Monday, December 1, 2025

মৌনী অমাবস্যায় মহাকুম্ভে শোকের ছায়া: পদপিষ্ট হয়ে বহু মৃত্যুর আশঙ্কা

Share

মহাকুম্ভে শোকের ছায়া

মৌনী অমাবস্যার পুণ্যস্নানকে কেন্দ্র করে মহাকুম্ভে ঘটল মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। বুধবার প্রয়াগরাজের ত্রিবেণী সঙ্গমে গঙ্গা, যমুনা ও অন্তঃসলিলা সরস্বতীর মিলনস্থলে ‘অমৃত স্নান’-এর জন্য তীর্থযাত্রীদের ব্যাপক ভিড় জমেছিল। অতিরিক্ত ভিড় এবং হুড়োহুড়ির ফলে পদপিষ্ট হয়ে বহু মানুষের মৃত্যুর আশঙ্কা করা হচ্ছে। আহত হয়েছেন আরও অনেকে। পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রশাসন র‍্যাফ মোতায়েন করেছে।

পুণ্যস্নানের আবেগ থেকে ভয়াবহ দুর্ঘটনা

প্রতি বছর মৌনী অমাবস্যায় কুম্ভমেলায় কোটি কোটি তীর্থযাত্রী সমবেত হন পবিত্র স্নান করার জন্য। বুধবার সেই ঐতিহ্যবাহী স্নানের জন্য দূরদূরান্ত থেকে লক্ষ লক্ষ মানুষ আসেন প্রয়াগরাজে। কিন্তু অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে একসময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।

প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, স্নানের জন্য আগত তীর্থযাত্রীরা ব্যারিকেড ঠেলে সামনে এগোনোর চেষ্টা করছিলেন। আচমকা ধাক্কাধাক্কি শুরু হলে অনেকেই ভিড়ের চাপে পড়ে যান। মুহূর্তের মধ্যেই সেখানে হাহাকার শুরু হয়।

আহত ও মৃতদের উদ্ধারে প্রশাসনের তৎপরতা

দুর্ঘটনার পরপরই উদ্ধারকাজ শুরু হয়েছে। আহতদের ঘটনাস্থলেই চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে, অনেককে আশপাশের হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। মেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে কয়েকজনকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। যদিও সঠিক সংখ্যা এখনও স্পষ্ট নয়, তবে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, রাতে অতিরিক্ত ভিড় সামলাতে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল, কিন্তু তা যথেষ্ট ছিল না। মেলা প্রাঙ্গণের একাধিক ব্যারিকেড ভেঙে যাওয়ায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে পড়ে।

রাত থেকেই বাড়তে থাকে বিপদের সংকেত

মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকেই প্রয়াগরাজে ভিড় বাড়তে থাকে। প্রশাসন মাইক্রোফোনে বারবার সতর্কবার্তা দিলেও বহু মানুষ ত্রিবেণী সঙ্গমের দিকে এগিয়ে আসতে থাকেন। রাত যত বাড়তে থাকে, পরিস্থিতি তত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।

প্রশাসন সূত্রে খবর, রাত ২টো নাগাদ হঠাৎই একাধিক ব্যারিকেড ভেঙে পড়ে, আর তারপরই শুরু হয় ভয়াবহ হুড়োহুড়ি। এর ফলে বহু তীর্থযাত্রী পদপিষ্ট হন। দ্রুত ঘটনাস্থলে অ্যাম্বুল্যান্স পৌঁছায়, তবে বিশাল জনস্রোতের কারণে উদ্ধারকাজে বাধা সৃষ্টি হয়।

এর আগেও ঘটেছে দুর্ঘটনা

এটাই প্রথম নয়, কয়েকদিন আগেও কুম্ভমেলায় বড় দুর্ঘটনা ঘটেছিল। গত ১৯ জানুয়ারি প্রয়াগরাজে কুম্ভমেলার এক তাঁবুতে ভয়াবহ আগুন লাগে। গীতা প্রেসের তাঁবু থেকে ছড়িয়ে পড়া আগুনে প্রায় ৫০টিরও বেশি তাঁবু ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরপর সিলিন্ডার বিস্ফোরণের শব্দও পাওয়া গিয়েছিল।

এবারের পদপিষ্টের ঘটনা সেই আতঙ্ককে আরও বাড়িয়ে তুলল। পরপর দুটি বিপর্যয় কুম্ভমেলার নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। এত বিশাল জনসমাগম সামলাতে প্রশাসন আদৌ প্রস্তুত কি না, তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।

কুম্ভমেলার নিরাপত্তা ব্যবস্থায় নতুন পরিকল্পনার দাবি

মহাকুম্ভ উপলক্ষে লক্ষ লক্ষ মানুষের ভিড় থাকায় প্রশাসন ইতিমধ্যেই অতিরিক্ত পুলিশ, র‍্যাফ ও দমকল বাহিনী মোতায়েন করেছে। মেলাপ্রাঙ্গণকে বিভিন্ন জোনে ভাগ করে নজরদারি চালানো হচ্ছে। কিন্তু বারবার দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ায় নিরাপত্তা ব্যবস্থার কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, কুম্ভমেলার মতো বিশাল আয়োজনে শুধুমাত্র পুলিশ ও প্রশাসনের ওপর ভরসা করলেই হবে না। জনসচেতনতা, নিয়ন্ত্রিত প্রবেশ ও বেরোনোর ব্যবস্থা আরও উন্নত করতে হবে।

ভবিষ্যৎ সতর্কতা ও করণীয়

এই ভয়াবহ দুর্ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে প্রশাসনকে আরও কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা নিতে হবে। অতিরিক্ত ভিড় সামলাতে ডিজিটাল টোকেন ব্যবস্থা, প্রবেশ ও প্রস্থানের জন্য আলাদা করিডর এবং আরও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের দাবি উঠছে।

এদিকে, পুণ্যার্থীদের অনুরোধ করা হয়েছে যাতে তারা গুজবে কান না দেন এবং প্রশাসনের নির্দেশনা মেনে চলেন। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে মহাকুম্ভের আরও বিশেষ স্নানের দিন রয়েছে, তাই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা আরও জোরদার করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।

এই ভয়াবহ দুর্ঘটনা কুম্ভমেলার পবিত্র আবহে শোকের ছায়া ফেলেছে। আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছে গোটা দেশ, আর যারা প্রাণ হারিয়েছেন, তাদের প্রতি রইল গভীর শোক।

ত্রিবেণী সঙ্গম থেকে পুণ্যার্থীদের সরাতে কঠোর পদক্ষেপ, ঘোড়সওয়ার পুলিশ নামাল যোগী সরকার

Read more

Local News