোর পরিশ্রম ও দীর্ঘ প্রস্তুতি দরকার ছিল।
২০১৯ সালের বিশ্বকাপের হৃদয়বিদারক পরাজয় থেকে শিক্ষা নিয়েই আজকের সাফল্যের পথ তৈরি করেছেন রোহিত। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, কীভাবে সেই পরাজয়ের শিক্ষা তাঁকে বদলে দিয়েছে এবং দলকে চ্যাম্পিয়ন করতে সাহায্য করেছে।
২০১৯ বিশ্বকাপের শিক্ষা কী?
২০১৯ সালে এক দিনের বিশ্বকাপে পাঁচটি শতরান করেছিলেন রোহিত শর্মা—যা বিশ্বকাপ ইতিহাসে কোনো ব্যাটারের সর্বোচ্চ শতরানের রেকর্ড। কিন্তু এত দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের পরেও ভারত সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডের কাছে হেরে যায়। সেই হার রোহিতকে ভীষণভাবে আঘাত করেছিল।
তিনি বলেন,
“খুব খারাপ লেগেছিল। এত ভালো খেলার পরেও ট্রফি জিততে না পারাটা হতাশার ছিল। বারবার এমন হচ্ছে—২০১৫, ২০১৯—প্রতিবার একই কাহিনি! বুঝতে পারলাম, ভালো খেলা যথেষ্ট নয়, জিততে হলে দলকে চ্যাম্পিয়ন মানসিকতা আনতে হবে।”
তখনই তিনি সিদ্ধান্ত নেন, ব্যক্তিগত মাইলফলকের চেয়ে দলের সাফল্যই আসল।
“২০১৯ বিশ্বকাপে পাঁচটা শতরান করেছিলাম। কিন্তু কী হল? শতরানগুলো রেকর্ড বইয়ে আছে, কিন্তু ট্রফি নেই! তাই বুঝে গিয়েছিলাম, ব্যক্তিগত সাফল্যের চেয়ে দলের জয় অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।”
অধিনায়ক হিসেবে দলের মানসিকতা বদলানো
২০১৯-এর সেই হতাশার পর থেকেই রোহিত দলে এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আসেন। তিনি তাঁর সতীর্থদের বুঝিয়ে দেন যে, মাইলফলক আসবে-যাবে, কিন্তু ট্রফিই আসল।
তিনি বলেন,
“আমি দলকে বাচ্চাদের মতো বুঝিয়েছি। একাধিকবার কথা বলেছি, বোঝানোর চেষ্টা করেছি। ওরা আমার কথা মেনে নিয়েছে। কারণ আমি চাইতাম, প্রত্যেক খেলোয়াড় দলের জন্য খেলুক, নিজের ব্যক্তিগত রেকর্ডের জন্য নয়।”
এবং সেটাই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মূল সাফল্যের চাবিকাঠি হয়ে ওঠে।
রোহিতের ব্যাটিং স্টাইলের পরিবর্তন
রোহিতের খেলার ধরনও বদলেছে সময়ের সঙ্গে। এক সময় তিনি ইনিংসের শুরুতে ধীরে খেলতেন, তারপর সেট হয়ে গেলে বড় ইনিংস খেলতেন। কিন্তু এখন তিনি শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করেন।
তিনি বলেন,
“আমি অধিনায়ক, তাই আমাকেই আগে বদলাতে হতো। দলকে দেখাতে হতো, আমরা ভয় পাই না, আমরা ইতিবাচক থাকি।”
এজন্য শতরানের সংখ্যা কমেছে, কিন্তু তাঁর ঝোড়ো ইনিংসগুলিই দলকে জিততে সাহায্য করেছে।
বুমরাহর অনুপস্থিতি ও দলের কৌশল
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সময় ভারত জানত যে জসপ্রীত বুমরাহ খেলতে পারবেন না। তাই তাঁরা আগে থেকেই বিকল্প পরিকল্পনা তৈরি করেছিল।
রোহিত বলেন,
“আমরা জানতাম, বুমরাহ সুস্থ হতে সময় লাগবে। তাই আমরা পরিকল্পনা করেছিলাম কীভাবে তাঁর জায়গা পূরণ করা যায়। তখনই মনে হয়েছিল, শামির ১০০% ফিট থাকা খুব জরুরি। পাশাপাশি অর্শদীপ ও হর্ষিতও প্রস্তুত ছিল।”
এবং এই পরিকল্পনার ফলেই ভারত ট্রফি জয়ের পথে এগিয়ে যায়।
মাঠে আবেগপ্রবণ রোহিত
আমরা প্রায়ই দেখি, রোহিত মাঠে সতীর্থদের ওপর চিৎকার করছেন, মাঝেমধ্যে গালাগালও দিয়ে ফেলেন! তবে তিনি ব্যাখ্যা করলেন,
“আমি যা বলি, দলের ভালোর জন্যই বলি। কোনো খেলোয়াড়কে ছোট করার জন্য নয়। আমার দলের সবাই সেটা বোঝে। ওরা জানে, আমি যা বলি, তা ওদের জেতার জন্য বলি।”
দলের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
রোহিতের লক্ষ্য শুধু ট্রফি জেতা নয়, তিনি ভারতকে একটি শক্তিশালী দল হিসেবে গড়ে তুলতে চান। তিনি বলেন,
“আমি এমন একটা দল তৈরি করতে চাই, যারা পাঁচ উইকেট হারালেও হাল ছাড়বে না। যারা লড়াই চালিয়ে যাবে, কখনও ম্যাচ ছেড়ে দেবে না।”
এখন প্রশ্ন একটাই—এই সাফল্যের ধারা ধরে রাখতে পারবেন কি না রোহিত ও তাঁর দল! সময়ই এর উত্তর দেবে। তবে একটি কথা নিশ্চিত, ২০১৯ বিশ্বকাপের সেই শিক্ষা ভারতীয় ক্রিকেটকে আরও শক্তিশালী করে তুলেছে!
ভারতের বদলার জয়: ২৫ বছর পর নিউ জিল্যান্ডকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি রোহিতদের হাতে

