মহারাষ্ট্রে নির্মম খুন!!
ঘর ছেড়ে রুটির সন্ধানে মহারাষ্ট্রে গিয়েছিলেন মালদহের এক যুবক। উদ্দেশ্য ছিল পরিবারের মুখে অন্ন তুলে দেওয়া। কিন্তু সে যাত্রা রোজগার নয়, ফিরল শুধু নিথর দেহ।
মালদহের কালিয়াচক থানার সুজাপুর এলাকার বাসিন্দা সাদ্দাম শেখ (৩২) কাজ করতেন মহারাষ্ট্রের জলগাঁও জেলার একটি নির্মাণ প্রকল্পে। হঠাৎই তাঁর খুনের খবর এসে পৌঁছয় পরিবারের কাছে।
কী ঘটেছিল সেদিন?
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, গত শনিবার রাতে সাদ্দামকে নির্মাণ সাইটের কাছেই ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে খুন করা হয়। তাঁর দেহ পড়ে ছিল নির্মীয়মাণ একটি বহুতলের পিছনের খোলা মাঠে।
প্রথমে সাদ্দামের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। সহকর্মীরা অনেক খোঁজাখুজির পর তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার করে স্থানীয় থানায় খবর দেন। পুলিশ এসে দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠায়।
সন্দেহের তীর সহকর্মীর দিকেই
জলগাঁও পুলিশ ইতিমধ্যেই একটি খুনের মামলা রুজু করেছে। পুলিশ সূত্রে খবর, প্রাথমিক তদন্তে সন্দেহভাজন হিসেবে উঠে এসেছে একজন সহকর্মীর নাম, যিনি একই প্রকল্পে সাদ্দামের সঙ্গে কাজ করতেন। ব্যক্তিগত রাগ, হিংসা বা টাকার লেনদেন সংক্রান্ত বিবাদের জেরেই এই হত্যাকাণ্ড বলে মনে করা হচ্ছে।
সাদ্দামের পরিবারের দাবি, “ও কারও সঙ্গে ঝামেলায় জড়াত না। সারাদিন খেটেখুটে বাড়িতে ফোন করে মেয়ের কথা বলত। কেউ পরিকল্পনা করেই ওকে মারল।”
অসহায় পরিবার
সাদ্দামের স্ত্রী ও একমাত্র কন্যা সুজাপুরেই থাকেন। মেয়ের বয়স মাত্র চার বছর। এই আকস্মিক মৃত্যুতে কার্যত ভেঙে পড়েছে গোটা পরিবার।
মালদহ থেকে জলগাঁও পর্যন্ত দেহ আনতে স্থানীয় প্রশাসনের সাহায্য চেয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। স্থানীয় পঞ্চায়েত ও ব্লক প্রশাসন জানিয়েছে, তাঁরা যত দ্রুত সম্ভব সাহায্য করার চেষ্টা করছেন।
পরিযায়ী শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন
সাদ্দামের মৃত্যুর ঘটনাটি আবারও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল—অন্য রাজ্যে কাজ করতে যাওয়া বাংলার হাজার হাজার শ্রমিক কতটা অনিরাপদ। যাঁরা সামান্য রোজগারের আশায় শত শত কিমি দূরে চলে যান, তাঁদের জীবনের ঝুঁকি কতটা বড় তা এ ঘটনা ফের প্রমাণ করল।
যেখানে শ্রমিকদের কাজের পরিবেশ সুরক্ষিত হওয়া উচিত ছিল, সেখানে তাদের জীবন যেন সস্তা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বারবার এমন ঘটনায় উদ্বেগ বাড়ছে প্রশাসনের পাশাপাশি সচেতন মহলেও।
প্রশাসনের দাবি ও পরবর্তী পদক্ষেপ
মহারাষ্ট্র পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত দ্রুতগতিতে চলছে। সন্দেহভাজনের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফ থেকেও স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।
একটা সাধারণ পরিবার, যাদের জীবনের ভরসা ছিল একটাই উপার্জনক্ষম সদস্য—সেই ছন্দটা এক মুহূর্তে ভেঙে গেল।
সাদ্দামের মৃত্যু শুধু একটি পরিবারের শোক নয়, বরং হাজার হাজার পরিযায়ী শ্রমিকের অনিরাপত্তার প্রতিচ্ছবি। তাঁর মৃত্যুর সঠিক বিচার ও পরিযায়ীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি।
মায়ের খরচ চালাতে অস্বীকৃতি! আদালতের রায়, খোরপোশ ঠিক করবেন কাল্যাণীর এসডিও

