Sunday, December 7, 2025

রাজ্য সরকারকেই ট্রাম বাঁচাতে উদ্যোগী হতে হবে, হাই কোর্টের নির্দেশ

Share

রাজ্য সরকারকেই ট্রাম বাঁচাতে উদ্যোগী হতে হবে

কলকাতার ঐতিহ্যবাহী ট্রাম সেবাকে বাঁচানোর জন্য রাজ্য সরকারকেই উদ্যোগী হতে হবে। মঙ্গলবার কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ এক নির্দেশে রাজ্যকে ট্রামলাইন বুজিয়ে ফেলার কাজ অবিলম্বে বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে। এই সংক্রান্ত বিষয়ে রাজ্যকে ছবি-সহ রিপোর্ট আদালতে জমা দিতে হবে।

প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের নেতৃত্বে হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ ছিল, ‘‘ট্রাম রাজ্যের ঐতিহ্য। এটা সহজে তুলে দেওয়া উচিত নয়। রাজ্যকেই উদ্যোগী হতে হবে ট্রাম বাঁচাতে। অনেক দেশে ট্রাম এখনও চলাচল করে, এমনকি কিছু জায়গায় রাস্তার মাঝখান দিয়ে চলে।’’ তাঁর মতে, রাজ্যকে রাজনৈতিক সদিচ্ছা দেখিয়ে ট্রাম সেবার উন্নতি ও সংরক্ষণে উদ্যোগী হতে হবে।

এই নির্দেশের পরে, কলকাতা হাই কোর্টের পর্যবেক্ষণ স্পষ্ট করে দিল যে, রাজ্য সরকারকেই এই ঐতিহ্যবাহী পরিবহণ ব্যবস্থার ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে হবে। আদালত আরও জানায়, ‘‘যদি উপরতলা থেকে নির্দেশ না থাকে, তবে এভাবে ট্রামলাইন বুজিয়ে ফেলা সম্ভব নয়।’’

ট্রামলাইন বুজিয়ে ফেলার অভিযোগ

কলকাতার রাস্তায় ট্রাম ফিরিয়ে আনার দাবিতে কলকাতা হাই কোর্টে একটি নাগরিক সংগঠন মামলা করেছিল। তারা অভিযোগ করেছিল, ট্রাম যাতে চলতে না পারে, তার জন্য কালীঘাট, ভবানীপুর, জাজেস কোর্ট এবং খিদিরপুরে ট্রামলাইন পিচ দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। এই অভিযোগের ভিত্তিতে আদালত রাজ্যকে নির্দেশ দেয় যে, ট্রামলাইন বুজিয়ে ফেলার কাজ অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।

প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, ‘‘যে দু’টি স্থানে ট্রামলাইন তুলে ফেলার অভিযোগ উঠেছে, সেগুলোর তদন্ত করে কলকাতা পুলিশ প্রতিবেদন দাখিল করবে।’’

ট্রাম

রাজ্য সরকারের প্রতিক্রিয়া

এই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্য সরকার তাদের রিপোর্ট হাই কোর্টে জমা দিয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, রাজ্য নিয়মিত ট্রাম সংরক্ষণ নিয়ে বৈঠক করছে এবং পরিবহণ দফতর কখনোই ট্রামলাইন বুজিয়ে ফেলার নির্দেশ দেয়নি। তবে, নাগরিক সংগঠনের অভিযোগ ছিল, রাজ্য সরকার ট্রাম চলাচল নিয়ে খুব একটা আগ্রহী নয় এবং বিদ্যমান রুটগুলো থেকে ট্রাম তুলে নিতে চাচ্ছে।

এই অবস্থায়, রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে মামলাকারী সংগঠনটি অভিযোগ করেছে যে, রাজ্য আদালতের গঠিত কমিটির সুপারিশ উপেক্ষা করছে। এই কমিটি ট্রাম চালানোর জটিলতা কাটিয়ে ওঠার উপায় খতিয়ে দেখতে পুলিশের প্রতিনিধি, পরিবহণ বিশেষজ্ঞ, কলকাতা পুরসভা, রাজ্য পরিবহণ নিগম সহ বিভিন্ন পক্ষের প্রতিনিধির সঙ্গে আলোচনা করার পর তৈরি হয়েছিল।

কোর্টের নির্দেশ এবং ভবিষ্যৎ

এই পরিস্থিতিতে, কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশ ট্রাম সেবার ভবিষ্যত নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। আদালতের কড়া নির্দেশে রাজ্য সরকারের উপর চাপ তৈরি হবে যাতে তারা ট্রাম সংরক্ষণ ও চালনা নিয়ে সক্রিয় ভূমিকা নেয়।

কলকাতার ট্রাম পরিষেবা এক সময় শহরের অন্যতম প্রধান যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল। তবে বর্তমান সময়ে এই ঐতিহ্যবাহী পরিবহণ ব্যবস্থা সঙ্কটাপন্ন হয়ে পড়েছে। কালীঘাট, ভবানীপুর, জাজেস কোর্ট এবং খিদিরপুরে ট্রামলাইন বুজিয়ে ফেলার ঘটনা এই সংকটের আরও প্রমাণ।

এখন রাজ্য সরকারের কাছে একটি বড় সুযোগ রয়েছে, যে তারা ট্রাম সেবাকে বাঁচাতে এবং শহরের পরিবহণ ব্যবস্থাকে উন্নত করতে উদ্যোগী হবে। একদিকে, ট্রাম সংরক্ষণের জন্য রাজ্যকে দৃঢ় সিদ্ধান্ত নিতে হবে, অন্যদিকে কোর্টের নির্দেশে একটি স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয়েছে যে, ট্রামলাইন বুজিয়ে ফেলার কাজ বন্ধ করতে হবে।

উপসংহার

এই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশ রাজ্য সরকারকে ট্রাম সেবার প্রতি দায়িত্বশীল মনোভাব গ্রহণ করতে বাধ্য করবে। যদি রাজ্য সরকার এই ঐতিহ্যবাহী পরিবহণ ব্যবস্থা রক্ষা করতে আগ্রহী হয়, তবে তা কলকাতার পরিবহণ ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করতে সাহায্য করবে। ভবিষ্যতে ট্রাম চালানোর উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য রাজ্য ও আদালত যৌথভাবে কাজ করতে পারে, যাতে কলকাতার ঐতিহ্যবাহী ট্রাম সেবা জীবিত থাকে।

সত্যিকারের সাধ্বী নাকি শুধুই লোকদেখানো! নেটপ্রভাবী হর্ষা রিচারিয়া নিয়ে কেন এত বিতর্ক?

Read more

Local News