যাদবপুরে র্যাগিং-মৃত্যু
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন হস্টেলে র্যাগিংয়ের ঘটনায় এক ছাত্রের মর্মান্তিক মৃত্যুতে নতুন মোড় নিল। নদিয়া জেলার মফস্সল থেকে কলকাতায় স্নাতক শিক্ষার জন্য আসা ওই ছাত্রটির বয়স ছিল আঠারোরও কম। হস্টেলের তেতলা থেকে পড়ে মৃত্যুর পর, তার মৃত্যুর ঘটনাটি আরও গভীর তদন্তের দিকে পরিচালিত হয়েছে। বর্তমানে, পকসো কোর্টে ১৩ জন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে বিচার প্রক্রিয়া চলছে। এ ঘটনায় অভিযুক্তদের জামিন আবেদনের শুনানি নিয়ে কলকাতা হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ সোমবার তাদের জামিন নাকচ করে দিয়েছে।
হাই কোর্টের বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বিচারপতি অপূর্ব সিংহরায়ের বেঞ্চ এই মামলার তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহের কাজ শেষ করতে ছ’মাস সময় দিয়েছেন। বেঞ্চের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ছ’মাসের মধ্যে তদন্তকারীরা তথ্য সংগ্রহের কাজ সম্পন্ন করবেন এবং পরে অভিযুক্তরা জামিনের জন্য আবেদন করতে পারবেন। আদালত জানিয়েছে, র্যাগিংয়ের মতো গুরুতর অপরাধের জন্য অভিযুক্তদের জামিন দেওয়া উচিত নয়, কেননা এটি একটি সমাজের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক এবং অগ্রহণযোগ্য অপরাধ।
মৃত ছাত্রের আইনজীবী নভোনীল দে জানান, কলকাতা পুলিশের সিট (স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম) ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছে এবং আগামী ছ’মাসের মধ্যে তারা সকল তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহের কাজ শেষ করবে। তিনি আরও বলেন, “র্যাগিং একটি গুরুতর অপরাধ, যা ছাত্রদের মানসিক এবং শারীরিক ক্ষতি করতে পারে, এমনকি মৃত্যুর কারণও হতে পারে। এই ধরনের অপরাধের জন্য অভিযুক্তদের জামিন না হওয়া উচিত।”
অন্যদিকে, অভিযুক্ত অঙ্কন সরকারের আইনজীবী অনির্বাণ গুহঠাকুরতা জানান, তাঁর ক্লায়েন্ট সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ফাইনাল ইয়ারের ছাত্র এবং জামিন না পাওয়া তাঁর পড়াশোনায় ক্ষতি করছে। কিন্তু আদালত জানিয়েছে, র্যাগিং পুরোপুরি বন্ধ হওয়া উচিত এবং যে কোনও প্রকারের র্যাগিং ঘটনার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের কঠোর শাস্তির মুখোমুখি হওয়া উচিত।
এই ঘটনায় আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক উঠে এসেছে, তা হল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে র্যাগিং একটি পুরনো সমস্যা। অভিযুক্তদের আইনজীবীরা দাবি করেছেন, র্যাগিং একটি দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে প্রচলিত। তারা বলেন, “আজ যারা র্যাগিং-এর জন্য অভিযুক্ত, তারা নিজেরাও একসময় র্যাগিংয়ের শিকার হয়েছেন। এটি একটি প্রচলিত ব্যবস্থা, যার পরিবর্তন প্রয়োজন।” তবে আদালত এই বক্তব্যে কোনো সমর্থন দেয়নি এবং ব্যক্তির ভূমিকা থেকেই র্যাগিংয়ের দায় নির্ধারণ করা হয়েছে।
মৃত ছাত্রটির পরিবারও এই সময় হাই কোর্টে উপস্থিত ছিল। তার বাবা আদালতে জানান, তার ছেলের জীবন কেড়ে নেওয়া এই ঘটনা কখনোই ক্ষমা করা যায় না। তিনি দ্রুত বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে এবং অভিযুক্তদের উপযুক্ত শাস্তি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
বর্তমানে, পকসো কোর্টে এই মামলায় ১৩ জন অভিযুক্তের বিচার চলছে, কিন্তু এখনও ১৫ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ বাকি রয়েছে। আইনজীবীদের অনেকের মতে, যদি অভিযুক্তদের জামিন দেওয়া হয়, তবে বিচার প্রক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তদন্তের পরবর্তী পর্যায়ে, যদি তথ্যপ্রমাণ পর্যাপ্ত না হয়, তবে মামলা আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে।
এই ঘটনাটি বিশ্ববিদ্যালয়ে র্যাগিং-এর বিরুদ্ধে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেয়। র্যাগিং শুধু শিক্ষার্থীদের শারীরিক এবং মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে না, এটি ছাত্রদের শিক্ষাজীবনকে অন্ধকারে ঠেলে দেয়, এবং কখনো কখনো তাদের জীবনও কেড়ে নিতে পারে।
এইচএমপিভি কোনও নতুন ভাইরাস নয়, দেশবাসীকে আশ্বস্ত করলেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী