Wednesday, December 10, 2025

মাত্র চার ঘণ্টার রাতে বিপদ টের পাচ্ছেন না পুরুষেরা! ঘুম কমলেই কমে শুক্রাণুর মান, টেস্টোস্টেরনের সঙ্গে ঘুমের গভীর যোগ কোথায়?

Share

মাত্র চার ঘণ্টার রাতে বিপদ টের পাচ্ছেন না পুরুষেরা!

আজকাল রাত জেগে কাজ করা, মোবাইল বা ল্যাপটপে সময় কাটানো, সিনেমা বা সিরিজ় দেখা—এ সবই প্রায় অভ্যাসে পরিণত। মনে হয়, শরীর ঠিক আছে, চার ঘণ্টা ঘুমেই দিন কেটে যায়! কিন্তু শরীরের ভেতরে যে বিপদ ঘনিয়ে আসে, তা অনেকেই বুঝতে পারেন না। বিশেষ করে পুরুষদের ক্ষেত্রে এই অনিয়ম ঘটাতে পারে ভয়াবহ ক্ষতি। গবেষণা বলছে, রাতের নিয়মিত কম ঘুম সরাসরি কমিয়ে দিতে পারে শুক্রাণুর মান এবং বিঘ্ন ঘটাতে পারে টেস্টোস্টেরন হরমোনের ক্ষরণে।

ঘুম কমলে কেন নষ্ট হয় শরীরের ছন্দ?

মানবদেহের একটি নিজস্ব ঘড়ি আছে—জৈবিক ঘড়ি বা সার্কাডিয়ান রিদম। এই ঘড়ি নির্ধারণ করে কখন ঘুম পাবে, কখন জাগতে হবে, কখন ক্ষুধা লাগবে এবং কখন হরমোনের ক্ষরণ বাড়বে বা কমবে। এই ঘড়ির কেন্দ্র বলা হয় মস্তিষ্কের ‘সুপ্রাকিয়াসম্যাটিক নিউক্লিয়াস’-কে (SCN)।

যখন আপনি নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমোতে যান, শরীর ঠিকমতো এই ছন্দ বজায় রাখতে পারে। কিন্তু আধুনিক জীবনে অনিয়মই নিয়ম—রাত্রিবেলা দীর্ঘক্ষণ জেগে থাকা, বার বার ফোন দেখা, ভোরে ঘুমোতে যাওয়া—সব মিলিয়ে এই রিদম ভেঙে যায়। ফলেই শরীর নিজের মতো কাজ করতে পারে না।

টেস্টোস্টেরন কেন কমে?

টেস্টোস্টেরন হল পুরুষের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হরমোন, যা প্রজনন ক্ষমতা, পেশি বৃদ্ধি, শক্তি, মনোবল—সব কিছুর সঙ্গেই যুক্ত।

হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুলের গবেষণায় দেখা গিয়েছে—

  • পুরুষেরা যদি প্রতিদিন মাত্র চার ঘণ্টা ঘুমান,
  • তাঁদের শরীরে টেস্টোস্টেরনের ক্ষরণের হার অর্ধেক পর্যন্ত কমে যেতে পারে

ঘুম কম হলে কর্টিসল (স্ট্রেস হরমোন) বেড়ে যায়। কর্টিসল যত বাড়বে, টেস্টোস্টেরন তত কমে যাবে। এই দুই হরমোনের ওঠানামাই সবচেয়ে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে শুক্রাণু উৎপাদনে।

শুক্রাণুর মান কমে যায় কী ভাবে?

টেস্টোস্টেরন কমে গেলে—

  • শুক্রাণুর সংখ্যা হ্রাস পায়
  • শুক্রাণুর গুণগত মান কমে যায়
  • সক্রিয়তা বা ‘মোটিলিটি’ কমে যায়
  • ডিএনএ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে

ফলে বাড়তে থাকে বন্ধ্যত্বের ঝুঁকি

শুধু হরমোনই নয়, ঘুম কম হলে শরীরে প্রদাহও বাড়ে, যা শুক্রাণু উৎপাদনকে আরও ব্যাহত করে।

ঘুম কমে গেলে আরও কী ঝুঁকি বাড়ে?

জৈবিক ঘড়ি বিঘ্নিত হলে বাড়তে পারে—

  • টাইপ–২ ডায়াবিটিসের ঝুঁকি
  • স্থূলতা
  • উচ্চ রক্তচাপ
  • হৃদ্‌রোগ
  • ক্যানসারের সম্ভাবনা
  • স্লিপ অ্যাপনিয়ার প্রবণতা
  • ডিপ্রেশন ও উদ্বেগ

এই সব মিলিয়ে টেস্টোস্টেরন আরও কমতে থাকে এবং শুক্রাণুর মান আরও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

ঘুম ঠিক রাখবেন কী ভাবে?

  • প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমোতে যান
  • ঘুমোতে যাওয়ার আগে অন্তত ১ ঘণ্টা ফোন/ল্যাপটপ বন্ধ রাখুন
  • ঘর অন্ধকার ও ঠান্ডা রাখুন
  • রাতে ভারী খাবার বা ক্যাফেইন এড়িয়ে চলুন
  • চাপ কমাতে মেডিটেশন বা শ্বাস–প্রশ্বাসের ব্যায়াম করুন
  • দিনে ২০–৩০ মিনিট রোদে হাঁটলে সার্কাডিয়ান রিদম স্বাভাবিক থাকে

শেষ কথা

রাতে কম ঘুম হওয়া যেন কোনও ব্যাপারই নয়—এমন ধারণা ভুল। বিশেষ করে পুরুষদের ক্ষেত্রে এ অভ্যাস ভবিষ্যতে প্রজনন সমস্যাকে ডেকে আনতে পারে। তাই সুস্থ জীবনধারা বজায় রেখে কমপক্ষে ৭–৮ ঘণ্টা ভাল ঘুম জরুরি।

শরীর বিশ্রাম চাই। আর ঘুমই সেই বিশ্রামের সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র।

Read more

Local News