মিঠুন চক্রবর্তীর লড়াইয়ের গল্প
বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির আইকনিক ব্যক্তিত্ব মিঠুন চক্রবর্তী। পর্দায় তাঁকে যেমন দর্শক ভালোবাসেন, ব্যক্তিগত জীবনেও তিনি সবার প্রিয়। সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে মিঠুন শেয়ার করলেন তাঁর জীবনের অভিজ্ঞতা, লড়াইয়ের গল্প, আর পরিবারের সঙ্গে সম্পর্কের সমীকরণ।
বাবার ভূমিকায় পর্দা ও বাস্তব
নতুন ছবি “সন্তান”-এ মিঠুনকে দেখা যাবে বাবার চরিত্রে। তবে বাস্তব জীবনে তিনি কেমন বাবা? মিঠুন বলেন, “পর্দায় সন্তান ছবিতে যা দেখানো হয়েছে, তা যদি বাস্তবে আমার সঙ্গে হতো, আমি হয়তো হার্ট অ্যাটাক করেই মরে যেতাম। আমাদের বাড়িতে ছেলে-মেয়েরা আর আমি, সবাই বন্ধু। সম্পর্কটা একেবারে মসৃণ।”
তিনি আরও বলেন, “ছেলে-মেয়েরা মায়ের সঙ্গে বেশি বন্ধু। তবে আমার সঙ্গেও বন্ধুত্বের সম্পর্ক রয়েছে। আমাদের দিন কাটে হাসি-ঠাট্টায়।’’ মিঠুনের দুই ছেলে তাঁর সঙ্গে থাকেন, আর মেজ ছেলে ও মেয়ে আমেরিকায়। তবে তাদের সঙ্গে প্রতিদিন কথা হয়। মিঠুন হাসতে হাসতে বলেন, “মেয়ের কাছে সবচেয়ে বেশি বকুনি খাই। এক মেয়ে বলে কথা! ও আমাকে যেমন বকাঝকা করে, তার ভাইয়েরাও কিছু বলতে পারে না। মেয়েই এখন টপ গিয়ারে রয়েছে।”
লড়াইয়ের জীবন
মিঠুনের দীর্ঘ ক্যারিয়ার বহু চড়াই-উতরাই পেরিয়ে এসেছে। জীবনের এই পর্যায়ে দাঁড়িয়ে ফিরে দেখলে আফশোস হয় কি? মিঠুনের জবাব, “এগুলো বলে লাভ কী?” একটু হেসে তিনি যোগ করেন, “এক সময় কিছু আফশোস ছিল। তবে এখন মনে হয়, আমার জীবনে আফশোসের কোনো জায়গা নেই।”
মিঠুন স্বীকার করেন, তিনি জীবনে কখনো রাতারাতি কিছু পাননি। সবকিছু অর্জন করতে হয়েছে লড়াই করে। “আমার প্রতিটা দিন লড়াইয়ের ছিল। আমি যদি এমনি এমনি কিছু পেয়ে যেতাম, তবে হয়তো না পাওয়া নিয়ে আফশোস থাকত। কিন্তু আমার যা কিছু প্রাপ্তি, সবটাই লড়াই করে অর্জন করা।”
কাজের প্রতি নিবেদন
মিঠুনের মতে, কঠোর পরিশ্রমই জীবনের মূল চাবিকাঠি। তাঁর কথায়, “জীবনে কিছু পেতে হলে প্রতিদিন লড়াই করতে হয়। আমি যা কিছু পেয়েছি, তার জন্য আমাকে প্রতিটি মুহূর্তে নিজের সেরাটা দিতে হয়েছে।”
তাঁর এই জীবনদর্শন শুধু বিনোদন জগতেই নয়, যে কোনো ক্ষেত্রেই প্রাসঙ্গিক। মিঠুন বলেন, “যখন কোনো কাজ বা প্রাপ্তি লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে আসে, তখন সেটার মূল্য অনেক বেশি। তাই আমি আমার জীবনের জন্য কৃতজ্ঞ। আমার লড়াই আমাকে তৈরি করেছে।”
জীবনের সুখ ও শান্তি
কঠোর পরিশ্রম আর লড়াইয়ের মধ্যেও মিঠুন তাঁর পরিবার থেকে সবচেয়ে বেশি শান্তি পান। তাঁর জন্য পরিবার মানে বন্ধুত্ব আর ভালোবাসার জায়গা। “আমাদের পরিবারে কোনো কৃত্রিমতা নেই। সবাই মিলে দিন কাটাই হাসি-ঠাট্টায়। এটাই আমার জীবনের আসল প্রাপ্তি।”
মিঠুনের বার্তা
সাক্ষাৎকারের শেষে মিঠুন তাঁর ভক্তদের জন্য একটি বার্তা দেন, “জীবনে কখনও হাল ছেড়ো না। প্রতিটা দিনই নতুন সুযোগ নিয়ে আসে। কঠোর পরিশ্রম করো, নিজের ওপর বিশ্বাস রাখো। সফলতা ধরা দেবেই।”
মিঠুন চক্রবর্তীর এই জীবনবোধ ও লড়াইয়ের গল্প আমাদের শেখায় যে কঠিন পরিশ্রম আর সাহস দিয়েই জীবন জয় করা যায়। বাস্তব জীবনের এই “ডিস্কো ডান্সার”-এর প্রেরণাদায়ক যাত্রা আমাদের সবার জন্য এক অনুপ্রেরণা।