রামপুরহাটে অঙ্গনওয়াড়িতে
বীরভূমের রামপুরহাটে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের সামনে শিশুদের খাবারের মান নিয়ে অভিযোগ জানিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছেন অভিভাবকেরা। অভিযোগ, অঙ্গনওয়াড়িতে নিয়মিতভাবে শিশু এবং গর্ভবতী মহিলাদের জন্য নিম্নমানের খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে। তাদের দাবি, ভাতের সঙ্গে ডাল বা তরকারি দেওয়া হয় না, এবং কখনও কখনও শিশুরা কেবল ভাত এবং ডিমসেদ্ধ খেয়ে থাকে, যা খাবারের পরিমাণ ও মানের ক্ষেত্রে অনুপযুক্ত।
এই ঘটনা ঘটেছে রামপুরহাট-১ ব্লকের বড়শাল উত্তর লেটপাড়া অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে। সোমবার, অভিভাবকেরা অভিযোগ করেন যে, ভাতের সঙ্গে শুধু ডিমসেদ্ধ দেওয়া হয়েছিল, যার ফলে শিশুরা সঠিকভাবে খেতে পারেনি। তাঁদের অভিযোগ, নিয়মিতভাবে বাচ্চাদের খাওয়ানোর জন্য যে মানের খাবারের দরকার, তা দেওয়া হয় না। এতে শিশুরা কষ্ট পায় এবং সঠিক পুষ্টি থেকে বঞ্চিত হয়।
অভিভাবকদের অভিযোগ, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা তাদের সন্তানদের খাবার দেওয়ার সময় সেই খাবারের মান নিয়ে খুব বেশি খেয়াল রাখেন না। সোনামণি লেট নামের এক অভিভাবিকা বলেন, “বাচ্চাদের ভাতের সঙ্গে ডাল বা সব্জি দেওয়া হয় না। শুকনো খাবার গলায় আটকে যেতে পারে, কিন্তু কর্মীরা এ বিষয়ে কিছুই ভাবেন না।” তিনি আরও জানান, অঙ্গনওয়াড়িতে বাচ্চাদের বসিয়ে খাওয়ানোর কথা, কিন্তু কর্মীরা থালায় শুকনো ভাত দিয়ে বাচ্চাদের বাড়িতে পাঠিয়ে দেন, যা শিশুদের জন্য বিপদজনক।
মিনতি লেট নামে আরেক অভিভাবিকার অভিযোগ, ভাত অনেক সময় শক্ত থাকে এবং ঠিকমতো সেদ্ধ হয় না, যা শিশুর পক্ষে খাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। তাঁর মতে, খিচুড়ি রান্না হলেও তাতে ডাল বা সব্জি থাকে না, যা পুষ্টির জন্য প্রয়োজনীয়। আরও অভিযোগ, অঙ্গনওয়াড়িতে পানীয় জলের যথাযথ ব্যবস্থা নেই, যা শিশুদের স্বাস্থ্যগত সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা এই সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাদের দাবি, সরকার যে বরাদ্দ দেয়, সেই অনুযায়ী তাদের খাবার সরবরাহ করা হয়। নন্দিতা ভট্টাচার্য নামে এক অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী জানান, “পড়ুয়াপিছু সব্জি খাওয়ানোর জন্য ১১ পয়সা বরাদ্দ করা হয়। আমাদের অঙ্গনওয়াড়িতে ৩ থেকে ৬ বছর বয়সি ২৭টি বাচ্চা রয়েছে, এবং তাদের জন্য যে খাবারের বরাদ্দ আছে, সেটাই আমরা সরবরাহ করি।” তিনি আরও জানান, খাবারের মান নিয়ে অভিভাবকেরা অভিযোগ জানালেও, অঙ্গনওয়াড়িতে শিশুদের পড়াশোনার জন্য বসার ব্যবস্থা না থাকার বিষয়ে তাদের কোনো বক্তব্য নেই।
এই ধরনের ঘটনায় অভিভাবকদের পক্ষ থেকে বিভিন্নভাবে অভিযোগ করা হলেও, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলি খারিজ করে দিয়েছেন। নন্দিতা ভট্টাচার্যের দাবি, “আমায় হেনস্থা করা হচ্ছে,” এবং এই ধরনের অভিযোগের সাথে তিনি একমত নন।
অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের খাবারের মান নিয়ে বিক্ষোভ এবং অভিযোগের প্রেক্ষিতে, স্থানীয় প্রশাসন এবং সমাজকর্মীরা এই পরিস্থিতি নজরে রেখে দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। অভিভাবকরা চান যে, তাদের সন্তানরা যেন সঠিক এবং পুষ্টিকর খাবার পায়, যাতে তাদের শারীরিক ও মানসিক উন্নতি সুষ্ঠুভাবে হতে পারে।