বিনীত গোয়েল
রাজ্যপালের প্রশ্নের মুখে কলকাতার প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল। আরজি কর-কাণ্ডের প্রেক্ষিতে সিভিক ভলান্টিয়ারের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এবং তার বিরুদ্ধে ফাঁসানোর অভিযোগের পর, রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস রাজ্যের সরকারকে বিনীত গোয়েলের সম্পর্কে তাদের অবস্থান জানাতে অনুরোধ করেছেন। গত ১২ নভেম্বর, রাজভবন থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে রাজ্যপালের এই মন্তব্য উঠে আসে, যেখানে বলা হয়েছে যে, আরজি কর-কাণ্ডে ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ারের অভিযোগ গুরুতর এবং রাজ্য সরকারকে দ্রুত বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য বলা হয়েছে।
এদিকে, রাজ্য সরকার এই প্রশ্নের মুখে পড়ার পর, রাজ্যপালের প্রতি সমালোচনা করেছেন কৃষিমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। তিনি মন্তব্য করেছেন, ‘‘রাজ্যপাল কেন্দ্রীয় সরকারের এজেন্ট হয়ে কাজ করছেন’’ এবং ‘‘তিনি কখনই পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল হয়ে উঠতে পারেননি।’’ শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, রাজ্যপালের এই ধরনের পদক্ষেপ রাজ্য সরকারের প্রতি অসন্তোষ প্রদর্শন করছে এবং এটি শোভনীয় নয়।
আরজি কর-কাণ্ডে অভিযোগ উঠেছে যে, পুলিশ কমিশনার গোয়েল সহ একাধিক উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তারা সিভিক ভলান্টিয়ারকে ফাঁসানোর চেষ্টা করেছেন। এরই প্রেক্ষিতে ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ার, যিনি ১১ নভেম্বর শিয়ালদহ আদালতে হাজির হয়ে চিৎকার করে দাবি করেছিলেন, ‘‘বিনীত গোয়েল, ডিসি স্পেশাল, চক্রান্ত করে আমাকে ফাঁসিয়েছেন’’। তিনি জানান, তাকে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে এই মামলায় জড়ানো হয়েছে। এই বক্তব্য নিয়ে রাজ্যপাল বিষয়টি রাজ্য সরকারের কাছে স্পষ্টভাবে জানতে চেয়েছেন, এবং রাজ্য সরকারও এই অভিযোগের প্রতি গুরুত্ব সহকারে মনোযোগ দিচ্ছে।
এদিকে, ৪ নভেম্বর আদালত চত্বরে সিভিক ভলান্টিয়ার আরও দাবি করেছিলেন যে, ‘‘তিনি নির্দোষ এবং তাকে ফাঁসানো হয়েছে’’। সেই সময়ে তিনি আবারও প্রিজ়ন ভ্যানের জানলা থেকে দাবি করেছিলেন, ‘‘সরকারই তাকে ফাঁসাচ্ছে’’। তবে এই ধরনের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্য সরকার নিশ্চুপ থাকে না, কিন্তু রাজ্যপালের বিবৃতির পর থেকে রাজনৈতিক তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে।
রাজ্যপালের মন্তব্যের পর মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এটা রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে একটি অযৌক্তিক আক্রমণ, যেটি রাজ্যপালের কাজ নয়।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘রাজ্যপালকে কেন্দ্রীয় সরকারের এজেন্ট হিসেবে কাজ করতে হবে না, তাঁকে নিজের দায়িত্ব পালন করতে হবে’’। রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের প্রতি এই মন্তব্যের পর, রাজ্য সরকারের তরফ থেকে আরও একবার পরিষ্কার করা হয় যে, তাদের তরফ থেকে সব সময়ই আইনি প্রক্রিয়া মেনে চলা হবে।
রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের কাছে কলকাতার প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল সম্পর্কে আরও অনেক প্রশ্ন রয়েছে। এর আগেও রাজ্যপাল সঞ্জীব খন্নার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিলেন, যেখানে গুজব ছড়ানোর এবং রাজ্যপালের পদকে কলঙ্কিত করার জন্য দুজন আইপিএস অফিসারের নাম উঠে আসে। তাদের মধ্যে ছিলেন গোয়েল এবং ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (সেন্ট্রাল) ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়ের।
এদিকে, গোয়েলের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগের মধ্যে আরও একটি ঘটনা উঠে আসে। ২০১৮ সালে রাজ্য সরকার তাঁকে কলকাতা পুলিশের কমিশনারের পদ থেকে সরিয়ে দেয়। জুনিয়র ডাক্তারদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গোয়েলকে পদচ্যুত করা হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে, এই পদত্যাগ রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে গৃহীত হয়েছিল, কিন্তু রাজ্যপাল তার ব্যাপারে কোনো স্পষ্ট অবস্থান প্রকাশ করেননি। এখন এই নতুন অভিযোগের প্রেক্ষিতে রাজ্যপাল আবারও রাজ্য সরকারের কাছে জিজ্ঞাসা করেছেন, ‘‘রাজ্যের প্রকৃত অবস্থান কী?’’
এছাড়া, রাজ্য সরকার গোয়েলের বিরুদ্ধে যে পদক্ষেপ নিয়েছে, সেটি রাজ্যপালের কাছে যথেষ্ট গুরুত্ব পেয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস রাজ্য সরকারের কাছ থেকে দ্রুত উত্তর চান, এবং এ বিষয়ে রাজ্য সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্ট হওয়ার আশায় আছেন।

