মিড-ডে মিলের বরাদ্দে সামান্য বাড়তি টাকা!
পেট ভরে না খেলে মন লাগে না পড়ায়—এই সত্যটা সকলেই জানেন। আর তাই স্কুলে শিশুদের পুষ্টি নিশ্চিত করতে চালু হয়েছিল মিড-ডে মিল প্রকল্প। কিন্তু আজকের বাজারদরে সেই খাবারের মান ও পরিমাণ কতটা বজায় রাখা সম্ভব, তা নিয়ে এবার ফের উঠছে প্রশ্ন। কারণ, কেন্দ্র সরকার মিড-ডে মিলের বরাদ্দ বাড়ালেও তা বাস্তবতার সঙ্গে অনেকটাই বেমানান বলে মনে করছেন শিক্ষামহলের একাংশ।
২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে কেন্দ্র প্রথম মিড-ডে মিলের বরাদ্দ বাড়িয়েছিল। তখন প্রাথমিক স্তরে মাথাপিছু বরাদ্দ ছিল ৬ টাকা ১৯ পয়সা এবং উচ্চপ্রাথমিকে ৯ টাকা ২৯ পয়সা। চলতি বছরে আবার সেই টাকায় কিছুটা বৃদ্ধি করা হয়েছে—প্রাথমিকের ক্ষেত্রে বেড়ে হয়েছে ৬ টাকা ৭৮ পয়সা, আর উচ্চপ্রাথমিকে ১০ টাকা ১৭ পয়সা।
সত্যি বলতে, টাকার অঙ্কে এই বৃদ্ধি যতই থাক, বাস্তবে তা কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। সাধারণ বাজারে যেখানে ডাল-চাল-তেল-পাচনের দাম ছুঁয়েছে আকাশ, সেখানে এই সামান্য টাকায় কীভাবে মানসম্মত ও পুষ্টিকর খাবার পরিবেশন করা সম্ভব?
শিক্ষকদের মতে কী?
বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডল স্পষ্ট ভাষায় বলেন, ‘‘চরম মূল্যবৃদ্ধির বাজারে এই বরাদ্দ কার্যকর হবে না।’’ তাঁর মতে, প্রাথমিক স্তরে মাথাপিছু কমপক্ষে ১০ টাকা এবং উচ্চপ্রাথমিকে ১৫ টাকা বরাদ্দ হওয়া উচিত।
তবে কেন্দ্রের এই পদক্ষেপকে পুরোপুরি খারিজ করছেন না কেউ। শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক কিঙ্কর অধিকারী এই উদ্যোগকে স্বাগত জানালেও, তিনিও মানছেন—এই অর্থে পুষ্টিকর আহার জোগানো দুরূহ। তাই বরাদ্দ আরও বাড়ানো প্রয়োজন।
কেবল খাবার নয়, রাঁধুনিদের অবস্থাও করুণ
শুধু শিশুদের খাবার নয়, মিড-ডে মিল প্রকল্পে যুক্ত থাকা রাঁধুনিদের অবস্থাও দুঃখজনক। দীর্ঘদিন ধরে তাঁদের ভাতা বৃদ্ধি হয়নি বলেই দাবি বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠনের। যাঁরা প্রতিদিন গরম গরম খাবার তৈরি করছেন, তাঁদেরই জীবিকা যেন অনিশ্চয়তায় ভরপুর।
শেষ কথা
ছোট্ট শিশুরা দিনের একটা বড় সময় কাটায় স্কুলে। তারা যদি ক্লান্ত পেটে ঘরে ফেরে, তাহলে সেই শিক্ষার সার্থকতা কোথায়? মিড-ডে মিল প্রকল্প নিঃসন্দেহে এক বড় সামাজিক উদ্যোগ, কিন্তু তার বাস্তবায়নে টাকার জোগান যেন শুধু সংখ্যা নয়, হয় প্রয়োজন ও মর্যাদার প্রতিফলন। পুষ্টি কি শুধুই ক্যালোরির হিসাব, না কি তার মধ্যে আছে স্বাস্থ্য, স্বস্তি আর সম্মান—সেই প্রশ্নটাই আজ মুখ্য হয়ে উঠছে।