যৌন ক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে কফি!
কফি—বিশ্বব্যাপী এক অতি পরিচিত পানীয়, যা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত আমাদের জীবনের এক অপরিহার্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ক্লান্তি দূর করতে, মনের জোর বাড়াতে, বা স্ন্যাকসের সাথে মিষ্টি আড্ডায়, কফি থাকে আমাদের সঙ্গী। কিন্তু, এই প্রিয় পানীয় যে প্রজনন ক্ষমতার ওপরও বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে, তা কি আমরা জানি? বিশেষত, কফিতে থাকা ক্যাফিনের কারণে তা শরীরের নানা দিক থেকে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
ক্যাফিন হলো এক ধরনের ‘স্টিমুল্যান্ট’ যা মস্তিষ্ককে তীব্র উদ্দীপনা দেয় এবং শরীরের শক্তি বাড়ায়। তবে, এর বেশি পরিমাণে গ্রহণ প্রজনন স্বাস্থ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এটি শুধু কফিতে নয়, চা, অ্যালকোহল, নরম পানীয় এবং চকোলেটেও থাকে। নানা গবেষণায় দেখা গেছে যে, একদিকে ক্যাফিন শরীরের কিছু কার্যকরী প্রক্রিয়া যেমন টাইপ-২ ডায়াবিটিসের ঝুঁকি কমায়, তবে অন্যদিকে এটি প্রজনন ক্ষমতার ওপর নেতিবাচক প্রভাবও ফেলতে পারে।
চিকিৎসকদের মতামত
চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, ক্যাফিনের অতিরিক্ত পরিমাণ প্রজনন ক্ষমতার ওপর গুরুতর প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষত, পুরুষদের ক্ষেত্রে শুক্রাশয়ের স্বাভাবিক কার্যকলাপে বাধা সৃষ্টি হতে পারে, এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে জরায়ুর উর্বরতা কমিয়ে দেয়। মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অরুণাংশু তালুকদার বলেন, “এক কাপ কফিতে প্রায় ৭০ থেকে ১৪০ মিলিগ্রাম ক্যাফিন থাকে। অতিরিক্ত কফি খাওয়া শরীরের ওপর চাপ সৃষ্টি করে এবং বিশেষত প্রজনন ক্ষমতা কমাতে পারে।” তিনি আরও বলেন, “দিনে তিন কাপ কফি খাওয়ার বেশি হলে এটি শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।”
ক্যাফিনের প্রভাব
মানব শরীরে দুটি সিস্টেম থাকে— সিম্প্যাথেটিক এবং প্যারাসিম্প্যাথেটিক। সিম্প্যাথেটিক সিস্টেমে ক্যাফিন অতিরিক্ত পরিমাণে প্রবাহিত হলে শরীরের তাপমাত্রা বাড়ে, রক্তচাপ বৃদ্ধি পায় এবং শ্বাসের গতি দ্রুত হয়। অন্যদিকে, প্যারাসিম্প্যাথেটিক সিস্টেমে এর বিরোধী প্রভাব দেখা যায়। স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ মল্লিনাথ মুখোপাধ্যায়ের মতে, “ক্যাফিন শরীরের সিস্টেমকে উদ্দীপ্ত করে, ফলে শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় যা সরাসরি প্রজনন অঙ্গের ওপর প্রভাব ফেলে। এতে হরমোনের ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়, এবং শুক্রাণু ও ডিম্বাণু উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়।”
হরমোনের ভারসাম্য
ক্যাফিনের পরিমাণ যদি ২০০ মিলিগ্রাম প্রতিদিনের সীমা ছাড়িয়ে যায়, তাহলে শরীরের হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে। মহিলাদের ক্ষেত্রে ইস্ট্রোজেন এবং প্রজেস্টেরনের ক্ষরণে অনিয়ম দেখা দেয়, যা মাসিক ঋতুচক্রের ওপর প্রভাব ফেলে এবং উর্বরতা কমিয়ে দেয়। মল্লিনাথ আরও বলেন, “এটি মহিলাদের মধ্যে মাসিক অনিয়মিতা এবং ডিম্বাণু নিঃসরণের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।”
পুরুষদের ক্ষেত্রেও, অতিরিক্ত ক্যাফিন টেস্টোস্টেরনের ক্ষরণের প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করতে পারে। বিশেষত, শুক্রাশয়ের স্বাভাবিক তাপমাত্রা বাড়লে শুক্রাণু উৎপাদন কমে যায় এবং ইরেকটাইল ডিসফাংশন হতে পারে। অতিরিক্ত ক্যাফিনের ফলে শুক্রাণুর গুণমান এবং ঘনত্ব কমে যেতে পারে, যা বন্ধ্যাত্বের ঝুঁকি বাড়ায়।
যৌন উত্তেজনায় প্রভাব
অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, ক্যাফিন যৌন উত্তেজনা কমিয়ে দিতে পারে। ব্রিটেনের ‘দ্য রয়্যাল কলেজ অফ অবস্টেট্রিশিয়ান অ্যান্ড গাইনেকোলজিস্টস’ এক গবেষণায় জানিয়েছে, “দিনে ২০০ মিলিগ্রামের বেশি ক্যাফিন গ্রহণ করলে পুরুষ ও মহিলাদের যৌন উত্তেজনা কমে যেতে পারে।” এর ফলে যৌন সম্পর্কের সময় উত্তেজনা কমে যাওয়ার সমস্যা দেখা দেয়। ক্যাফিনের অতিরিক্ত গ্রহণ শরীরে আয়রন ও ক্যালসিয়াম শোষণে বাধা দেয়, যা যৌন হরমোনের কার্যক্রমের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
উপসংহার
তাহলে, কফি বা অন্য ক্যাফিনযুক্ত পানীয় খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। এক কাপ কফি আমাদের দিনের আরম্ভে সতেজতা আনতে পারে, তবে অতিরিক্ত ক্যাফিন শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে, বিশেষত প্রজনন স্বাস্থ্যে। চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুসরণ করে এবং ক্যাফিনের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে আমাদের প্রজনন ক্ষমতা বজায় রাখা সম্ভব। তাই, কফি এবং অন্যান্য ক্যাফিনযুক্ত পানীয়গুলো সঠিক পরিমাণে গ্রহণ করাই ভালো।