Monday, December 1, 2025

মহাজাগতিক বিস্ময়! ছোট্ট সূর্যকে ঘিরে ঘুরছে এক বিশাল গ্রহ, বিজ্ঞানীরা স্তব্ধ

Share

ছোট্ট সূর্যকে ঘিরে ঘুরছে এক বিশাল গ্রহ, বিজ্ঞানীরা স্তব্ধ!

‘প্লানেত’—গ্রিকদের দেওয়া এই শব্দটির অর্থ ছিল ‘পরিভ্রমণকারী’। আর ঠিক সেই অর্থকেই বাস্তব রূপ দিয়ে পৃথিবী থেকে প্রায় ২৪০ আলোকবর্ষ দূরে মহাকাশে আবিষ্কৃত হয়েছে এক অভাবনীয় দৃশ্য। এক ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র নক্ষত্রের চারদিকে নিরন্তর ঘুরছে এক বিশাল আকারের গ্রহ, যা বিজ্ঞানীদের কল্পনার সীমাকেও ছাপিয়ে গেছে। আকারে সে প্রায় শনির সমান হলেও তার কেন্দ্রবিন্দু, অর্থাৎ যে নক্ষত্রকে সে প্রদক্ষিণ করছে, তার ভর সূর্যের মাত্র এক-পঞ্চমাংশ! আয়তনেও সে সূর্যের তুলনায় অনেকটাই ছোট—বৃহস্পতির থেকে সামান্য বড় মাত্র।

এই মহাজাগতিক বিরল জুটির কেন্দ্রবিন্দু হল টিওয়াই-৬৮৯৪ নামের এক লাল বামন নক্ষত্র, যাকে ঘিরে আবর্তিত হচ্ছে শনির সমান একটি গ্যাসীয় দৈত্যগ্রহ। সৌরজগতের বাইরে থাকা এমন গ্রহদেরই বলে ‘এক্সোপ্ল্যানেট’। সাধারণভাবে এই রকম ক্ষুদ্র নক্ষত্রের কক্ষপথে এত বড় গ্রহের উপস্থিতি বিজ্ঞানীদের কাছে এক বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছে। এই গ্রহটি যে দূরত্বে অবস্থান করছে তা পৃথিবী ও সূর্যের দূরত্বের এক-চল্লিশ ভাগ মাত্র! ফলে মাত্র তিন দিনে একবার সম্পূর্ণ আবর্তন শেষ করে সে।

এই আবিষ্কারের নেপথ্যে রয়েছে নাসার ‘ট্রানজিটিং এক্সোপ্ল্যানেট সার্ভে স্যাটেলাইট’ (TESS), যা ‘সিংহ ছায়াপথে’ এই অদ্ভুত জোড়াকে শনাক্ত করেছে। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বলছেন, এত ক্ষুদ্র এক নক্ষত্র এত বড় একটি গ্রহকে নিজের কক্ষপথে ধরে রাখছে, এ যেন মহাকর্ষীয় বলের সাধারণ নিয়মেরই ব্যতিক্রম!

এই অদ্ভুত বৈজ্ঞানিক রহস্যের উত্তর খুঁজতে গিয়ে ব্রিটেনের ওয়ারউইক বিশ্ববিদ্যালয়ের এডওয়ার্ড ব্রায়ান্ট ও লন্ডনের মুলার্ড স্পেস সায়েন্স ল্যাবরেটরির ভিনসেন্ট ভ্যান আইলেন বিশ্লেষণ করেছেন তার উৎস ও গঠন। তাঁদের মতে, উত্তর লুকিয়ে রয়েছে নক্ষত্র ও গ্রহের সৃষ্টি-প্রক্রিয়ার ভিতরে। একটি গ্যাস ও ধূলির মেঘ—যাকে আণবিক মেঘ বলা হয়—সেই থেকেই জন্ম নেয় নক্ষত্র ও প্রোটোপ্ল্যানেটারি ডিস্ক। সাধারণত ছোট আণবিক মেঘ থেকে তৈরি হয় ছোট নক্ষত্র, যাদের চারপাশে বড় গ্রহ তৈরি হওয়ার মতো উপাদান থাকেই না।

তবে ব্যতিক্রম ঘটেছে এই ক্ষেত্রে। ব্রায়ান্ট বলেন, “একটি বিশাল গ্রহ তৈরি করতে হলে দ্রুত একটি কঠিন কেন্দ্রে গঠন করে তার উপর প্রচুর গ্যাস জমা করতে হয়। কিন্তু এ সবকিছু ঘটতে হয় নক্ষত্রটি আলো ছড়ানোর আগেই, কারণ তারপরে ডিস্ক অদৃশ্য হয়ে যায়।” টিওয়াই-৬৮৯৪ তার অতি নিকটবর্তী এক্সোপ্ল্যানেটকে এমন ভাবেই সাহায্য করেছে বিশাল আকার ধারণ করতে।

এই ঘটনাটি জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের কাছে কেবল এক বৈজ্ঞানিক কৌতূহলের বিষয় নয়, বরং এটি মহাকাশের বিবর্তন ও গ্রহ-নির্মাণ সংক্রান্ত তত্ত্বগুলিকে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে। বাস্তবিকই, মহাকাশে কিছুই অসম্ভব নয়—এই আবিষ্কার যেন তার এক নিখুঁত প্রমাণ।

মুম্বইয়ের বৃষ্টিতে ভিজে দীপিকার প্রথম প্রেম: মুজ্জামিল ইব্রাহিমের উজাড় স্মৃতির কথা

Read more

Local News