রেফার রোগে চূড়ান্ত হয়রানি
কিছু পরিস্থিতি সত্যিই অদ্ভুত এবং হৃদয়বিদারক হয়ে ওঠে, যখন মানুষ জীবন-মরণের সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে থাকে এবং তার পাশে থাকার মতো কোনও শক্ত ভিত্তি বা সহায়তা থাকে না। সম্প্রতি বর্ধমান থেকে কলকাতায় চিকিৎসা করাতে আসা এক দম্পতির জন্য এমনই এক বিপর্যয়কর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, যা সত্যিই ভাবতে বাধ্য করে। উপেনবাবু এবং তার স্ত্রী শিবানী দেবী, যিনি ৬৫ বছর বয়সী, সঠিক চিকিৎসার জন্য বর্ধমান থেকে কলকাতা আসছিলেন। কিন্তু পথেই একের পর এক বাঁধা আর দেরি হয়ে গেল তাদের দুর্ভোগের।
শিবানী দেবী কিডনি ও হার্টের অসুখে ভুগছেন, এবং তার শারীরিক অবস্থা দিন দিন খারাপ হয়ে যাচ্ছিল। বিশেষ করে হাত-পা ফুলে যাওয়ার সাথে সাথে বারবার বমি হচ্ছিল। পরিস্থিতি এতটাই জটিল ছিল যে, উপেনবাবু নিজের স্ত্রীকে চিকিৎসার জন্য বর্ধমান থেকে টোটোয় চাপিয়ে কলকাতায় নিয়ে আসেন। তাদের উদ্দেশ্য ছিল কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, যেখানে শিবানীর চিকিৎসার জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু কলকাতায় পৌঁছানোর পর যে পরিস্থিতি তাদের সামলাতে হয়েছিল, তা একেবারে অবিশ্বাস্য।
গতকাল রাতে, ১০টা নাগাদ, উপেনবাবু এবং তার স্ত্রী কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পৌঁছান। কিন্তু সেখানে গিয়ে জানা যায়, ওই বিভাগের ডাক্তার নেই। এরপর তাদের পাঠানো হয় এসএসকেএম হাসপাতালে, সেখানে শিবানীকে কিছুটা প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। তবে সেখানেও পরিস্থিতি উন্নত হয়নি। রাত ১১টার দিকে এসএসকেএম হাসপাতাল থেকে তাদের বলা হয়, আজ সকালে কাডিওলজি বিভাগের ওপিডিতে আসতে। এমন অবস্থা, যেখানে মানুষ জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে, তাকে বারবার এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে পাঠানো কতটা যুক্তিযুক্ত?
প্রশ্ন উঠছে, রাজ্যে সেন্ট্রাল রেফারেল সিস্টেম চালু থাকার পরেও কেন শিবানীকে এভাবে এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে পাঠানো হলো? কেন তাদের দুর্ভোগ বাড়ানোর জন্য তাদের অপ্রীতিকর পরিস্থিতিতে ফেলে দেওয়া হলো? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।
এমনকি, পরের দিন সকালে মেডিসিন বিভাগের সাত তলায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানে আরো অপেক্ষা করতে বলা হয়। এরপর, শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে পাঠানো হতে পারে বলে জানানো হয়। অথচ সেন্ট্রাল রেফারেল সিস্টেমের কথা বলা হলেও, সেই সিস্টেমের সুবিধা তারা পাচ্ছেন না। একের পর এক চিকিৎসা কেন্দ্রে পাঠানো হলেও কোনও স্থায়ী সমাধান হচ্ছে না।
এটি আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থার এক ভয়ানক অভ্যন্তরীণ সমস্যা এবং সেই সঙ্গে মানুষের যন্ত্রণার আরেকটি উদাহরণ, যেখানে রোগী বা তার পরিবার কোনো সাহায্য পাচ্ছে না। একজন অসুস্থ ব্যক্তি যখন সঠিক চিকিৎসা না পেয়ে ভুগছে, তখন তার পাশে থাকার জন্য প্রতিটি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এগিয়ে আসা উচিত। কিন্তু এই ধরনের অবহেলা সত্যিই উদ্বেগজনক।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এই ধরনের চিকিৎসা ব্যবস্থার মধ্যে মানুষের জীবন কি কোনো মূল্য রাখে? অথবা, চিকিৎসা ব্যবস্থা সঠিকভাবে কাজ করার ক্ষেত্রে কি কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হবে?

