Sunday, May 18, 2025

মুম্বইয়ের র‍্যাম্প মাতালেন প্রসেনজিৎ-লিয়েন্ডার, স্বপ্নপূরণের গল্প বললেন অভিষেক

Share

মুম্বইয়ের র‍্যাম্প মাতালেন প্রসেনজিৎ-লিয়েন্ডার!

বাংলার পোশাকশিল্পী অভিষেক রায়ের জন্য ২০২৫ সালের ‘ল্যাকমে ফ্যাশন উইক’ ছিল স্বপ্ন সত্যি হওয়ার মুহূর্ত। আট বছর আগে যেখানে তাঁর আবেদন গৃহীত হয়নি, সেখান থেকেই এ বছর এল সরাসরি আমন্ত্রণ। আর এই মঞ্চেই তাঁর পোশাকে র‍্যাম্প কাঁপালেন বাংলার সুপারস্টার প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় এবং টেনিস কিংবদন্তি লিয়েন্ডার পেজ!

স্বপ্নযাত্রার শুরু

মুম্বইয়ের ফ্যাশন উৎসব মানেই তারকার মেলা। করিনা কাপুর, সুস্মিতা সেন থেকে শুরু করে দেশ-বিদেশের নামী ডিজাইনারদের উপস্থিতি থাকে এই আসরে। কিন্তু একসময় যেখানে অংশগ্রহণের সুযোগই পাননি, সেখানে এবার আমন্ত্রণ পেয়েই আপ্লুত হয়েছিলেন অভিষেক। কারণ, ফ্যাশন ডিজাইন কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়ার বার্ষিক এই আয়োজন একসময় সব্যসাচী মুখোপাধ্যায়ের মতো প্রতিভাকে বিশ্বদরবারে পরিচিত করেছিল।

বাংলার ঐতিহ্য বিশ্বমঞ্চে

অভিষেকের সম্ভার ছিল একেবারে ভিন্ন— ‘নওয়াবস অফ বেঙ্গল’। বাংলার নবাবি সংস্কৃতিকে আধুনিকতার মোড়কে উপস্থাপন করাই ছিল তাঁর লক্ষ্য। বাংলার জামদানি, জরদৌসি, ভেলভেট— সবই জায়গা পেয়েছে তাঁর ডিজাইনে। ধুতির ঐতিহ্য, মোগল শিল্পের ছোঁয়া, বাংলার সূক্ষ্ম হস্তশিল্প— সব মিলিয়ে এক অনন্য সম্ভার হাজির করেন তিনি। আর এই পোশাকেই র‍্যাম্প মাতালেন প্রসেনজিৎ ও লিয়েন্ডার।

বুম্বাদার সঙ্গে লিয়েন্ডারের উচ্ছ্বাস

প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, যিনি বাংলার সুপারস্টার, তিনিও এবারই প্রথম কোনো ফ্যাশন উইকের র‍্যাম্পে হাঁটলেন। ব্যস্ত শিডিউলের মাঝেও ১৯ ঘণ্টার টানা শুটের পর, মাত্র এক কাপ কফি খেয়েই অভিষেকের জন্য র‍্যাম্পে পা রাখেন তিনি! অন্যদিকে, লিয়েন্ডার পেজ নিজেই বলেছিলেন, “আমি তোমার শো ওপেন করতে পারি, চাইলে ভাবতে পারো।” অভিষেকের কাছে যেন স্বপ্নের মতো লাগছিল এই মুহূর্ত।

মঞ্চে অনামিকা খন্নার জয়যাত্রা

এই বছর ফ্যাশন উইকের সূচনা করেন কলকাতারই আরেক গর্ব, ডিজাইনার অনামিকা খন্না। নিজের নতুন ব্র্যান্ড ‘একে ওকে’-র উদ্বোধন করেন তিনি। মডেলদের রুপোর পোশাকে সাজিয়ে একেবারে রাজকীয় আবহ আনেন। শোস্টপার ছিলেন অনন্যা পাণ্ডে, আর যীশু সেনগুপ্তর মেয়ে সারাও ছিলেন অনামিকার এই অসাধারণ উপস্থাপনার অংশ। কলকাতা যেন সত্যিই আলো ছড়াল মুম্বইয়ের ফ্যাশন দুনিয়ায়।

শুধু প্রদর্শনী নয়, বিক্রিও হল বিশ্বদরবারে

শুধু র‍্যাম্প শো নয়, অভিষেকের পোশাকের আলাদা স্টল ছিল ফ্যাশন উইকে। দেশ-বিদেশের নামজাদা মানুষজন সেখানে এসে পোশাক দেখলেন, কিনলেন। আন্তর্জাতিক ফ্যাশন সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পেলেন তিনি। এটি শুধুমাত্র তাঁর কাজকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেল তাই নয়, বাংলার ঐতিহ্যকেও বিশ্ব দরবারে তুলে ধরল।

শেষ রাতের বিস্ময়

উৎসবের রজতজয়ন্তীর শেষ রাতে এক ছাদের তলায় হাজির ছিলেন ফ্যাশনের সব কিংবদন্তি। মণীশ মলহোত্রা, তরুণ তাহিলিয়ানি থেকে শুরু করে শান্তনু-নিখিল, ভারতীয় ফ্যাশন দুনিয়ার নক্ষত্ররা সবাই একসঙ্গে উপস্থিত ছিলেন এই বিশেষ মুহূর্তে। ক্যাল পেন ছিলেন শো-এর সঞ্চালক। ফ্যাশনের জগতে ইতিহাস গড়া মডেলদের আবারও র‍্যাম্পে দেখা গেল— লিজা রে, ইন্দ্রাণী দাশগুপ্ত, লিজা হেডনসহ আরও অনেকে।

শেষ মুহূর্তে অভিষেকসহ সমস্ত ডিজাইনাররা একসঙ্গে মঞ্চে এসে হাত ধরে দাঁড়ালেন— ভবিষ্যতের ফ্যাশন-যাত্রাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার শপথ নিয়ে।

একটি স্বপ্নের পূর্ণতা

অভিষেকের কাছে এই ফ্যাশন উইক শুধুমাত্র একটি শো ছিল না, ছিল দীর্ঘ আট বছরের অপেক্ষার ফল। যেখানে একসময় প্রত্যাখ্যাত হয়েছিলেন, সেখানেই এবার নিজের কাজ দিয়ে মুগ্ধ করলেন সবাইকে। প্রসেনজিৎ ও লিয়েন্ডারের হাত ধরে তাঁর ডিজাইন যখন মঞ্চ মাতাল, তখন বুঝলেন— পরিশ্রম কখনও বৃথা যায় না।

বাংলার ঐতিহ্য, মুম্বইয়ের র‍্যাম্প, আর এক শিল্পীর স্বপ্ন— সব মিলিয়ে এক স্মরণীয় অধ্যায় হয়ে রইল ‘ল্যাকমে ফ্যাশন উইক ২০২৫’।

প্রেমের ইঙ্গিত না গোপন বার্তা? দেবচন্দ্রিমার ‘জিবলি’ ছবিতে রহস্যময় প্রেমিক!

Read more

Local News