মাত্র ২০ মিনিটের লেজ়ারে গ্লকোমার দংশন থামবে?
চোখের নীরব ঘাতক হিসেবেই পরিচিত গ্লকোমা। অনেক সময়ে দৃষ্টি ঝাপসা হওয়া বা দেখায় অসুবিধে হওয়ার মতো প্রাথমিক উপসর্গে মানুষ হালকা ক্লান্তি বা বয়সকে দায়ী করেন। অনেকেই আবার ছানি ভেবে নিজের মতো চিকিৎসাও শুরু করেন। কিন্তু চক্ষু বিশেষজ্ঞরা বারবার সতর্ক করেছেন— গ্লকোমা ধরা পড়লে সময় নষ্ট করা চলবে না, কারণ দৃষ্টিশক্তির যে ক্ষতি হয়, তা আর ফেরানো যায় না।
এই ভয়ঙ্কর রোগকে নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য বছর বছর ধরে গবেষণা চলছে। অস্ত্রোপচার থেকে শুরু করে নানা ধরনের আইড্রপ— চিকিৎসার পদ্ধতি আছে ঠিকই, তবে সেগুলিতে থাকে ব্যথা, ঝুঁকি এবং জটিলতার সম্ভাবনা। এই জায়গাতেই আশার আলো দেখাচ্ছে আধুনিক প্রযুক্তিতে করা নতুন রকমের লেজ়ার থেরাপি— ডায়োড লেজ়ার ট্রান্সস্ক্লেরাল সাইক্লোফোটোকোঅ্যাগুলেশন (DL-TSCPC)।
চিকিৎসা পদ্ধতিটি বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুলের গবেষকেরাও এর আরও উন্নত রূপ নিয়ে কাজ করছেন। এ দেশেও থেরাপিটি সফলভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে।
🔍 গ্লকোমা কেন হয় এবং বিপদ কোথায়?
চোখের ভিতরের ফ্লুইড বা জল নিঃসরণে কোনও কারণে বাধা পড়লে চাপ বাড়তে থাকে। এটিকেই বলা হয় ইন্ট্রাঅকুলার প্রেশার (IOP)। এই বাড়তি চাপ সোজা গিয়ে আঘাত করে অপটিক নার্ভে, যা চোখের দেখা ছবিকে মস্তিষ্কে পাঠায়। সময়ের সঙ্গে নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং একসময় দৃষ্টিশক্তি সম্পূর্ণ হারানোর ঝুঁকি দেখা দেয়।
একবার দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হলে তা ফেরানো সম্ভব নয়। তাই চিকিৎসকের প্রথম লক্ষ্য থাকে, চোখের ভিতরের চাপ কমিয়ে দেওয়া।
🔬 নতুন ডায়োড লেজ়ার থেরাপিটি কী ভাবে কাজ করে?
এই চিকিৎসায় কোনও কাটাছেঁড়া বা সেলাই লাগে না, পুরো পদ্ধতিটিই লেজ়ার নির্ভর।
১️⃣ প্রথমে রোগীর চোখের চারপাশে দেওয়া হয় অবশকারী ইঞ্জেকশন।
২️⃣ তার পর চোখের সাদা অংশ বা স্ক্লেরার ভিতর দিয়ে লেজ়ার রশ্মি পৌঁছে দেওয়া হয় সিলিয়ারি বডিতে।
৩️⃣ চোখের ভিতরে তরল তৈরির কাজ এই সিলিয়ারি বডিই করে। লেজ়ার নির্দিষ্ট কোষকে নিষ্ক্রিয় করে তরল উৎপাদন কমিয়ে দেয়।
৪️⃣ ফলে চোখের চাপ নিয়ন্ত্রণে আসে এবং অপটিক নার্ভে ক্ষতির ঝুঁকি কমে যায়।
সমগ্র প্রক্রিয়াটি ১৫ থেকে ২০ মিনিটেই হয়ে যায় এবং রোগী প্রায় ব্যথাহীন অভিজ্ঞতা পান।
⭐ এই লেজ়ার থেরাপির বিশেষ সুবিধাগুলি
- ✔️ কোনও অস্ত্রোপচার, কাটাছেঁড়া বা সেলাই নেই
- ✔️ কম ঝুঁকি, অত্যন্ত নিরাপদ
- ✔️ অল্প সময়ে সুস্থ হয়ে ওঠা যায়
- ✔️ ব্যথাহীন ও সহজ পদ্ধতি
- ✔️ অপারেশনের পরের জটিলতার আশঙ্কা কম
- ✔️ বৃদ্ধ বা জটিল রোগে আক্রান্ত রোগীদেরও করা যায়
গ্লকোমার প্রাথমিক পর্যায়ের রোগী থেকে শুরু করে অনেক উন্নত পর্যায়ের রোগীকেও এই লেজ়ার চিকিৎসা দেওয়া যায়।
💰 চিকিৎসার খরচ কত?
ভারতে এই থেরাপির খরচ সাধারণত ৩৫–৪০ হাজার টাকার মধ্যে। তবে লেজ়ারের তীব্রতা, সরঞ্জাম ও রোগীর অবস্থাভেদে খরচ এক লক্ষ টাকার কাছাকাছিও হতে পারে।
🟢 শেষ কথাঃ সময়মতো চিকিৎসাই জীবনরক্ষা
গ্লকোমা নীরবে দৃষ্টি কেড়ে নেয়। তাই ঝাপসা দেখা, চোখে ব্যথা, আলোতে অসহিষ্ণুতা, মাথাব্যথা বা হঠাৎ দৃষ্টিক্ষীণতা— এমন কিছু হলে দেরি করা উচিত নয়। নতুন লেজ়ার প্রযুক্তি অনেকটাই নিরাপদ আশ্রয় তৈরি করেছে। মাত্র ২০ মিনিটের চিকিৎসায়ও দৃষ্টিশক্তি রক্ষা সম্ভব হয়ে উঠছে।

