বিজেপিকে অভিনন্দন: কেজরীওয়াল
দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশ হতেই জনতার রায়কে শ্রদ্ধা জানিয়ে ভিডিওবার্তা দিলেন আম আদমি পার্টির (আপ) প্রধান অরবিন্দ কেজরীওয়াল। নয়াদিল্লি কেন্দ্র থেকে পরাজিত হয়েছেন তিনি, কিন্তু হার স্বীকার করেও জানালেন, মানুষের জন্য কাজ করা তাঁর ও তাঁর দলের লক্ষ্য ছিল এবং তা চলবে।
‘জনতার রায় মাথা পেতে নিচ্ছি’
ভোটের ফলাফল প্রকাশের পরপরই সমাজমাধ্যমে একটি ভিডিওবার্তা দেন কেজরীওয়াল। সেখানে তিনি বলেন, “দিল্লির ভোটের ফল প্রকাশিত হয়েছে। আমরা জনতার রায়কে সম্পূর্ণ শ্রদ্ধা করি এবং মাথা পেতে নিচ্ছি। বিজেপিকে জয়ের জন্য অভিনন্দন জানাই। দিল্লির মানুষ যে প্রত্যাশা নিয়ে ওদের ভোট দিয়েছেন, আশা করি তারা সেই প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে।”
এই পরাজয়ের পরও কেজরী জানান, তাঁদের দলের কাজ থেমে থাকবে না। তিনি বলেন, “আমরা গত ১০ বছরে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, জল ও অন্যান্য পরিষেবায় উন্নতি করার চেষ্টা করেছি। দিল্লির মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত করাই ছিল আমাদের প্রধান লক্ষ্য। এবার আমরা গঠনমূলক বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করব এবং জনগণের জন্য কাজ চালিয়ে যাব।”
‘রাজনীতি আমাদের কাছে লাভের বিষয় নয়’
কেজরীওয়াল স্পষ্ট করে দেন যে, রাজনীতিতে তিনি কোনও ব্যক্তিগত লাভের জন্য আসেননি। তিনি বলেন, “রাজনীতি আমাদের কাছে কোনও লাভের বিষয় নয়। এটি মানুষের সেবা করার মাধ্যম, এবং সেই কাজ আমরা করেই যাব। আপের সমস্ত কর্মীকে আমি কৃতজ্ঞতা জানাই। তারা এই নির্বাচনের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন।”
আতিশীর মন্তব্য: ‘এটা উদযাপনের সময় নয়’
আপের একমাত্র বিজয়ী প্রার্থী আতিশী মার্লেনাও দলের পরাজয় মেনে নিয়ে বলেন, “মানুষের রায় আমরা মাথা পেতে নিচ্ছি। আমি জিতেছি, কিন্তু এটা উদযাপনের সময় নয়। আমাদের বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই চলবে।” কালকাজি আসনে জয়ী হয়েছেন তিনি, কিন্তু তাঁর জয়ও খুব সহজ ছিল না।
কেজরীর রাজনৈতিক যাত্রার পর্যালোচনা
২০১৩ সালে দিল্লিতে প্রথমবারের জন্য ক্ষমতায় আসে কেজরীর দল আপ। পরবর্তী তিনটি বিধানসভা নির্বাচনে জয়ী হয়ে তিনি দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী হন। প্রথমবার ৪৮ দিনের জন্য মুখ্যমন্ত্রী পদে ছিলেন তিনি, পরে দীর্ঘ সময় দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু ২০২৪ সালে আবগারি দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার হওয়ার পর পরিস্থিতি বদলে যায়। দীর্ঘদিন জেলে থাকার পর, আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তিনি মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ান এবং তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন আতিশী মার্লেনা। ২০২৫ সালের নির্বাচনে আপ পুনরায় ক্ষমতায় ফিরলে কেজরীওয়ালই মুখ্যমন্ত্রীর পদে ফিরতেন, কিন্তু এই নির্বাচনের পর সেই সম্ভাবনা কার্যত শেষ হয়ে গেল।
আপের জন্য ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ
এই নির্বাচনে আম আদমি পার্টির কার্যত ভরাডুবি হয়েছে। বিজেপির বিপরীতে লড়াই করে কেজরীওয়াল ও তাঁর দল কার্যত ব্যর্থ। দলীয় কর্মীদের মনোবল ধরে রাখতে কেজরীওয়াল তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং বলেন, “ভবিষ্যতে আমরা আরও শক্তিশালী হয়ে ফিরব। দিল্লির মানুষের জন্য আমাদের কাজ চলবে।”
পরাজয়ের স্বীকারোক্তি এবং ভবিষ্যতের পরিকল্পনা প্রকাশ করে কেজরীওয়াল ও আতিশী বোঝালেন, আপ এখনও হার মানতে রাজি নয়। তারা বিরোধী শক্তি হিসেবে দিল্লির রাজনীতিতে নিজেদের অবস্থান দৃঢ় করতে চায়। তবে আপের জন্য আসন্ন দিনগুলো চ্যালেঞ্জের হতে চলেছে, তা বলাই যায়।
নিজেরাই শূন্য, কেজরীবাল ও সিসৌদিয়ার পতন, আতিশীর কান ঘেঁষে জয়!