কাইলি পেজের মৃত্যু ঘিরে নতুন করে চাঞ্চল্য আমেরিকায়!
মাত্র ২৮ বছর বয়সে চিরবিদায় নিলেন পর্ন ফিল্ম জগতের পরিচিত মুখ ও রিয়্যালিটি শো তারকা কাইলি পেজ। লস অ্যাঞ্জেলসের নিজস্ব বাসভবনে ২৫ জুন সংজ্ঞাহীন অবস্থায় উদ্ধার হয় তাঁর দেহ। পরে মৃত্যু নিশ্চিত করে পুলিশ। তদন্তে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য—ঘটনাস্থল থেকে ফেন্টানিল ও অন্যান্য শক্তিশালী মাদক পাওয়া গিয়েছে। সন্দেহ করা হচ্ছে, অতিরিক্ত মাদক সেবনের জেরেই এমন করুণ পরিণতি হয়েছে এই তরুণীর।
কাইলির এক বন্ধু, যিনি প্রথমে পুলিশে খবর দেন, জানান, কাইলিকে নিথর অবস্থায় দেখে তৎক্ষণাৎ সাহায্য ডাকেন তিনি। কিন্তু জরুরি পরিষেবা পৌঁছনোর আগেই থেমে যায় কাইলির নিঃশ্বাস। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানায়, কোনও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের প্রমাণ মেলেনি, তবে মাদকের উপস্থিতি থেকেই মৃত্যু কারণ স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
২০১৬ সালে পর্ন ইন্ডাস্ট্রিতে পা রাখেন কাইলি পেজ। অল্প সময়েই জনপ্রিয়তা পান, অভিনয় করেন দুই শতাধিক ছবিতে। বড় সংস্থা যেমন ব্রেজ়ার্স, নটি আমেরিকা ও ভিক্সেন মিডিয়ার সঙ্গেও কাজ করেছেন তিনি। তাঁর আকর্ষণীয় উপস্থিতি ও প্রাণবন্ত ব্যক্তিত্ব দর্শকদের মন জয় করে নেয়।
কিন্তু কাইলির মৃত্যু শুধু ব্যক্তিগত ট্র্যাজেডি নয়, বরং মার্কিন সমাজে একটি বড় সংকেত। কাইলির বাড়ি থেকে পাওয়া ফেন্টানিল, এক ধরনের সিন্থেটিক ওপিয়ড, যা হেরোইনের চেয়েও প্রায় ৫০ গুণ বেশি শক্তিশালী। মূলত ব্যথানাশক হিসেবে চিকিৎসায় ব্যবহৃত হলেও, এর অপব্যবহার প্রতিনিয়ত বাড়ছে। আমেরিকায় এই মাদকের কারণে ২০২৩ সালেই মৃত্যু হয়েছে প্রায় ৭৫ হাজার মানুষের।
কাইলির আগে এই ফেন্টানিলেই প্রাণ হারিয়েছেন বহু খ্যাতনামা তারকা। ২০১৬ সালে মারা যান সংগীতশিল্পী প্রিন্স। ২০১৮ সালে র্যাপার ম্যাক মিলার এবং ২০২১ সালে অভিনেতা মাইকেল কে উইলিয়ামসের মৃত্যুও হয়েছিল ফেন্টানিল-সম্পৃক্ত ওষুধ গ্রহণ করে। এমনকী, এই বছরই সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার ইভা ইভান্সের মৃত্যুও মাদকজনিত বলে সন্দেহ করা হয়।
ফেন্টানিলের একটি মাত্র ২ মিলিগ্রাম ডোজও প্রাণঘাতী হতে পারে। বিশেষ করে, যখন তা মিশিয়ে দেওয়া হয় কোকেন, হেরোইন বা অন্য নেশাদ্রব্যের সঙ্গে। অনেক ক্ষেত্রেই ভোক্তা বুঝতেই পারেন না, কী মারাত্মক কিছু গ্রহণ করছেন। ওষুধটির সস্তা উৎপাদনমূল্য এবং উচ্চক্ষমতা একে ড্রাগ কার্টেলগুলোর কাছে জনপ্রিয় করে তুলেছে, যা নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে মার্কিন সরকার।
কাইলির অকালমৃত্যু ফের একবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, খ্যাতির আড়ালে কতটা নরম অথচ বিপজ্জনক পৃথিবী লুকিয়ে থাকে। শুধু বিনোদনজগত নয়, সমাজের প্রতিটি স্তরে এখন দরকার আরও বেশি সচেতনতা, সহানুভূতি এবং মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে আলোচনার।

