যুদ্ধবিমানের অনুপাত ১২ বনাম ১
চিনের বায়ুসেনার শক্তি বৃদ্ধি আজকের দিনেও বিশ্ব রাজনীতিতে অন্যতম আলোচনার বিষয়। পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় চিনের যুদ্ধবিমানের সংখ্যা যে দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে, তা আমেরিকার জন্য গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সম্প্রতি, যুক্তরাষ্ট্রের ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডগ উইকার্ট একটি সরকারি অনুষ্ঠানে এই আশঙ্কার কথা তুলে ধরেছেন।
চিনের অগ্রগতি
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল উইকার্ট জানিয়েছেন, কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে যুদ্ধবিমানের সংখ্যা বৃদ্ধির নিরিখে চিন ২০২৭ সালের মধ্যে আমেরিকার থেকে ১২ গুণ এগিয়ে থাকবে। তাঁর মতে, এই পরিস্থিতি আগ্রাসী চিনকে মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে আমেরিকার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।
যুদ্ধবিমান ও সমুদ্র নজরদারি
চিন ইতিমধ্যেই সমুদ্রে নজরদারির ক্ষেত্রে আমেরিকাকে ছাড়িয়ে গেছে। পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ)-র ২২৫টি বোমারু বিমান পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে কার্যত অপ্রতিদ্বন্দ্বী। বিমানবাহী রণতরী, উভচর যুদ্ধজাহাজ এবং ডুবোজাহাজের মাধ্যমে চিন তার সামুদ্রিক শক্তি আরো শক্তিশালী করে তুলছে।
ষষ্ঠ প্রজন্মের যুদ্ধবিমান
২০২৪ সালের ডিসেম্বরে চিন প্রথমবার ষষ্ঠ প্রজন্মের যুদ্ধবিমান ‘জে-৩৬’ উন্মোচন করে। এই তিন ইঞ্জিন বিশিষ্ট যুদ্ধবিমান অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে সজ্জিত এবং এটি শত্রুর রাডারে ধরা পড়ে না। বিমানটির উন্নত গতি, দীর্ঘ সময় আকাশে থাকার ক্ষমতা, এবং হাতিয়ার বহন করার সক্ষমতা আমেরিকা এবং রাশিয়ার বর্তমান যুদ্ধবিমানগুলির তুলনায় অনেক বেশি।
আমেরিকার জবাব
চিনের এই অগ্রগতির বিরুদ্ধে আমেরিকাও পিছিয়ে নেই। ষষ্ঠ প্রজন্মের যুদ্ধবিমান তৈরির লক্ষ্যে লকহিড মার্টিন ‘নেক্সট জেনারেশন এয়ার ডমিন্যান্স’ (এনজিএডি) প্রকল্পে কাজ করছে। তবে, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল উইকার্ট স্বীকার করেছেন যে সংখ্যার দিক থেকে আমেরিকা চিনের থেকে অনেক পিছিয়ে।
তাইওয়ানের পরিস্থিতি
২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে মহড়ার নামে চিন তাইওয়ান ঘিরে ফেলে, যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বৃহত্তম সামরিক প্রদর্শন হিসেবে ধরা হয়। পিএলএ-র অংশগ্রহণে মহড়ার সময় চিন প্রায় তিনগুণ বেশি যুদ্ধজাহাজ ব্যবহার করে। এই ধরনের কার্যকলাপ তাইওয়ানের উপর চাপ সৃষ্টি করে এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ভারসাম্যকে প্রভাবিত করে।
সাইবার গুপ্তচরবৃত্তি
চিনের সাইবার গুপ্তচরবৃত্তি নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল উইকার্ট। তিনি জানান, চিনের গুপ্তচরেরা আমেরিকার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার অনেক গোপন তথ্য হাতিয়ে নিয়েছে। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এফবিআই একটি বড় হ্যাকিং মডিউল নষ্ট করে, যেখানে ক্যামেরা, ভিডিও রেকর্ডার এবং দুই লক্ষের বেশি ম্যালওয়্যার ব্যবহার করা হয়েছিল।
পরিণতি
চিনের সামরিক শক্তি বৃদ্ধি এবং আমেরিকার প্রতিক্রিয়া বর্তমানে বৈশ্বিক রাজনীতির একটি জটিল অধ্যায় হয়ে উঠেছে। যুদ্ধবিমানের সংখ্যা এবং প্রযুক্তিগত উন্নয়নে চিন যেভাবে এগিয়ে চলেছে, তা শুধু আমেরিকার জন্য নয়, বরং গোটা বিশ্বের নিরাপত্তা পরিস্থিতির জন্যও চিন্তার কারণ।