আল কায়দা জঙ্গি চক্রের সন্ধান
পশ্চিমবঙ্গে আল কায়দা জঙ্গি চক্রের উপস্থিতির প্রমাণ সংগ্রহ করতে গিয়ে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ) ন’টি সন্দেহজনক ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সন্ধান পেয়েছে। গোয়েন্দা সূত্রের দাবি, এই অ্যাকাউন্টগুলো ব্যবহার করে জঙ্গিদের আর্থিক লেনদেন পরিচালিত হয়েছে। নিউ জলপাইগুড়ি থানা এলাকার ফুলবাড়িতে এক বাড়িতে তল্লাশি চালানোর পর এই অ্যাকাউন্টগুলোর খোঁজ মেলে। আরও তদন্ত করে নিশ্চিত হওয়া হচ্ছে যে এই অ্যাকাউন্টগুলোর মাধ্যমে আল কায়দা জঙ্গি গোষ্ঠীর কার্যক্রমে অর্থ জোগানো হয়েছিল কি না।
সম্প্রতি, গুজরাতের আমদাবাদ থেকে আটক হওয়া চার বাংলাদেশি আল কায়দা জঙ্গির মাধ্যমে রাজ্যের একাধিক জায়গায় এনআইএ তদন্ত চালায়। ফুলবাড়ির পাশাপাশি কোচবিহারের হলদিবাড়ি ও কলকাতার বেনিয়াপুকুরের কয়েকটি এলাকা থেকেও আল কায়দার কার্যক্রমের ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। তল্লাশির সময় সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের সরাসরি না পাওয়া গেলেও তাদের ব্যবহৃত বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি ও তথ্য হাতে এসেছে গোয়েন্দাদের।
এই ঘটনার এক পর্যায়ে জানা যায়, সন্দেহজনক ওই ন’টি অ্যাকাউন্টের মধ্যে একটিতে আল কায়দার ফান্ডের সরাসরি লেনদেন হয়েছিল আমদাবাদের জঙ্গিদের কাছে। অন্যান্য অ্যাকাউন্টগুলোর মাধ্যমে কী ধরণের লেনদেন হয়েছে, তাও তদন্তের আওতায় আনা হয়েছে। ফুলবাড়ির বাসিন্দা সন্দেহভাজন ব্যক্তির বাড়ি থেকে একাধিক ভুয়া প্যান কার্ড এবং আধার কার্ডও পাওয়া গেছে। প্রতিটি কার্ডে একই ব্যক্তির নাম থাকলেও বাবার নাম এবং ঠিকানার পার্থক্য রয়েছে, যা অসঙ্গতিপূর্ণ এবং সন্দেহজনক। এনআইএ-র তদন্তকারীরা ওই ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন, এবং তার বক্তব্যে বেশ কিছু অসঙ্গতি পেয়েছেন। তাঁকে পুনরায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ২১ নভেম্বর গুজরাতের এনআইএ অফিসে হাজির হতে বলা হয়েছে।
ওই ব্যক্তি গত এক বছর ধরে ফুলবাড়ির বাড়িটি ভাড়া নিয়ে থাকছেন। তার পেশার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো উত্তর দিতে না পারায় তদন্তকারীদের সন্দেহ আরও বাড়ছে। এটি সন্দেহজনক যে এতদিন সেখানে বসবাস করার পরেও তার কোনো পরিচিত পেশা নেই। এনআইএ মনে করছে যে এই ব্যক্তি হয়তো আল কায়দার আর্থিক এবং সংগঠনের সম্প্রসারণের কাজেই নিয়োজিত ছিলেন।
২০২৩ সালে আমদাবাদে আটক হওয়া পাঁচ জনের মধ্যে চারজন বাংলাদেশি নাগরিক ছিলেন। তাদের মূল কাজ ছিল আল কায়দার জন্য অর্থ সংগ্রহ করা এবং সংগঠনের নিম্নস্তরের কাজ পরিচালনা করা। গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন যে এই চার জন বাংলাদেশি হলদিবাড়ি সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে প্রবেশ করেছিলেন। তাদের সহায়তা করেছিলেন হলদিবাড়িরই এক বাসিন্দা, যিনি সম্ভবত বাংলাদেশি নাগরিক। তার প্রকৃত পরিচয় লুকিয়ে, এই ব্যক্তির নাম ব্যবহার করে হলদিবাড়ির ঠিকানায় নিজস্ব পরিচয়পত্র তৈরি করেছিলেন।
এনআইএ সূত্রে আরও জানা গেছে যে, পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও আল কায়দার কার্যক্রম দেশের অন্য রাজ্যগুলোতেও বিস্তৃত। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চলের পাশাপাশি কাশ্মীর, কর্ণাটক, বিহার, ত্রিপুরা এবং অসমেও তল্লাশি চালিয়েছে এনআইএ। এই তল্লাশিগুলি থেকে প্রাপ্ত প্রমাণের মাধ্যমে গোয়েন্দারা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আল কায়দার সংগঠনের বিস্তারের প্রমাণ পেয়েছেন।
এনআইএ-এর এই অভিযান জঙ্গি সংগঠনের আর্থিক নেটওয়ার্ক এবং কার্যক্রমের বিস্তারিত প্রকাশ্যে আনার চেষ্টা করছে। ধৃত জঙ্গিদের জেরা করে গোয়েন্দারা নিশ্চিত হয়েছেন যে এই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টগুলির মাধ্যমে নিয়মিত আর্থিক লেনদেন হত, এবং এটি কোনো সাধারণ লেনদেন নয়। ফুলবাড়ি থেকে প্রাপ্ত তথ্য এবং অন্যান্য জায়গার তল্লাশি প্রক্রিয়ায় পাওয়া বিভিন্ন তথ্য মিলিয়ে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে যে, পশ্চিমবঙ্গ জঙ্গি কার্যক্রমের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
এনআইএ জানিয়েছে যে সন্দেহভাজন ব্যক্তিরা নাম ও ঠিকানা পরিবর্তন করে নিজেদের আসল পরিচয় লুকিয়ে পশ্চিমবঙ্গসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে রয়েছে। এই প্রক্রিয়া তাদের গোপন কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে সুবিধা প্রদান করে। এনআইএ-র এই ধারাবাহিক অভিযান থেকে বোঝা যাচ্ছে, জঙ্গি কার্যক্রম এবং তাদের আর্থিক যোগাযোগের ওপর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এটি নিশ্চিত করতে এনআইএ পুরো ঘটনার মূলসূত্রে পৌঁছাতে চায় যাতে ভবিষ্যতে জঙ্গি কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে আনা যায়।
আল কায়দার মত চক্রের মধ্যে দিয়ে সংগঠনের বিস্তার ঘটিয়ে দেশব্যাপী স্থিতি বজায় রাখতে নতুন নতুন উপায় অবলম্বন করছে। ফলে এনআইএ এবং অন্যান্য সংস্থাগুলো তাদের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করছে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করছে যাতে ভারতীয় ভূখণ্ডকে সুরক্ষিত রাখা যায়।