Monday, December 1, 2025

“যুদ্ধ কি সব বদলে দেবে?”—নিরাপত্তা মহড়ায় স্কুলে প্রশ্ন উঠল পড়ুয়াদের কণ্ঠে

Share

নিরাপত্তা মহড়ায় স্কুলে প্রশ্ন উঠল পড়ুয়াদের কণ্ঠে!

কাশ্মীরে পর্যটকদের উপর জঙ্গি হামলার পরে দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে যুদ্ধের আশঙ্কা। এই পরিস্থিতিতে কলকাতার চারটি স্কুলে বুধবার অনুষ্ঠিত হল বিশেষ নিরাপত্তা মহড়া—শুধু নিয়মমাফিক প্রশিক্ষণ নয়, শিশুদের মনে যুদ্ধ আর শান্তি নিয়ে তৈরি হল বহু প্রশ্ন।

সকাল থেকেই এক অন্য রকম উত্তেজনা চারদিকে। প্রথম মহড়া শুরু হয় রিজেন্ট পার্কের ‘দ্য ফিউচার ফাউন্ডেশন স্কুল’-এ। তখনই পাক অধিকৃত কাশ্মীরে ভারতের প্রত্যাঘাতের খবর রটে গেছে, পড়ুয়ারাও নিজেদের মধ্যে আলোচনা শুরু করে দিয়েছে—কে কী ভিডিয়ো দেখেছে, কার ফোনে কোন খবর এসেছে।

তার ঠিক পরেই বাজে স্কুলের ঘণ্টা। আগেই শিক্ষক-শিক্ষিকারা জানিয়ে দিয়েছিলেন—সাইরেন বাজলেই সঙ্গে সঙ্গে মাথা বাঁচিয়ে মাটিতে বসে পড়তে হবে। আশপাশে টেবিল বা বেঞ্চ থাকলে তার নিচে আশ্রয় নিতে হবে। সেই মতোই সবার কানে হাত দিয়ে বেঞ্চের নীচে বসে পড়ে তারা। প্রধান শিক্ষিকা সুচন্দ্রা লাহা বলেন, “আমরা চাই ওরা ভয় না পেয়ে সচেতন হোক। আত্মরক্ষার শিক্ষা আজকের দিনে সবচেয়ে প্রয়োজনীয়।”

এরপর একে একে মহড়া হয় মিন্টো পার্কের লা মার্টিনিয়ার ফর বয়েজ এবং ফর গার্লস স্কুলে। বেলা ১১টা ২০ মিনিটে ঘণ্টা বাজতেই ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়ারা টেবিলের নীচে আশ্রয় নেয়। কেউ মুখ ঢাকে, কেউ কানে হাত চেপে বসে থাকে। পরে সবাইকে স্কুল মাঠে নিয়ে গিয়ে অগ্নি নির্বাপণ এবং প্রাথমিক চিকিৎসার কৌশল শেখানো হয়। চিকিৎসক সন্দীপ সরকার দেখান, দুর্ঘটনার পর কীভাবে বন্ধুকে সাহায্য করতে হয়।

এক শিক্ষিকা পুরনো স্কুল ভবনের ছোট কুঠুরিগুলি দেখিয়ে বলেন, “প্রয়োজনে এখানে আশ্রয় নেওয়া যেতে পারে।” তখনই এক পড়ুয়া বলে ওঠে, “এই ঘরে ঢুকে থাকলেই যদি মাথা বাঁচে, তাহলে যুদ্ধ বন্ধ না করলেই হয়?” শিশুর সেই সরল কিন্তু গভীর প্রশ্নে চুপ করে যান শিক্ষকরা।

বেলা সাড়ে ১২টার সময় একই ধরণের মহড়া হয় গার্লস স্কুলেও। নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার পাশাপাশি ক্লাসরুমে ফেরার পর বেঞ্চের নিচে কেমনভাবে বসতে হয়, তা ফের একবার দেখানো হয়। এ সময়ই এক পড়ুয়া বলে ওঠে, “বেঞ্চের নিচে বসে কি সত্যিই মাথা বাঁচবে? তার চেয়ে যুদ্ধটাই বন্ধ করলে হয় না!”

ডিপিএস রুবি পার্কে আবার মহড়ায় অংশ নেয় এনসিসি-র অষ্টম ও নবম শ্রেণির পড়ুয়ারা। কনফারেন্স রুমে হাতেকলমে দেখানো হয় কীভাবে সাইরেন শোনার সঙ্গে সঙ্গে আলো নিভিয়ে, দরজা-জানলা বন্ধ করে আশ্রয় নিতে হয়। বাকি পড়ুয়াদের জন্য ছিল প্রেজেন্টেশন ও ভিডিয়ো।

দ্বাদশ শ্রেণির এক ছাত্রী বলল, “আমরা যুদ্ধ চাই না। সন্ত্রাসবাদ নিশ্চিহ্ন হোক, কিন্তু তার মানে এই নয় যে আমাদের জীবনটাই বদলে যাবে!”
স্কুলের প্রিন্সিপাল জয়তী চৌধুরীর কথায়, “পড়ুয়ারা দারুণভাবে সাড়া দিয়েছে। ওরা এখন অনেক বেশি সচেতন। আজকের দিনে প্রস্তুতি ও মানসিক স্থিতি—এই দু’টোই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।”

এই মহড়াগুলির মাধ্যমে যেমন নিরাপত্তা বিষয়ে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে, তেমনই উঠে আসছে পড়ুয়াদের মন থেকে আসা কিছু অমূল্য প্রশ্ন—যুদ্ধ কি সত্যিই প্রয়োজন? আর সে প্রশ্নই সমাজের কাছে এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা হয়ে উঠছে।

অপারেশন সিঁদুর: ভারতীয় প্রতিআক্রমণে মাসুদ আজ়হারের বোন-সহ পরিবারের ১০ জন নিহত

Read more

Local News