রোহিত বনাম সচিন
ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসে সচিন তেন্ডুলকর এবং রোহিত শর্মার নাম জ্বলজ্বল করে। দুজনেই মুম্বাইয়ের ভূমিপুত্র, এবং দুজনের ব্যাটেই ভারতীয় ক্রিকেট পেয়েছে অসংখ্য সাফল্যের মুহূর্ত। ওপেনার হিসেবে দুজনেরই রয়েছে অবিশ্বাস্য পারফরম্যান্স। তবে ২৬৫টি ওয়ান ডে ম্যাচের পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে এই দুই মহারথীর তুলনা করতে গেলে কি রোহিত ‘মাস্টার ব্লাস্টার’-এর সমকক্ষ? কী বলছে সংখ্যা?
সচিন বনাম রোহিত: কেরিয়ারের শুরু থেকে ওপেনার হয়ে ওঠা
১৯৮৯ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ওয়ান ডে অভিষেক করেছিলেন সচিন তেন্ডুলকর। অন্যদিকে, ২০০৭ সালে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে আন্তর্জাতিক ওয়ান ডে ম্যাচে রোহিত শর্মার অভিষেক হয়। কেরিয়ারের শুরুতে দুজনেই মিডল অর্ডারে ব্যাট করতেন। পরবর্তী সময়ে ওপেনিংয়ে স্থায়ী হন এবং দলের অপরিহার্য সদস্য হয়ে ওঠেন।
সচিন ২৬৫তম ম্যাচ খেলেছিলেন ২০০১ সালে, শক্তিশালী অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। তখন তাঁর মোট রান ছিল ৯,৯৬৬। ওই ম্যাচে ৩২ রান করে আউট হলেও, পরবর্তী ম্যাচে তিনি ১০ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। এ সময় তাঁর গড় ছিল ৪২.২৩, স্ট্রাইক রেট ৮৬.২৬।
অন্যদিকে, রোহিত ২৬৫ ম্যাচে ইতিমধ্যেই ১০,৮৬৬ রান করে ফেলেছেন। ২০২৩ সালের এশিয়া কাপে ২৪৮তম ম্যাচে তিনি ১০ হাজার রানের ক্লাবে প্রবেশ করেন। তাঁর গড় ৪৯.১৭ এবং স্ট্রাইক রেট ৯২.৪৪।
শতরান ও দ্বিশতরানের রেকর্ড
সচিন তেন্ডুলকর ওয়ান ডে-তে ৪৯টি শতরান করেছেন, যার মধ্যে ২৬৫ ম্যাচে তাঁর শতরানের সংখ্যা ছিল ২৭। তবে দ্বিশতরানের রেকর্ড তৈরি করেছিলেন তিনিই। ২০১০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ২০০ রানে অপরাজিত থেকে ইতিহাস সৃষ্টি করেন।
রোহিত শর্মার ক্ষেত্রে ২৬৫ ম্যাচে শতরানের সংখ্যা ৩১। আরও বিশেষ দিক হলো, রোহিত ওয়ান ডে-তে তিনটি দ্বিশতরানের মালিক। তাঁর সর্বোচ্চ ইনিংস ২৬৪ রানের, যা এখনও পর্যন্ত ওয়ান ডে ক্রিকেটে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত স্কোর।
বিদেশের মাটিতে পারফরম্যান্স
বিদেশের মাটিতে বড় রান করা সব সময়ই কঠিন এবং গুরুত্বপূর্ণ। এই ক্ষেত্রে রোহিত ও সচিন প্রায় সমান। সচিন ২৬৫ ম্যাচে বিদেশের মাটিতে ১৬৭টি ইনিংসে ৬,৪৩০ রান করেছিলেন। তাঁর গড় ছিল ৩৯.৯৪ এবং স্ট্রাইক রেট ৮৫.৯৪।
রোহিত একই সংখ্যক ম্যাচে বিদেশের মাটিতে ১৬৭ ইনিংসে ৬,১২১ রান করেছেন। তাঁর গড় ৪৪.০৪ এবং স্ট্রাইক রেট ৮৫.৪৮। যদিও এই পরিসংখ্যানে সচিন এগিয়ে, তবে রোহিতের গড় কিছুটা ভালো।
বিপরীত মেজাজে থাকা দুই অধিনায়ক
সচিনের সময়ে ভারত ২০১১ সালের আইসিসি বিশ্বকাপ জয় করেছিল মহেন্দ্র সিং ধোনির নেতৃত্বে। সেই দলে ছিলেন সচিন। অন্যদিকে, রোহিত ২০২৩ সালে ভারতের অধিনায়ক হিসেবে ওয়ান ডে বিশ্বকাপ ফাইনালে উঠলেও অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে যান। তবে টি-২০ বিশ্বকাপে ২০২৪ সালে রোহিতের অধিনায়কত্বে ভারত ট্রফি ঘরে তোলে।
চলতি সময়ে রোহিতের চ্যালেঞ্জ
২০২৫ সালে আসন্ন আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে রোহিত আবার ভারতের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। তবে সাম্প্রতিক সময়ে তাঁর ব্যাটিং ফর্ম নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি তাঁর জন্য অগ্নিপরীক্ষা হতে পারে। এই টুর্নামেন্টেই রোহিত পুরনো মেজাজে ফিরতে পারবেন কি না, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
শেষ কথা: তুলনার শেষ নেই
সচিন তেন্ডুলকরকে বলা হয় ক্রিকেটের দেবতা। তাঁর রেকর্ড ভাঙা সহজ নয়। কিন্তু রোহিত শর্মার অসাধারণ ইনিংস, তাঁর ধারাবাহিকতা এবং অধিনায়কত্বের দক্ষতা তাঁকে আলাদা মর্যাদায় নিয়ে গিয়েছে। দুই খেলোয়াড়ই ভারতীয় ক্রিকেটের স্তম্ভ এবং ভক্তদের হৃদয়ে চিরস্থায়ী।
ঠাণের সেই হাসপাতালেই জন্মদিন পালন কাম্বলির, সঙ্গী চিকিৎসক, নার্সেরা