রাজ্য বিজেপিতে বদলের সম্ভাবনা?
পশ্চিমবঙ্গ বিজেপিতে রাজ্য সভাপতির দায়িত্ব বদলের পর কি দলের নীচুতলার নেতৃত্বেও বড়সড় পরিবর্তন আসন্ন? বিদায়ী সভাপতি সুকান্ত মজুমদার যেমন স্থিতাবস্থার বার্তা দিয়েছেন, তেমনই নতুন সভাপতি শমীক ভট্টাচার্যের মন্তব্যে উঠে এসেছে ‘সংশোধন ও সংযোজন’-এর ইঙ্গিত—আর তা নিয়েই জল্পনা তুঙ্গে বঙ্গ বিজেপির অন্দরে।
মাত্র এক সপ্তাহ আগে, বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডার নির্দেশে শমীক মনোনয়ন জমা দেন রাজ্য সভাপতির জন্য। এরপর ৩ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা হয় তাঁর নাম। শপথ না থাকলেও, তাঁর কথায় উঠে আসে নেতৃত্বে রদবদলের ইঙ্গিত। শমীক স্পষ্ট বলেন, “প্রয়োজনে সংশোধন, সংযোজন বা পরিবর্তন—সবই দলের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।”
অন্যদিকে, সুকান্ত মজুমদার রাজ্য দফতর ছাড়ার সময় বলেছিলেন, “ব্যাটন হস্তান্তর মানেই সবকিছু বদলে যাবে—এমনটা ভাবার কোনও কারণ নেই।” তিনি জানিয়ে যান, মণ্ডল, জেলা বা বুথস্তরে যাঁরা দায়িত্বে রয়েছেন, তাঁদের সঙ্গেই শমীক কাজ করবেন বলে আশা। অর্থাৎ, একটি স্থিতাবস্থার বার্তা ছড়াতে চেয়েছিলেন বিদায়ী সভাপতি।
তবে দায়িত্ব গ্রহণের পর শমীক ভট্টাচার্য তাঁর বক্তব্যে বেশ পরিস্কার করে দিয়েছেন—যদিও তিনি কোথাও সরাসরি বলেননি, কারও জায়গা বদল হবে, তবুও বলেছেন, “প্রয়োজন হলে সংশোধন হবেই। বিজেপিতে এটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। পুরোটাই নির্ভর করছে প্রয়োজনীয়তার উপরে।”
কোন স্তরে বদলের সম্ভাবনা?
বর্তমানে রাজ্য বিজেপির ১৩০০-র বেশি মণ্ডল কমিটি, যার বেশিরভাগেই সভাপতি নির্বাচিত হয়ে গিয়েছেন। ৪৩টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে ৩৯টিতে ইতিমধ্যেই নতুন সভাপতি নিযুক্ত হয়েছেন। বাকি চারটি—দার্জিলিং, ঘাটাল, ব্যারাকপুর এবং বনগাঁ—এখনও চূড়ান্ত হয়নি। দলের একাংশের দাবি, এই চারটি জেলাতেই শমীকের অধীনে নতুন সভাপতি বেছে নেওয়া হবে। কিন্তু দলীয় অন্য একটি সূত্র বলছে, আরও কিছু জেলাতেও বদল হতে পারে, কারণ—এক, বেশ কয়েকটি জেলায় নেতৃত্ব নিয়ে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এখনও জ্বলন্ত; দুই, অনেকেই কাঙ্ক্ষিত ফল আনতে ব্যর্থ হচ্ছেন।
দলের ভিতরে আলোড়ন
শমীকের বক্তব্যে তাই অনেকেই স্পষ্ট বার্তা খুঁজে পাচ্ছেন। যেমন কেউ কেউ মনে করছেন, রাজ্য বিজেপি আগামী বিধানসভা নির্বাচনকে মাথায় রেখে আরও শক্তিশালী কাঠামো গড়ে তুলতে চায়। সেখানে যে নেতারা সংহতি তৈরি করতে বা সাংগঠনিক লক্ষ্যে পৌঁছতে ব্যর্থ, তাঁদের নিয়ে নতুন করে ভাবা হবে। আবার কেউ কেউ বলছেন, শমীক আপাতত কোনও বড় বদল না করে পর্যবেক্ষণপর্ব চালাবেন, পরে সময় মতো সিদ্ধান্ত নেবেন।
উপসংহার
বদলের গুঞ্জন থাকলেও নিশ্চিতভাবে এখনই বলা যাচ্ছে না রাজ্য বিজেপির নিচুতলার নেতৃত্বে কতটা রদবদল হবে। তবে শমীকের ‘সংশোধন’ মন্তব্য এবং সুকান্তের ‘স্থিতাবস্থা’ বার্তার ফাঁকে তৈরি হয়েছে এক সূক্ষ্ম রাজনৈতিক টানাপোড়েন—যার উত্তর সময়ই দেবে। তবে একটা বিষয় স্পষ্ট, রাজ্য বিজেপিতে এখন বদলের হাওয়া বইছে।

