পরিবার ও সম্পর্ক নিয়ে অ্যান্ড্রু ও’হেগানের সাহিত্যে বক্তব্য
ব্রিটিশ লেখক অ্যান্ড্রু ও’হেগান, যিনি স্কটল্যান্ডে বসবাস করেন, তাঁর সাহিত্যে অন্দরমহলের অস্থিরতা বারবার উঠে এসেছে। তার লেখায় পরিবার, সম্পর্ক, এবং জীবনের নানা উত্থান-পতন উঠে আসে, যা সাধারণত ব্যক্তিগত জীবনে কেউ প্রকাশ করতে চান না। কিন্তু অ্যান্ড্রু তেমন সমস্ত বিষয় নিয়ে সাহিত্যে লিখে ফেলেছেন। সম্প্রতি, ‘জয়পুর লিটারেচার ফেস্টিভ্যাল’-এ উপস্থিত হয়ে আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে এক আড্ডায় তিনি এসব নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করেছেন।
অ্যান্ড্রু তাঁর প্রথম বইতেই নিজের বাবা সম্পর্কে কথা বলেছেন। তবে, সে সব কথা সবসময় সুখকর ছিল না। তিনি জানিয়েছেন, ‘‘সব কিছুই তো মিষ্টি বা ভাল না, তবে বাস্তবতার কাছাকাছি তো ছিল।’’ সেখান থেকেই তাঁর লেখায় আসা শুরু হয় পরিবারের অন্দরমহলের কথা, সম্পর্কের নানা জটিলতা। কিন্তু এগুলো নিয়ে অনেকেই সরাসরি কথা বলতে চান না, অথচ অ্যান্ড্রু সেইসব বিষয় নিয়ে লেখেন। তিনি বলেছেন, ‘‘যা কিছু লেখা হয়, সবই তো ঘটে। আমরা অনেক সময় তা মেনে নাও নিতে পারি, কিন্তু তা ঘটেই যায়।’’
এবার প্রশ্ন উঠে আসে—সাহিত্য কি সবসময় সত্য ঘটনা তুলে ধরে? কিংবা কল্পনার কতটা জায়গা রয়েছে লেখায়? অ্যান্ড্রু এই বিষয়ে বলেন, ‘‘লেখা মানে শুধু সাহিত্য নয়। সেটা হতে পারে সংবাদ প্রতিবেদন, স্মৃতিচারণ বা উপন্যাস। সবকিছুই এক ধরনের সময়ের গল্প বলে, আর তা আদতে সত্যিই।’’ তাঁর মতে, লেখায় যে কোনও ঘটনা বা অনুভূতির প্রকাশ করা হয়, তা এক সময়ে ঘটে এবং সেই সময়ে সেটি সঠিক।
অ্যান্ড্রু তাঁর বাবার মাদকাসক্তির বিষয়টি নিয়ে আবার আলোচনা শুরু করেন। তিনি জানান, তাঁর শৈশব ছিল নানা সমস্যার মধ্য দিয়ে, কিন্তু সেই অভিজ্ঞতা লুকিয়ে রাখা কোনোভাবেই তার কাছে সঠিক মনে হয়নি। ‘‘আমরা যেটা জানি, সেটাই প্রকাশ্যে আনা উচিত। না বললে, নিজের অভিজ্ঞতার অনেকটাই আড়ালে চলে যায়।’’ অ্যান্ড্রুর ভাষ্য অনুযায়ী, ‘‘আমাদের চারপাশে যা ঘটে, সেটাই আমাদের অভিজ্ঞতা। আর এসব না বললে আসলে আমাদেরই সত্যটা লুকিয়ে রাখতে হবে।’’ তাঁর মতে, এমন জীবন কেমন যেখানে আপনি নিজের সত্যই প্রকাশ করতে পারেন না?
শুধু পরিবার নিয়ে নয়, অ্যান্ড্রু নিজের কর্মজীবনেও আলাপ হওয়া মানুষদের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়েও লিখেছেন। ২০১৪ সালে তাঁর একটি বই ‘ঘোস্টিং’ প্রকাশিত হয়, যেখানে তিনি তার কাজের জীবনের সম্পর্কের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেছেন। এই বিষয়ে তিনি বলেন, ‘‘এটা আমার নিজস্ব অভিজ্ঞতা। আমি যা অনুভব করি, তা-ই লিখি। সত্যি বললে তো কোনো সমস্যা নেই, কেন আমাদের এসব নিয়ে চুপ থাকতে হবে?’’
অ্যান্ড্রু বিশ্বাস করেন, ‘‘যতই সম্পর্ক মধুর হোক না কেন, সব সময়েই তা থাকে না। সম্পর্কের মধ্যেই অনেক উত্থান-পতন থাকে।’’ এই কারণেই, তিনি মনে করেন, ‘‘বিশ্বের সবচেয়ে বেশি উৎসাহ রয়েছে মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ে। এই বিষয়েই মানুষের বেশি আগ্রহ থাকে।’’
তিনি আরও জানান, ‘‘যারা নিজেদের জীবনের কথা বলে, সম্পর্কের কথা বলে, তারা যে সাধারণ মানুষের মতোই, সেটাই তো স্বাভাবিক। আমি তো সেভাবেই লিখি।’’ অ্যান্ড্রু’র এই কথাগুলি তার সাহিত্যের মধ্যে এক গভীরতা এবং বাস্তবতার পরিচয় দেয়।
শাড়ি-পাঞ্জাবিতে অঞ্জলি, দুরুদুরু বুকে প্রেমপ্রস্তাব, বসন্ত-বিলাস, আফসোস আর সরস্বতী বন্দনা