Sunday, November 30, 2025

রাজভবন–কল্যাণ সংঘাতের নতুন অধ্যায়: বিস্ফোরক মন্তব্যের জেরে তৃণমূল সাংসদের বিরুদ্ধে আইনি আঘাত

Share

রাজভবন–কল্যাণ সংঘাতের নতুন অধ্যায়!

রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসকে কেন্দ্র করে তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য ঘিরে রাজনৈতিক অশান্তি এখন রীতিমতো আইনি লড়াইয়ের রূপ নিয়েছে। রাজভবনে অস্ত্র ও বিস্ফোরক মজুত থাকার অভিযোগ এনে কল্যাণ যে তীব্র মন্তব্য করেছিলেন, তার জেরে শেষ পর্যন্ত ভারতীয় ন্যায় সংহিতা (বিএনএস)-র একাধিক ধারায় তাঁর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করল রাজভবন। অভিযোগগুলি গুরুতর এবং অজামিনযোগ্য। ফলে রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তেজনা আরও বেড়েছে।

রাজভবনের তরফে দায়ের করা অভিযোগে বলা হয়েছে— সাংসদ ইচ্ছাকৃত ভাবে এমন মন্তব্য করেছেন যা জনমনে ভয়, বিভ্রান্তি এবং অরাজকতা ছড়াতে সক্ষম। তাছাড়া, সংবিধান মেনে চলা রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধানের মর্যাদাকেও আঘাত করেছেন তিনি। অভিযোগে বিএনএস ২০২৩–এর সেকশন ১৫১, ১৫২ (দেশের ঐক্য ও সার্বভৌমত্বের প্রতি আঘাত), ১৯৬ ‘এ’, ১৯৬ ‘বি’ (ঘৃণা ও সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টি), ১৯৭ (মানুষকে বিভ্রান্ত করে হিংসা ছড়ানো), ৩৫৩–১ ‘বি’, ৩৫৩ ‘সি’ (রাজ্যপালের ভাবমূর্তি নষ্ট ও সাধারণ মানুষকে ভয় দেখানো), ৩৫৩–২ (দুই গোষ্ঠীর মধ্যে হিংসায় ইন্ধন দেওয়া)–সহ একাধিক গুরুতর ধারার উল্লেখ রয়েছে। রাজভবনের ওএসডি–র মাধ্যমে এই মামলা আনুষ্ঠানিক ভাবে জমা পড়েছে কলকাতা হাই কোর্টে।

ঘটনার সূত্রপাত এসআইআর (বিশেষ নিবিড় সংশোধনী)–কে সমর্থন করে রাজ্যপালের বক্তব্যকে ঘিরে। সেই প্রতিক্রিয়ায় কল্যাণ অভিযোগ তোলেন যে, রাজ্যপাল নাকি বিজেপির “অপরাধীদের” রাজভবনে আশ্রয় দিচ্ছেন এবং তাঁদের অস্ত্র সরবরাহ করছেন। এই বিস্ফোরক মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতেই রাজভবন সরব হয়ে এটিকে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে ব্যাখ্যা করে।

এদিকে এই অভিযোগের মাঝে আরও নাটকীয় ঘটনা ঘটে সোমবার। সেই সময় রাজ্যপাল ছিলেন উত্তরবঙ্গ সফরে। কল্যাণের মন্তব্য প্রকাশ্যে আসতেই বোস তড়িঘড়ি কলকাতায় ফিরে আসেন। দুপুরের পর তিনি পুলিশের শীর্ষ আধিকারিক, কেন্দ্রীয় বাহিনীর সদস্য, বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দল এবং একটি স্নিফার ডগসহ বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী নিয়ে রাজভবন চত্বরে বিস্তৃত চিরুনি তল্লাশি অভিযান পরিচালনা করেন। এই অভিযানে সংবাদমাধ্যমের কর্মীরা উপস্থিত থাকার সুযোগ পান এবং নাগরিক সমাজের বেশ কয়েকজন প্রতিনিধি পর্যবেক্ষক হিসেবে যোগ দেন।

তল্লাশি শেষে রাজ্যপাল ঘোষণা করেন, রাজভবনে কোনও অস্ত্র বা সন্দেহজনক বস্তু মেলেনি। তাই সাংসদ কল্যাণকে প্রকাশ্যে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে। একই সঙ্গে তিনি জানান, ভুল তথ্য রটানো এবং সাংবিধানিক পদমর্যাদার বিরুদ্ধে অপপ্রচার ছড়ানোর জন্য আইনগত পদক্ষেপ হবে।

সোমবারই তিনি রাজভবনের আইনজীবীদের হাই কোর্টে মামলা প্রস্তুতের নির্দেশ দেন। তার পরিপ্রেক্ষিতেই মঙ্গলবার দুপুরে রাজভবনের আইনজীবীরা আনুষ্ঠানিক ভাবে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।

রাজনৈতিক মহলে এখন প্রশ্ন একটাই— এই আইনি সংঘাত কি নতুন কোনও রাজনৈতিক সঙ্কটের সূচনা? নাকি কল্যাণকে নরম সুরে নামতে বাধ্য করবে রাজভবনের আইনি চাপ? সময়ই বলবে শেষ সত্য।

Read more

Local News