যুদ্ধের আতঙ্কে কাঁপছে পাকিস্তান!
পহেলগাঁও হামলার পর ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের পারদ ক্রমশ চড়ছে। সীমান্তে যুদ্ধাবস্থা তৈরি হওয়ার ইঙ্গিতেই আতঙ্ক ছড়িয়েছে পাকিস্তান জুড়ে। এমন পরিস্থিতিতে এক চাঞ্চল্যকর দাবি সামনে এসেছে—গোটা পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে চলছে গণইস্তফার ঢল! সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনিরকে উদ্দেশ করে লেখা একটি চিঠি সমাজমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে, যেখানে দু’দিনে দেড় হাজারের বেশি অফিসার ও জওয়ান চাকরি ছেড়েছেন বলে দাবি করা হয়েছে।
এই চিঠিতে ১২ নম্বর কোর কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওমর আহমেদ বোখারির নাম রয়েছে এবং তাতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ—বালোচিস্তান, উত্তরাঞ্চল ও মঙ্গলা অঞ্চলের বহু সেনা সদস্য, যাঁরা মূলত আফগান সীমান্তে মোতায়েন, তারা ইস্তফা দিয়েছেন। শুধু কোয়েটাতেই ১২০ জন অফিসার ও ৪০০ জন জওয়ান বাহিনী ছেড়েছেন বলে জানা যাচ্ছে। মঙ্গলার এক নম্বর কোরে চাকরি ছেড়েছেন আরও ৫৫০ জন। এতে প্রভাব পড়ছে মাউন্টেন ব্যাটেলিয়ন, মেকানাইজড ইনফ্যান্ট্রি ও গোলন্দাজ বাহিনীতে।
চিঠিতে ইস্তফার মূল কারণ হিসেবে ভারতের সঙ্গে সম্ভাব্য যুদ্ধ, পারিবারিক চাপ এবং বাহিনীর ভেঙে পড়া মনোবলকেই দায়ী করা হয়েছে। যদিও ইসলামাবাদ এই চিঠির সত্যতা স্বীকার করেনি। উলটে সরকার ও সেনার তরফে মুখে কুলুপ এঁটে দেওয়া হয়েছে।
এর মধ্যেই জেনারেল মুনিরকে নিয়ে তৈরি হয়েছে আর এক গুঞ্জন। পহেলগাঁও কাণ্ডের পরে তিনি প্রকাশ্যে আসেননি বলে দাবি করা হয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, তিনি হয়ত রাওয়ালপিন্ডির একটি বাঙ্কারে আত্মগোপন করেছেন। আবার কারও মতে, কোনও অভিযানে গিয়ে নিখোঁজ হয়ে পড়েছেন, তাই তাঁকে ‘মিসিং ইন অ্যাকশন’ (MIA) ঘোষণা করেছে সেনা সদর দফতর। যদিও এই সমস্ত গুজব ভেঙে দিতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর দফতর ২৬ এপ্রিল একটি ছবি প্রকাশ করে, যেখানে মুনিরকে প্রধানমন্ত্রীর পাশে বসে থাকতে দেখা যায়।
এই ঘটনাগুলির মাঝে, সেনার মনোবল রক্ষায় পাক সেনার আইএসপিআর শাখা একটি উপদেশমূলক নির্দেশ জারি করেছে। সেখানে সমস্ত র্যাঙ্কের সেনাদের জাতির প্রতি আনুগত্য বজায় রাখতে বলা হয়েছে।
পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খোয়াজা আসিফও রয়টার্সকে জানান, “আমরা পরিস্থিতি অনুযায়ী কৌশলগত সিদ্ধান্ত নিচ্ছি। বাহিনীকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। দেশের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়লে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের কথাও ভাবা হতে পারে।”
অন্য দিকে, পাকিস্তানে রাজনৈতিক মহলে উত্তেজনার আঁচ টের পাওয়া যাচ্ছে। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ বর্তমান প্রধানমন্ত্রী তথা ভাই শাহবাজ শরিফকে ভারতকে শান্ত রাখার পরামর্শ দিয়েছেন বলে খবর।
উল্লেখ্য, এর আগেও মার্চে বালোচিস্তানে জ়াফর এক্সপ্রেস অপহরণের ঘটনার পরে সেনায় ইস্তফার খবর উঠে এসেছিল। সেই সময়ও রাওয়ালপিন্ডির শীর্ষ মহল বিষয়টি এড়িয়ে গিয়েছিল। এবারও একই চিত্র।
সেনা ও প্রশাসনের এই চুপিসারে চলা সংকটের মধ্যে প্রশ্ন উঠছে—পাকিস্তানের শীর্ষ নেতৃত্ব আদৌ প্রস্তুত কি না সামনে আসা যুদ্ধের সম্ভাবনার মোকাবিলায়? অভ্যন্তরীণ ভাঙনের মুখে দাঁড়িয়ে থাকা পাকিস্তান কি পারবে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক দুনিয়ায় নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে?