তৃণমূল সরকারের শেষ পূর্ণাঙ্গ বাজেট নিয়ে বিধানসভায় তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ল রাজ্য সরকার। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বাজেটকে ‘দিশাহীন’ বলে কটাক্ষ করেছেন, আর আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকি একে বলেছেন ‘ভোটমুখী বাজেট’। বিধানসভার বাইরে থেকেও একই সুরে আক্রমণ শানিয়েছে বাম ও কংগ্রেস।
বিরোধীদের তোপ: ভোটমুখী বাজেট, কোনও দিশা নেই
বুধবার বিধানসভায় বাজেট পেশ হওয়ার পরই বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী রাজ্য সরকারের অর্থনৈতিক নীতির কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, “এই বাজেটের কোনও দিশা নেই। তৃণমূল সরকার সম্পূর্ণভাবে অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু হয়ে গিয়েছে।’’ শুভেন্দুর দাবি, ২০২৬ সালে “রাজ্যের পূর্ণাঙ্গ বাজেট বিজেপিই পেশ করবে।”
শুধু বিজেপিই নয়, বাজেটকে ‘লোক দেখানো’ বলেই মনে করছেন আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকি। তাঁর মতে, বাজেটে কিছু কিছু ক্ষেত্রে চমক দেওয়ার চেষ্টা করা হলেও, এতে “নতুনত্ব কিছুই নেই।” নওশাদ আরও বলেন, “বরাদ্দের বড় ঘোষণা করলেই হবে না, সেই টাকা খরচও করতে হবে। বাস্তবিক উন্নয়ন না হলে মানুষের কোনও উপকার হবে না।”
নারী সুরক্ষা ও কর্মসংস্থান প্রসঙ্গে খোঁচা
রাজ্যের বাজেটে নারী সুরক্ষার জন্য কোনও বিশেষ প্রকল্পের উল্লেখ নেই বলে দাবি করেছেন শুভেন্দু অধিকারী। একইসঙ্গে তিনি লক্ষ্মীর ভান্ডারের অনুদান বৃদ্ধি না হওয়া নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁর বক্তব্য, “দিল্লিতে বিজেপি সরকার মহিলাদের জন্য মাসে ২৫০০ টাকা অনুদানের ঘোষণা করেছে, অথচ বাংলায় মহিলাদের প্রকল্পে কোনও বৃদ্ধি নেই।”
এছাড়া, কর্মসংস্থানের অভাবকেও বড় ইস্যু হিসেবে তুলে ধরেছেন শুভেন্দু। তিনি বলেন, “রাজ্যে ২ কোটি ১৫ লক্ষ বেকার যুবক-যুবতী রয়েছেন। কিন্তু বাজেটে কর্মসংস্থান নিয়ে কোনও উল্লেখযোগ্য দিশা নেই।’’
ডিএ বৃদ্ধি, কিন্তু তা কি যথেষ্ট?
সরকারি কর্মচারীদের জন্য ৪ শতাংশ মহার্ঘভাতা বৃদ্ধির ঘোষণাকেও বিরোধীরা যথেষ্ট মনে করছে না। শুভেন্দুর মতে, “কেন্দ্রীয় সরকার জানুয়ারিতেই ৪ শতাংশ ডিএ বৃদ্ধি করেছে। রাজ্যের সরকারি কর্মচারীদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় কর্মচারীদের ডিএ-র ব্যবধান বিশাল। মাত্র ৪ শতাংশ বৃদ্ধিতে কিছুই হবে না।”
অর্থনীতিবিদ ও বিজেপি বিধায়ক অশোক লাহিড়ি বাজেটকে ‘ঘোষণার বাজেট’ বলে ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি বলেন, “এই বাজেটের কোনও ভিত্তি নেই, তৃণমূল সরকার কেবল ঘোষণার সরকার হয়ে উঠেছে।”
সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও ঋণের বোঝা নিয়ে উদ্বেগ
নওশাদ সিদ্দিকি বাজেটে সংখ্যালঘু উন্নয়নের জন্য ৫৬০০ কোটি টাকা বরাদ্দের ঘোষণা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁর দাবি, “আগের বছরও বড় অঙ্ক বরাদ্দ হয়েছিল, কিন্তু খরচ হয়েছে মাত্র ১৫-১৬ শতাংশ। তাহলে এই বরাদ্দের কী অর্থ?”
এছাড়া রাজ্যের বিপুল ঋণের বোঝার দিকেও নজর টেনেছেন নওশাদ। তাঁর কথায়, “আজকের দিনে বাংলার মাথায় ৬ লক্ষ কোটি টাকার ঋণ। এই ঋণ রাজ্যের মানুষের কাঁধে বিশাল বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
শেষ কথা
২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে তৃণমূল সরকার বাজেটে যে পরিকল্পনা করেছে, তা বিরোধীদের চোখে “শুধুই লোক দেখানো”। একদিকে শুভেন্দু বিজেপি সরকারের বাজেট পেশের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন, অন্যদিকে নওশাদ ভোটের আগে রাজ্য সরকারের “চমক” দেখানোর প্রবণতার সমালোচনা করছেন। রাজ্য বাজেট নিয়ে বিরোধীদের আক্রমণে রাজনৈতিক উত্তাপ যে আরও বাড়বে, তা বলাই বাহুল্য।
৬২ লাখ টাকায় মায়ামির রাজকীয় ভিলা ভাড়া! ওনলি ফ্যানস মডেলদের মাসিক আয় শুনলে চমকে যাবেন