রাশিয়ার নতুন প্লাজ়মা ইঞ্জিন !
মহাকাশ গবেষণায় যুগান্তকারী পরিবর্তন আনতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি নিয়ে এল রাশিয়া। মস্কোর বিজ্ঞানীরা দাবি করছেন, তাঁদের তৈরি নতুন প্লাজ়মা ইঞ্জিনের সাহায্যে মাত্র ৩০ দিনেই লাল গ্রহ মঙ্গলে পৌঁছনো সম্ভব! এই নতুন প্রযুক্তি সফল হলে মহাকাশ গবেষণার দুনিয়ায় বড়সড় পরিবর্তন আসতে চলেছে, এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
মহাকাশে রাশিয়ার ‘গতি’ বাড়ানোর পরিকল্পনা
মঙ্গল গ্রহের দূরত্ব পৃথিবী থেকে প্রায় সাড়ে ২২ কোটি কিলোমিটার। বর্তমানে প্রচলিত রকেট প্রযুক্তির সাহায্যে সেখানে পৌঁছতে ৬ থেকে ৯ মাস সময় লাগে। তবে রুশ বিজ্ঞানীরা বলছেন, তাঁদের নতুন ইঞ্জিন মাত্র ৩০ দিনে এই বিশাল দূরত্ব অতিক্রম করতে পারবে!
এই নতুন ইঞ্জিন তৈরি করেছে রোসাটম ট্রয়েটস্ক ইনস্টিটিউট, আর রাশিয়ার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা রসকসমস এই প্রকল্পের তত্ত্বাবধানে রয়েছে।
কীভাবে কাজ করবে এই প্লাজ়মা ইঞ্জিন?
এই নতুন ইঞ্জিনে ‘ম্যাগনেটো প্লাজ়মা প্রপালশন সিস্টেম’ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে, যা অত্যন্ত শক্তিশালী তড়িচ্চুম্বকীয় ক্ষেত্র তৈরি করে।
- এই প্রযুক্তিতে হাইড্রোজেন আয়ন ব্যবহার করে বিশাল থ্রাস্ট (চাপ) তৈরি করা হয়, যা মহাকাশযানকে অসাধারণ গতিবেগ দিতে পারে।
- সেকেন্ডে ১০০ কিলোমিটার গতিবেগে ছুটবে এই ইঞ্জিন! অর্থাৎ, ঘণ্টায় প্রায় ৩.৬ লক্ষ কিলোমিটার অতিক্রম করা সম্ভব হবে, যা প্রচলিত রকেটের তুলনায় অনেক বেশি।
- বর্তমান মহাকাশ রকেটের সর্বোচ্চ গতিবেগ ৪.৫ কিলোমিটার/সেকেন্ড। নতুন এই ইঞ্জিন সেই সীমাকে অনেকটাই ছাড়িয়ে যাবে!
নাসার জন্য নতুন প্রতিযোগিতা?
এই প্রযুক্তি সফল হলে, রাশিয়া মহাকাশ গবেষণায় যুক্তরাষ্ট্রের নাসার (NASA) চেয়ে অনেকটাই এগিয়ে যাবে। কারণ, বর্তমানে নাসা এবং ইলন মাস্কের স্পেসএক্স মঙ্গলে মানুষ পাঠানোর জন্য ৬ মাস থেকে ৯ মাসের পরিকল্পনা করছে।
রাশিয়ার এই ৩০ দিনের মঙ্গল-অভিযান পরিকল্পনা সফল হলে, নাসার মঙ্গল মিশন নিয়ে নতুন করে ভাবতে হতে পারে।
এখনও পরীক্ষা চলছে, তবে ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা বিশাল
এই ইঞ্জিন নিয়ে এখনও চূড়ান্ত পরীক্ষা চলছে। ১৪ মিটার লম্বা ও ৪ মিটার চওড়া একটি ভ্যাকুয়াম চেম্বারে এর কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হয়েছে।
- পরীক্ষার সময় ৩০০ কিলোওয়াট শক্তিতে এই ইঞ্জিন ২,৪০০ ঘণ্টা (প্রায় ১০০ দিন) সচল ছিল।
- বিজ্ঞানীরা বলছেন, মঙ্গলে যেতে হলে এই ইঞ্জিনকে আরও উন্নত করতে হবে।
রাশিয়া আশা করছে, ২০৩০ সালের মধ্যেই এই প্লাজ়মা ইঞ্জিন মহাকাশে পাঠানো হবে।
কোন কোন চ্যালেঞ্জ রয়েছে?
যদিও এই প্রযুক্তি বিপ্লব ঘটাতে পারে, তবুও কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েই যাচ্ছে—
1️⃣ নিরবিচ্ছিন্ন শক্তির উৎস: মহাকাশযানে বিদ্যুতের প্রয়োজন হয়, যা সাধারণত পারমাণবিক শক্তি বা সৌর শক্তি থেকে আসে। এই ইঞ্জিন কীভাবে সেই বিদ্যুৎ জোগাবে, তা এখনও পুরোপুরি নিশ্চিত নয়।
2️⃣ মহাকাশে ইঞ্জিন সংযোগ: রকেটের বদলে শুধুমাত্র প্লাজ়মা ইঞ্জিন কীভাবে ব্যবহার করা হবে, সেটিও একটি বড় প্রশ্ন।
3️⃣ দীর্ঘমেয়াদি কার্যকারিতা: এটি মহাকাশের কঠিন পরিবেশে কতদিন কার্যকর থাকবে, তা পরীক্ষার প্রয়োজন রয়েছে।
পরিবর্তনের পথে মহাকাশ গবেষণা?
বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি রাশিয়ার দাবি সত্যি হয়, তবে এটি মহাকাশ গবেষণায় নতুন যুগের সূচনা করবে।
- প্লাজ়মা প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে জ্বালানি খরচ কমবে।
- দূরবর্তী গ্রহ ও সৌরজগতের বাইরের অভিযান অনেক সহজ হয়ে যাবে।
- মহাকাশ ভ্রমণ আরও দ্রুত এবং কার্যকর হবে।
রাশিয়ার এই গবেষণার ফলে মহাকাশ গবেষণায় এক নতুন প্রতিযোগিতা শুরু হলো। এখন দেখার বিষয়, নাসা বা স্পেসএক্স কিভাবে এই চ্যালেঞ্জের জবাব দেয়।
🚀 মহাকাশ গবেষণার ভবিষ্যৎ কি নতুন মোড় নিতে চলেছে? রাশিয়ার এই ‘স্পেস রেস’ কি নাসাকে চিন্তায় ফেলবে? উত্তর দেবে সময়!
গবেষণার আড়ালে সামরিক পরিকল্পনা? সমুদ্রের গভীরে চিনের রহস্যময় কেন্দ্র ঘিরে উদ্বেগ

