Monday, December 1, 2025

যোগ্য-অযোগ্য বিভাজনের দাবিতে বর্ষবরণের রাতেও রাজপথে থাকবেন শিক্ষকরা

Share

বর্ষবরণের রাতেও রাজপথে থাকবেন শিক্ষকরা

পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী, আগামী ২ জানুয়ারি স্কুল খুললেও কাজে যোগ দেবেন না বিক্ষোভরত শিক্ষক-শিক্ষিকারা। তাঁদের দাবি, যত দিন না প্যানেল থেকে অযোগ্যদের বাদ দেওয়া হচ্ছে, তত দিন পর্যন্ত তাঁদের আন্দোলন চলবে। গত তিন দিন ধরে তাঁরা শহরের রাজপথে অবস্থান নিয়েছেন। জানাচ্ছেন, ৩১ ডিসেম্বর বর্ষবরণের রাতেও তাঁরা রাজপথ ছেড়ে যাবেন না। রবিবার সন্ধ্যায় ধর্মতলার ওয়াই চ্যানেলে এক স্লোগান মিছিলের মাধ্যমে তাঁদের অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছেন।

‘২০১৬ যোগ্য শিক্ষক শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চ’ এর সদস্যরা জানিয়েছিলেন, ৭ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্টে ফের এই মামলার শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। যদি সেখানে সুরাহা না মেলে, তাহলে তাঁরা রাজপথে বসেই আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।

রবিবার সন্ধ্যায় ধর্মতলার ওয়াই চ্যানেলে মোবাইলের টর্চ জ্বেলে “উই ওয়ান্ট জাস্টিস” স্লোগান দিচ্ছিলেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। তাদের মধ্যে ছিলেন আসানসোলের একটি স্কুলের সংস্কৃত শিক্ষিকা রূপা কর্মকার। রূপা জানান, সাত বছর ধরে শিক্ষকতা করার পর এখন তাঁর চাকরি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। তিনি আরও বলেন, “আমরা যোগ্য, কিন্তু অযোগ্যদের কারণে কেন আমাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হবে? আমরা চাই যোগ্য-অযোগ্যদের বিভাজন করা হোক।”

রূপা তাঁর হাতে ধরা পোস্টারে সিবিআইয়ের দেওয়া তথ্য তুলে ধরেন, যা অনুযায়ী নবম-দশম শ্রেণিতে ৮.৫০ শতাংশ শিক্ষক অযোগ্য এবং একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে ১৪.৪৭ শতাংশ অযোগ্য। তিনি প্রশ্ন তোলেন, “এই সামান্য অযোগ্যদের জন্য কেন পুরো প্যানেল বাতিল হবে? যদি এসএসসি যোগ্য-অযোগ্যদের বিভাজন করতে না পারে, তাহলে তার দায়ভার কেন আমাদের বহন করতে হবে?”

এরই মধ্যে ব্যারাকপুরের এক শিক্ষিকা, সাবিনা ইয়াসমিনও আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছেন। তিনি বলেন, “রাতে বাচ্চাকে বাবার কাছে পাঠিয়ে দেব, কিন্তু যতদিন না পর্যন্ত সুরাহা হচ্ছে, আমি এখানে থেকে যাব। এত বছর চাকরি করার পরেও যদি আমাদের সম্মানহানি হয়, তা আমরা মেনে নেব না।”

বিক্ষোভরত শিক্ষকদের মধ্যে অনেকেই এই আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে নানা সৃজনশীল কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন। স্বর্ণালী চক্রবর্তী নামে এক শিক্ষিকা বলেন, “ছবির মাধ্যমে আমাদের দাবি মানুষের সামনে তুলে ধরছি। পাশাপাশি, ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত আরও নানা কর্মসূচি হবে, আমরা রাজপথ ছাড়ছি না।”

বৃন্দাবন ঘোষ নামে এক শিক্ষক বলেন, “সিবিআই যে অযোগ্যদের বাদ দিয়ে বিভাজন করেছে, সেটি স্পষ্ট। কিন্তু এসএসসি কেন এই বিভাজন তথ্য সুপ্রিম কোর্টে উপস্থাপন করছে না? এসএসসি যদি আরও ভালো আইনজীবী নিয়োগ করে তথ্য সঠিকভাবে তুলে ধরতে পারে, তাহলে দ্রুত সমাধান সম্ভব। না হলে সুপ্রিম কোর্টের তত্ত্বাবধানে কমিশন গঠন করা হোক।”

এদিকে, আগামী ২ জানুয়ারি স্কুল খুললেও শিক্ষকরা জানিয়েছেন যে, তাঁরা স্কুলে যাবেন না। বৃন্দাবন বলেন, “আমরা স্কুলে নয়, রাজপথেই থাকব। প্যানেলে যোগ্যদের চাকরি নিশ্চিত করতে হবে, অন্যথায় আমাদের আন্দোলন চলতেই থাকবে।”

এভাবে, নতুন বছরের শুরুতে রাজপথে শীতের মধ্যেও আন্দোলন চালিয়ে যেতে তাঁরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের এই অবস্থান শুধু তাদের চাকরির নিরাপত্তার জন্য নয়, বরং দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় যোগ্যতার ভিত্তিতে সঠিক মূল্যায়নের দাবিতে একটি বড় আন্দোলন হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে।

Read more

Local News