যন্ত্র যখন মনের গোপন কথাও পড়ে ফেলে!
মনের কথা মুখে না বলেও যদি কেউ পড়ে ফেলতে পারে, কেমন লাগবে? বিজ্ঞান কল্পকাহিনির মতো শোনালেও, সাম্প্রতিক এক গবেষণায় সেই সম্ভাবনার ইঙ্গিত মিলেছে। মানুষের মস্তিষ্কে বসানো একটি বিশেষ ইলেকট্রনিক চিপের মাধ্যমে মনে মনে ভাবা শব্দ বা বাক্যও প্রায় নির্ভুলভাবে লিখে দিতে সক্ষম হয়েছে কম্পিউটার। এই অভাবনীয় সাফল্য ইতিমধ্যেই বিজ্ঞানমহলে আলোড়ন তুলেছে।
সম্প্রতি প্রকাশিত গবেষণায় দেখা গিয়েছে, কথা বলার ক্ষমতা পুরোপুরি হারিয়ে ফেলা কয়েকজন রোগীর উপর পরীক্ষা চালানো হয়েছিল। বিশেষত এএলএস রোগে আক্রান্ত রোগীরা, যাঁদের মধ্যে একসময় ছিলেন মহাবিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং-ও। এই প্রযুক্তির লক্ষ্য ছিল—মুখে উচ্চারণ ছাড়াই তাঁদের মনের ভাব প্রকাশ করা সম্ভব করা।
গবেষণার পদ্ধতি ছিল অভিনব। রোগীদের মাথায় প্রতিস্থাপিত চিপ তাঁদের স্নায়ুর সিগন্যাল সংগ্রহ করে তা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে কম্পিউটারে পৌঁছে দেয়। উদাহরণস্বরূপ, যদি কেউ মনে মনে বলেন—‘আপেল’, তবে যন্ত্র সেই ভাবনাকে ডিকোড করে স্ক্রিনে লিখে দেয় ঠিক সেই শব্দটাই। শুধু একক শব্দ নয়, পরবর্তীতে অংশগ্রহণকারীদের মনে মনে সম্পূর্ণ বাক্য ভাবতেও বলা হয়েছিল। আশ্চর্যের বিষয়, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কম্পিউটার তা যথাযথভাবে ধরে ফেলেছে।
স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক এরিন কুনজ জানিয়েছেন, পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী এক রোগী প্রায় ছ’হাজার শব্দ মনে মনে ভেবে সঠিকভাবে প্রকাশ করতে পেরেছেন যন্ত্রের সাহায্যে। গবেষকদল জানান, ভাষা ও ভাবনা একে অপরের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কোনও কিছু ভাবার অর্থই আসলে তাকে শব্দে প্রকাশ করা—যদিও তা মুখে বলা না-ও হতে পারে।
তবে প্রশ্ন উঠেছে—যন্ত্র কি মানুষের গভীরতম গোপন চিন্তাও পড়তে পারবে? বিজ্ঞানীদের মতে, এখনই তা সম্ভব নয়। কেউ স্বেচ্ছায় অনুমতি দিলে, নির্দিষ্ট সংকেত বা ‘পাসওয়ার্ড’-এর মাধ্যমে তাঁর মনের ভাব পড়া সম্ভব হচ্ছে। পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের কাউকে একটি নির্দিষ্ট শব্দবন্ধ বারবার ভাবতে বলা হয়েছিল। যন্ত্র সেটিকে ‘পাসওয়ার্ড’ হিসেবে চিনে নিয়েছিল। সেই শব্দের সঙ্গে সঙ্গেই অংশগ্রহণকারীর মনের দরজা খুলে গিয়েছে বলে ধরে নিয়ে বাকিটুকু পড়েছে যন্ত্র।
তবে সীমাবদ্ধতাও রয়ে গিয়েছে। যেমন, যখন রোগীদের বলা হয়েছিল ছোটবেলার প্রিয় বন্ধুর কথা ভাবতে, যন্ত্র স্পষ্ট কোনও উত্তর দিতে পারেনি। গবেষকদের মতে, এমন প্রশ্নে মনের ভেতরে একাধিক স্মৃতি ও ছবি একসঙ্গে ভিড় করে, তাই যন্ত্র বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে।
অস্ট্রেলিয়ার গবেষক মার্কাস ব্রাউন মনে করেন, এই অগ্রগতি আশার আলো দেখাচ্ছে। তাঁর মতে, রোগীরা ঠিক যতটুকু চাইবেন, ভবিষ্যতে প্রযুক্তি কেবল ততটুকুই পড়তে সক্ষম হবে। অন্যদিকে নেদারল্যান্ডসের বিজ্ঞানী ক্রিস্টান হার্ফের পর্যবেক্ষণ, এই গবেষণা শুধু প্রযুক্তিগত দিক নয়, বরং ভাষা ও চিন্তার সম্পর্ক সম্পর্কেও নতুন দৃষ্টিভঙ্গি দিয়েছে।
এই সাফল্য ভবিষ্যতে নিঃশব্দ মানুষকে আবার ‘কণ্ঠ’ দিতে পারে। হয়তো আর দূরে নয় সেই দিন, যখন যন্ত্র শুধু আমাদের বলা কথা নয়, মনের নীরব ভাবনাকেও প্রকাশ করতে পারবে—কিন্তু মানুষের ইচ্ছাই ঠিক করে দেবে, কতটুকু মন পড়ার অধিকার থাকবে সেই যন্ত্রের।
বাচ্চার পছন্দের বার্গার ও পিৎজ়া, তবে স্বাস্থ্যকর করে কেমন করে তুলবেন?

