মাধ্যমিকে ছাত্রদের তুলনায় ছাত্রী ১ লাখেরও বেশি
পশ্চিমবঙ্গে মাধ্যমিক পরীক্ষায় ছাত্রদের তুলনায় ছাত্রীদের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে, এবং এই ধারা চলছে টানা ১৪ বছর ধরে। ২০২৫ সালের মাধ্যমিক পরীক্ষায় ছাত্রদের তুলনায় ছাত্রী বেশি ১ লাখ ২৬ হাজার! কিন্তু কেন এই ফারাক? ছাত্ররা কি বেশি স্কুলছুট হচ্ছে? নাকি মেয়েদের স্কুলে যাওয়ার হার বেড়েছে? এই প্রবণতা কি শুধুই সরকারি প্রকল্পের সুফল, নাকি এর পেছনে আরও কিছু কারণ রয়েছে?
এ বছর মাধ্যমিকে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কত?
মধ্যশিক্ষা পর্ষদের দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী,
📌 মোট পরীক্ষার্থী: ৯,৮৪,৬৯০ জন
📌 মোট ছাত্র: ৪,২৭,৭৮২ জন
📌 মোট ছাত্রী: ৫,৫৫,৯০৮ জন
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ছাত্রীদের সংখ্যা ছাত্রদের তুলনায় ১,২৬,০০০ বেশি।
ছাত্রীদের সংখ্যা কেন বাড়ছে?
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ছাত্রীদের শিক্ষা ক্ষেত্রে অগ্রসর হওয়ার পেছনে একাধিক কারণ রয়েছে:
১) সরকারি প্রকল্পের প্রভাব
মেয়েদের পড়াশোনায় উৎসাহিত করতে পশ্চিমবঙ্গ সরকার ‘কন্যাশ্রী’, ‘শিক্ষাশ্রী’, ‘সবুজ সাথী’-র মতো প্রকল্প চালু করেছে।
✔ ‘কন্যাশ্রী’ প্রকল্পের আওতায় মেয়েরা আর্থিক সহায়তা পায়, যা স্কুলছুট রোধ করতে সাহায্য করেছে।
✔ ‘সবুজ সাথী’ প্রকল্পের মাধ্যমে সাইকেল দেওয়ায় দূরের স্কুলে যাওয়া সহজ হয়েছে।
✔ ‘শিক্ষাশ্রী’ প্রকল্পের ফলে অনগ্রসর শ্রেণির ছাত্রীরা শিক্ষা চালিয়ে যেতে পারছে।
এই প্রকল্পগুলোর কারণে অনেক মেয়েই স্কুলে থাকার অনুপ্রেরণা পাচ্ছে, যা পরীক্ষার্থীর সংখ্যায় প্রতিফলিত হচ্ছে।
২) বাল্যবিবাহের হার কমেছে
আগে অনেক মেয়েকেই কম বয়সে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হতো, ফলে মাধ্যমিকের আগেই তারা স্কুলছুট হয়ে যেত। এখন আইন কঠোর হয়েছে, সরকারি উদ্যোগও বেড়েছে, ফলে মেয়েরা দীর্ঘদিন স্কুলে থাকতে পারছে।
৩) পরিবারে মেয়েদের শিক্ষার গুরুত্ব বেড়েছে
একটি ইতিবাচক পরিবর্তন হলো, অভিভাবকেরা এখন মেয়েদের উচ্চশিক্ষার গুরুত্ব বুঝতে পারছেন।
✔ বড় শহর ও গ্রামাঞ্চলে মেয়েদের শিক্ষার প্রতি আগ্রহ বেড়েছে।
✔ অনেক পরিবারে মা-বাবা চাইছেন তাঁদের মেয়েরা স্বাবলম্বী হোক।
✔ মেয়েরাও এখন উচ্চশিক্ষা ও ক্যারিয়ার নিয়ে বেশি সচেতন।
৪) স্কুলে ছাত্রদের সংখ্যা কমছে কেন?
ছাত্রদের সংখ্যা কমে যাওয়ার পেছনে একাধিক কারণ থাকতে পারে—
❌ অনেক ছাত্র মাধ্যমিকের আগেই স্কুল ছাড়ছে এবং কাজের সন্ধানে বেরিয়ে পড়ছে।
❌ পরিবারের আর্থিক অনটনের কারণে অনেকেই পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারছে না।
❌ গ্রামের অনেক ছাত্র পরিযায়ী শ্রমিক হয়ে ভিন রাজ্যে চলে যাচ্ছে।
তবে রাজ্য সরকারের দাবি, ছাত্রদের সংখ্যা খুব একটা কমেনি, বরং ছাত্রীদের সংখ্যা বেড়েছে।
এই প্রবণতা কি আগেও ছিল?
📌 ২০১১ সাল থেকে পশ্চিমবঙ্গের মাধ্যমিকে ছাত্রদের তুলনায় ছাত্রীদের সংখ্যা বেশি।
📌 ২০১৮ সালে ছাত্রের তুলনায় ছাত্রীর সংখ্যা ১২% বেশি ছিল।
📌 ২০২১ ও ২০২২ সালের কোভিড পরিস্থিতিতেও এই ফারাক ছিল ১১%।
📌 ২০২৫ সালে এই ফারাক ১৪% ছাড়িয়েছে!
শিক্ষামন্ত্রীর ব্যাখ্যা: কেন ছাত্রী বেশি?
শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু ছাত্রীদের সংখ্যা বৃদ্ধির ৬টি কারণ উল্লেখ করেছেন—
1️⃣ ‘কন্যাশ্রী’, ‘সবুজসাথী’ ও অন্যান্য প্রকল্প সরাসরি মেয়েদের স্কুলে রাখছে।
2️⃣ প্রতি ক্লাসেই ছাত্রদের তুলনায় ছাত্রীদের সংখ্যা বেশি থাকে, যা মাধ্যমিকে প্রতিফলিত হচ্ছে।
3️⃣ ‘পাবলিক স্কুল নেটওয়ার্ক’ শক্তিশালী করায় মেয়েরা বেশি স্কুলে আসছে।
4️⃣ রাজ্য সরকার মহিলাদের ক্ষমতায়নে কাজ করছে, যা পড়াশোনায় ছাত্রীদের উৎসাহিত করছে।
5️⃣ পরিবারে মেয়েরা বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে, ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’-এর মতো প্রকল্প মায়েদের সচেতন করেছে।
6️⃣ পশ্চিমবঙ্গে লিঙ্গ অনুপাত দেশের তুলনায় ভালো, যা শিক্ষাক্ষেত্রে ছাত্রীদের সংখ্যা বাড়িয়েছে।
ছাত্ররা কি বেশি সংখ্যায় স্কুলছুট?
📌 অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, ছাত্রদের স্কুলছুট হওয়ার প্রবণতা বেশি, বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায়।
📌 অনেকেই পরিবার চালাতে বা অতিরিক্ত উপার্জনের জন্য কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে।
📌 অনেক ছাত্র অল্প বয়সেই পরিযায়ী শ্রমিক হয়ে ভিন রাজ্যে চলে যাচ্ছে।
তবে, রাজ্যের শ্রম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান সামিরুল ইসলাম এই যুক্তি মানতে নারাজ। তাঁর দাবি, রাজ্য সরকারের কাছে পরিযায়ী শ্রমিকদের তালিকা রয়েছে, সেখানে মাধ্যমিকের বয়সি কেউ নেই।
ভবিষ্যতে কী হতে পারে?
🔹 কন্যাশ্রীরা আরও এগিয়ে যাবে: মেয়েদের শিক্ষার হার আরও বাড়বে, এবং উচ্চশিক্ষায় তাঁদের উপস্থিতি আরও বেশি হবে।
🔹 ছাত্রদের স্কুলছুট রোধ করতে পদক্ষেপ: সরকারের উচিত ছাত্রদের জন্য বিশেষ প্রকল্প আনা, যাতে তারা পড়াশোনায় উৎসাহ পায়।
🔹 নতুন শিক্ষা নীতি প্রভাব ফেলতে পারে: জাতীয় শিক্ষানীতি (NEP 2020)-র প্রভাব ছাত্র-ছাত্রী উভয়ের ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।
শেষ কথা
গত ১৪ বছর ধরে মাধ্যমিক পরীক্ষায় ছাত্রীদের আধিপত্য ক্রমশ বাড়ছে, এবং এটি ‘নিউ নর্মাল’ হয়ে উঠেছে।
✔ সরকারি প্রকল্প, সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন, এবং মেয়েদের শিক্ষার প্রতি আগ্রহ— সব মিলিয়ে এই পরিবর্তন ঘটছে।
✔ ছাত্রদের স্কুলছুট প্রবণতা কমাতে নতুন উদ্যোগ নেওয়া দরকার।
✔ আগামী দিনে এই প্রবণতা আরও কতটা বাড়ে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
আপনার মতে, এই প্রবণতা কি পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষাব্যবস্থার ইতিবাচক পরিবর্তন নাকি ছাত্রদের স্কুলছুট হওয়া উদ্বেগজনক?
একদিনেই ২০ লাখ অনুগামী হারালেন! বিতর্কের কেন্দ্রে ইউটিউবার রণবীর ইলাহাবাদিয়া, কত আয় করেন তিনি?