মেয়ের চরিত্রে ছেলেরা, আর সেই অভিনয়েই সমাজের আয়না!
কল্পনা করুন—এক স্কুলের পাঁচ বন্ধু মিলে একটি গল্প বলছে ‘অরুণ’ আর ‘সোনি’কে নিয়ে। সোনি স্কুলে যেতে ভয় পায়, কারণ ক্লাসে একমাত্র মেয়ে হওয়ার জন্য তাকে প্রতিদিনই অপমান, ঠাট্টা আর অস্বস্তিকর আচরণের শিকার হতে হয়। বন্ধুরা পাশে না থাকলেই আরও বাড়ে দুর্ব্যবহার। তাই স্কুলে যাওয়াই মন থেকে হারিয়ে ফেলেছে সোনি।
মঞ্চে নাটক, কিন্তু বাস্তবে শত শত মেয়ের গল্প এই একটাই। আর সেই গল্পই অভিনয় করছে যোধপুরপার্ক বয়েজ় স্কুলের ছাত্ররা—যাদের উদ্দেশ্য একটাই, সমাজকে চোখ খুলে দেওয়া।
🎭 মেয়ের চরিত্রে ছেলে—কিন্তু কেন?
সোনির চরিত্রে অভিনয় করছে নবম শ্রেণির ছাত্র অঙ্কিত হীরা। প্রথমে চরিত্রটি পেয়ে সে দ্বিধায় ছিল। কিন্তু চারপাশের খবরে প্রতিদিন নারী নির্যাতনের দৃশ্য তাকে ভাবিয়েছে আরও গভীরভাবে।
অঙ্কিতের কথায়,
“আরজি কর থেকে হাতরাস, মেয়েদের ওপর নির্যাতনের ঘটনা মন ভেঙে দেয়। চরিত্রটির মাধ্যমে আমি বুঝেছি মেয়েদের লড়াই কত কঠিন।”
পড়াশোনায় বিজ্ঞান বা বাণিজ্য নিতে চায় অঙ্কিত। তার সঙ্গীরাও বিভিন্ন বিষয়ে উচ্চশিক্ষা করতে চায়। কিন্তু এর পাশাপাশি সবাই নিজেদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে—যেখানেই নারী নির্যাতন দেখবে, রুখে দাঁড়াবে।
🎒 শুধু নাটক নয়—স্কুলের ভিতরেই লিঙ্গ সমতার পাঠ
যোধপুরপার্ক বয়েজ় স্কুলে লিঙ্গ সমতার শিক্ষা শুধু কথায় নয়, বাস্তবেও। স্কুলের প্রধান শিক্ষক অমিত সেন মজুমদার জানান—
“রঙেরও লিঙ্গ হয় না। তাই আমরা একাদশ–দ্বাদশ শ্রেণির ক্লাসরুম গোলাপি রঙ করেছি। এই ছোট্ট পরিবর্তনই ছেলেদের শেখায় পুরোনো ধারণা ভাঙতে।”
স্কুলে নিয়মিত হয় লিঙ্গ সমতা, সহমর্মিতা ও মানবিকতার নানা কর্মশালা। শেখানো হয়, মেয়েরা কোনও ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই—আর সমাজকে সম্মান করতে হলে আগে মনকে বদলাতে হয়।
🏆 জাতীয় মঞ্চে অভিনব বার্তা
এনসিইআরটি প্রতি বছর জেলা, রাজ্য ও জাতীয় স্তরে আয়োজন করে “ন্যাশনাল রোল প্লে” প্রতিযোগিতা। যেখানে পাঁচ জন ছাত্র মিলে ছোট্ট একটি নাটক মঞ্চস্থ করে।
এই বছর যোধপুরপার্ক বয়েজ় স্কুলের ছাত্ররা লিঙ্গসাম্যের বার্তা নিয়ে ৫ মিনিটের শক্তিশালী একটি নাটক দেখায়। সত্যিকার আবেগ আর বার্তা দর্শকদের হৃদয় ছুঁয়ে যায়।
ফল—
জেলাস্তরে সেরা! আগামী ২৬ নভেম্বর তারা নামছে রাজ্যস্তরে, আরও বড় মঞ্চে ছড়াবে নতুন হাওয়ার বার্তা।
তাদের গাইড, শিক্ষক বিশ্বজিৎ নন্দীর কথায়—
“এটি শুধু মেয়েদের অধিকার বা সমতার গল্প নয়। ঠিক–ভুল বোঝার শিক্ষা স্কুল থেকেই শুরু হলে, সমাজ আরও মানবিক হবে।”
🌟 শেষ কথা
যেখানে সমাজে এখনও রয়ে গেছে বহু বাঁধাধরা নিয়ম, সেখানে এক ঝাঁক কিশোর তাদের অভিনয় দিয়ে বলছে—
“সমতা মানে সমান সুযোগ, সমান শ্রদ্ধা।”
এই নাটক শুধু প্রতিযোগিতার জন্য নয়, বরং এক বাস্তব শিক্ষা—
যেখানে ভবিষ্যতের নাগরিকেরা বলছে,
“নারীর অসম্মান দেখলে আমরা নীরব থাকব না।”

