Saturday, February 22, 2025

মাদারিহাটে জয়ের জন্য মরিয়া তৃণমূল, ছয় আসনের উপনির্বাচনে জয় লক্ষ্য

Share

মাদারিহাটে জয়ের জন্য মরিয়া তৃণমূল

পশ্চিমবঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে শাসন করছে তৃণমূল কংগ্রেস, কিন্তু আলিপুরদুয়ারের মাদারিহাট আসন তাদের জন্য এখনও অধরা। শাসকদল তৃণমূল এবার মাদারিহাটে নিজেদের অবস্থান দৃঢ় করতে এবং জয় হাসিল করতে আগ্রহী। বিধানসভা উপনির্বাচনে ছয়টি আসনের মধ্যে মাদারিহাট একমাত্র আসন যেখানে তৃণমূল কখনও জিততে পারেনি। এবার সেখানে জয় হাসিল করাই তৃণমূলের প্রধান লক্ষ্য।

মাদারিহাট আসনটি বামপন্থীদের জন্য একসময় শক্ত ঘাঁটি ছিল। ১৯৭৭ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত আরএসপি এই আসনে তাদের দখল ধরে রেখেছিল। ২০১৬ এবং ২০২১ সালে এই আসনটি বিজেপির হাতে যায় এবং মনোজ টিগ্গা এখানে জয় লাভ করেন। এবারে, মনোজ টিগ্গা আলিপুরদুয়ার লোকসভা আসন থেকে জিতে সাংসদ হয়েছেন। তার ফলে মাদারিহাট আসনে উপনির্বাচনের প্রয়োজন হয়েছে।

মাদারিহাট আসনে তৃণমূলের জয় নিশ্চিত করতে তৃণমূল সাংসদ প্রকাশ চিক বরাইক মাটি কামড়ে কাজ করছেন। তিনি আত্মবিশ্বাসী যে এবার মাদারিহাটে জয় তৃণমূলের হাতেই আসবে। অন্যদিকে, বিজেপি দাবি করেছে, উপনির্বাচনে ‘সঠিক’ ভোট হলে তারাই আবার এই আসন জয় করবে। তবে অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষকের মতে, বিজেপির প্রচার ও তাদের নেতাদের মনোভাব দেখে মনে হচ্ছে না যে তারা মাদারিহাট ধরে রাখার জন্য সক্রিয়ভাবে লড়ছে।

২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে মাদারিহাটে তৃণমূল প্রায় ২৯ হাজার ভোটে পরাজিত হয়েছিল। কিন্তু ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে এই ব্যবধান কমে আসে এবং বিজেপি ১১ হাজার ভোটে এগিয়ে থাকে। তিন বছরের মধ্যে প্রায় ১৮ হাজার ভোটের ব্যবধান কমানোকে ইতিবাচক লক্ষণ হিসেবে দেখছে তৃণমূল। মাদারিহাটের আদিবাসী এবং খ্রিস্টান ভোটারদের মধ্যে তৃণমূলের অবস্থান আগের থেকে কিছুটা উন্নত হয়েছে বলে ধারণা করছে তারা। বিজেপির প্রাক্তন সাংসদ জন বার্লা যিনি খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের জন্য ব্যাপক জনপ্রিয় ছিলেন, এবারের উপনির্বাচনে তার ভূমিকা নিয়েও কিছুটা সন্দেহ রয়েছে। বিজেপি তাকে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে প্রার্থী করেনি, এবং তৃণমূল নেতাদের সাথে তার কিছু সাক্ষাৎ সেই সন্দেহকে আরও জোরালো করেছে।

তৃণমূলের জন্য বাকি পাঁচটি উপনির্বাচনের আসন ইতোমধ্যেই তাদের হাতে ছিল। সেগুলোর মধ্যে কোচবিহারের সিতাই এবং উত্তর ২৪ পরগনার হাড়োয়াতে তৃণমূল তাদের জয় ব্যবধান আরও বাড়াতে পেরেছিল। কিন্তু মেদিনীপুর, বাঁকুড়ার তালড্যাংরা এবং উত্তর ২৪ পরগনার নৈহাটিতে এই ব্যবধান কিছুটা কমেছে। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ছয়টি আসনেই জয় আশা করছেন। তবে তিনি এ-ও স্বীকার করেছেন যে প্রচারে না গিয়ে অবস্থার নির্ভুল পূর্বাভাস দেয়া কঠিন। তবু তিনি আত্মবিশ্বাসী যে মাদারিহাটেও এবার জয় আসবে।

রাজ্যজুড়ে উপনির্বাচনে সাধারণত শাসকদল জয়লাভ করে থাকে। কারণ, এই ধরনের নির্বাচনে সরকার পরিবর্তনের কোন সুযোগ থাকে না। বিরোধী দলগুলোর ভোটাররা সাধারণ নির্বাচনের উত্তেজনা থেকে অনেকটাই বিচ্ছিন্ন থাকে। ফলে, তাদের অংশগ্রহণ কম থাকে। তবে এই প্রবণতা কিছু ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমও হয়। বাম আমলের শেষ দিকে তৃণমূল তিনটি আসনের উপনির্বাচনে জয়ী হয়েছিল, ঠিক যেমনটি তৃণমূলের সময়েও সাগরদিঘিতে বাম-কংগ্রেস জোট প্রার্থী তৃণমূলকে পরাজিত করেছিল।

এবারের উপনির্বাচনে তৃণমূলের জন্য আরেকটি চ্যালেঞ্জ হলো সাম্প্রতিক সময়ে রাজ্যজুড়ে গড়ে ওঠা নাগরিক আন্দোলন। বিশেষ করে রাজ্যের বিভিন্ন ছোট শহর এবং মফস্বলে যে প্রতিষ্ঠান বিরোধী আন্দোলন চলছে, তা ইভিএমে প্রতিফলিত হতে পারে কি না তা নিয়ে শাসকদল সতর্ক। এই উপনির্বাচনে শহুরে আসন বলতে নৈহাটি এবং মেদিনীপুর কেন্দ্রগুলি উল্লেখযোগ্য, যেখানে তৃণমূল এই আন্দোলনের প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য রাখতে চায়।

তৃণমূলের জন্য এই ছয়টি আসনে জয় তৃণমূলের শক্তি বৃদ্ধি এবং তাদের প্রভাব বিস্তারের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মাদারিহাট আসনে তাদের জয় একটি দীর্ঘ প্রতীক্ষিত সাফল্য হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে।

Read more

Local News