পাবজি নিয়ে মৃত্যু তিন কিশোরের
বিহারের পশ্চিম চম্পারন জেলার এক ঘটনায় মোবাইল গেম খেলতে গিয়ে ট্রেনের নিচে কাটা পড়ে তিন কিশোরের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। কানে গোঁজা ছিল হেডফোন, তাই ট্রেনের শব্দ কেউই শুনতে পায়নি। অজান্তেই জীবনের সঙ্গে শেষ খেলা খেলে ফেলল এই তিন তরুণ।
পাবজি কিশোরদের পরিচয় ও ঘটনার পটভূমি
মৃত তিন কিশোরের নাম ফুরকান আলম, সমীর আলম এবং হবিবুল্লা আনসারি। তারা রেললাইনের ধারের একটি বস্তি এলাকার বাসিন্দা। বৃহস্পতিবার সকালে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে। পরিবার সূত্রে জানা যায়, তারা রেললাইনের উপর বসে পাবজি খেলায় ব্যস্ত ছিল। একেবারে গেমে বুঁদ হয়ে থাকার ফলে বাইরের জগতের কোনও শব্দ তাদের কানে পৌঁছায়নি।
দুর্ঘটনার বিবরণ
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, তিন কিশোর রেললাইনের মাঝ বরাবর বসে ছিল। দ্রুত গতিতে ছুটে আসা ট্রেনের শব্দ তারা শুনতে পায়নি। ট্রেন একেবারে কাছে পৌঁছানোর পরেও পরিস্থিতি বুঝে ওঠার সময় পায়নি তারা। ফলে মুহূর্তের মধ্যে দুর্ঘটনা ঘটে। ট্রেনের চাকায় কাটা পড়ে তিন জনেরই মৃত্যু হয়।
প্রতিক্রিয়া ও তদন্ত
দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ছুটে যান ওই কিশোরদের পরিবারের সদস্যরা। তারা মর্মাহত অবস্থায় দেহ উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে যান। ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন রেলপুলিশ। এসডিপিও বিবেক দীপ জানিয়েছেন, ‘‘মৃতদের দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হবে। পরিবারের সদস্যদের থেকে বয়ান নেওয়া হচ্ছে। কী ভাবে এমন দুর্ঘটনা ঘটল, তা খতিয়ে দেখা হবে।’’
প্রযুক্তির প্রতি অতিরিক্ত আসক্তি: বিপদের ডাকে
এই ঘটনা প্রযুক্তির প্রতি অতিরিক্ত নির্ভরতা ও মোবাইল গেমের আসক্তির একটি ভয়াবহ দৃষ্টান্ত। পাবজি-সহ অন্যান্য গেমে তরুণ প্রজন্মের অন্ধ আসক্তি তাদের বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিচ্ছে। দুর্ঘটনার সময় তিন কিশোরের কানে হেডফোন গোঁজা ছিল। তারা নিজেদের গেমের জগতে এতটাই ডুবে ছিল যে, ট্রেনের মতো বিপদের কোনও ইঙ্গিতই তাদের কানে পৌঁছায়নি।
পরিবারের শোক ও সামাজিক বার্তা
এই মর্মান্তিক ঘটনা ওই পরিবারগুলোর জন্য গভীর শোকের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাশাপাশি এটি সমাজের প্রতি একটি সতর্কবার্তা। প্রযুক্তি ব্যবহারের সময় সুরক্ষার বিষয়টি মাথায় রাখা অত্যন্ত জরুরি। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের ক্ষেত্রে এই ধরনের গেমের প্রতি আসক্তি থেকে তাদের সরিয়ে বাস্তব জগতের সঙ্গে যুক্ত করা প্রয়োজন।
রেল পুলিশের বক্তব্য
রেলপুলিশ এই ঘটনার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানের জন্য তদন্ত চালাচ্ছে। এই ধরনের ঘটনা রোধ করতে রেললাইনের ধারের এলাকাগুলিতে আরও সচেতনতা প্রচার চালানোর প্রয়োজন বলে মনে করা হচ্ছে। পাশাপাশি, পরিবার ও সমাজকেও তরুণ প্রজন্মের প্রযুক্তি ব্যবহারের উপর নজরদারি বাড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
উপসংহার
এই দুর্ঘটনা শুধু তিনটি প্রাণের অপচয় নয়, বরং সমাজের প্রতি একটি বড় শিক্ষা। প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার এবং সুরক্ষার প্রতি সচেতনতা ছাড়া এমন ঘটনা এড়ানো সম্ভব নয়। তরুণ প্রজন্মের কাছে বাস্তব জগতের গুরুত্ব বোঝাতে অভিভাবক ও সমাজের সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। অন্যথায়, মোবাইল গেমের প্রতি এই অন্ধ আসক্তি আরও অনেক মূল্যবান জীবন কেড়ে নিতে পারে।
মালদহের তৃণমূল নেতা দুলাল সরকারের খুনে গ্রেফতার আরও পাঁচ জন, হাসপাতালে থেকে দেহ পৌঁছল বাড়িতে