Saturday, March 22, 2025

মহিলা নাগা সাধ্বী: কীভাবে হওয়া যায় এবং তাঁদের জীবন কেমন?

Share

মহিলা নাগা সাধ্বী

ভারতীয় আধ্যাত্মিক সংস্কৃতির একটি বিশেষ অধ্যায় হল নাগা সাধুদের জীবনযাপন। পুরুষ নাগা সন্ন্যাসীদের জীবন সম্পর্কে অনেকেই জানেন, কিন্তু মহিলা নাগা সাধ্বীদের জীবন ও তাঁদের সাধনার পথ এখনও অনেকটাই রহস্যে ঘেরা। কুম্ভমেলা, মহাকুম্ভ বা পূর্ণকুম্ভের সময় তাঁদের উপস্থিতি দেখতে পাওয়া গেলেও, তাঁদের জীবনযাত্রা ও নাগা সাধ্বী হওয়ার প্রক্রিয়া সাধারণ মানুষের কাছে কমই জানা।

মহিলা নাগা সাধ্বী হওয়া: কঠিন কিন্তু পবিত্র সাধনা

মহিলা নাগা সাধ্বী হওয়া পুরুষ নাগা সন্ন্যাসীদের তুলনায় অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং। শারীরিক পরীক্ষার পাশাপাশি তাঁদের মানসিক ও আধ্যাত্মিক উন্নতির মাধ্যমে কঠোর পথ অতিক্রম করতে হয়। একজন মহিলা যদি নাগা সাধ্বী হতে চান, তাঁকে প্রথমত গুরুর নির্দেশনায় ৬ থেকে ১২ বছর পর্যন্ত ব্রহ্মচর্য পালন করতে হয়। এই সময়ে তাঁকে কঠোর শৃঙ্খলা, শুদ্ধতা এবং আধ্যাত্মিক চর্চার মধ্যে থাকতে হয়।

তাঁকে প্রমাণ করতে হয় যে, তিনি ঈশ্বরের আরাধনার জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত। কোনও ব্যক্তিগত আকাঙ্ক্ষা, পিছুটান বা সংসারজীবনের প্রতি কোনও মোহ যেন না থাকে।

মহিলা নাগা সাধ্বী

আধ্যাত্মিক পরীক্ষার ধাপ

নাগা সাধ্বী হওয়ার প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত জটিল এবং প্রতিটি ধাপে তাঁদের যোগ্যতা প্রমাণ করতে হয়। ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী, নাগা সাধ্বী হতে গেলে জীবিত অবস্থায় পিন্ডদান করতে হয়। সাধারণত কুম্ভ বা মহাকুম্ভের সময় গোপনে এই আচার সম্পন্ন হয়। পিন্ডদান অর্থাৎ জীবিত অবস্থায় নিজের মৃত্যুর প্রতীকী প্রকাশ করে নতুন জীবনে প্রবেশ করার শপথ। এই প্রক্রিয়া তাঁদের সংসারজীবনের সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করার প্রতীক।

পিন্ডদানের পর মহিলাদের মাথার চুল মুন্ডন করতে হয়। এই ন্যাড়া হওয়া তাঁদের নতুন জীবনের সূচনা এবং ভৌতিক আত্ম-পরিচয়ের অংশ। পুরুষ নাগা সন্ন্যাসীরা যেখানে লম্বা চুল ও জটা রাখেন, মহিলা সাধ্বীরা সেখানে মুন্ডিত মাথা নিয়েই সাধনা শুরু করেন।

নাগা সাধ্বীদের পোশাক ও জীবনধারা

পুরুষ নাগা সন্ন্যাসীরা সম্পূর্ণ নগ্ন হয়ে থাকেন। এটি তাঁদের সংসার ও জাগতিক মোহের প্রতি সংযোগহীনতার প্রতীক। তবে মহিলা নাগা সাধ্বীদের ক্ষেত্রে এই নিয়মটি প্রযোজ্য নয়। তাঁরা গেরুয়া বস্ত্র পরেন, তবে সেই পোশাক সেলাই করা হয় না। এটি তাঁদের সরলতা ও আধ্যাত্মিকতার প্রতীক।

তাঁদের জীবন কঠোর ব্রহ্মচর্য, নিরামিষ আহার এবং নিয়মিত যোগাভ্যাস ও প্রার্থনার মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলে। তাঁরা বিভিন্ন মঠে গুরুদের নির্দেশে আধ্যাত্মিক চর্চা চালিয়ে যান।

মহিলা নাগা সাধ্বী হওয়া কেন কঠিন?

মহিলা নাগা সাধ্বীদের জন্য এই পথ কেন আরও কঠিন? কারণ তাঁদের শারীরিক ও মানসিকভাবে পুরুষদের তুলনায় বেশি প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। সমাজের প্রচলিত নিয়ম এবং ব্যক্তিগত জীবন ত্যাগ করার ক্ষেত্রে তাঁদেরকে বারবার প্রমাণ করতে হয় যে, তাঁরা প্রকৃত অর্থে ঈশ্বরের সাধনায় নিজেদের উৎসর্গ করতে প্রস্তুত।

নাগা সাধ্বী হওয়ার মাহাত্ম্য

নাগা সাধ্বী হওয়ার সিদ্ধান্ত শুধু একটি আধ্যাত্মিক যাত্রা নয়, এটি এক ধরনের অভ্যন্তরীণ বিপ্লব। সংসারের মোহমায়া ত্যাগ করে তাঁরা সম্পূর্ণভাবে ঈশ্বরের পথে নিজেদের নিবেদন করেন। তাঁদের এই কঠোর জীবনযাত্রা ভারতীয় আধ্যাত্মিকতার একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

মহিলা নাগা সাধ্বীদের জীবন রহস্যময় এবং কঠিন হলেও, তাঁদের আত্মত্যাগ এবং আধ্যাত্মিকতা সাধারণ মানুষের মধ্যে গভীর প্রভাব ফেলে। তাঁদের জীবন থেকে আমরা শিখতে পারি শৃঙ্খলা, আত্মত্যাগ এবং আধ্যাত্মিক জীবনের গভীরতা।

সত্যিকারের সাধ্বী নাকি শুধুই লোকদেখানো! নেটপ্রভাবী হর্ষা রিচারিয়া নিয়ে কেন এত বিতর্ক?

Read more

Local News