Thursday, January 30, 2025

মহাকুম্ভের ভয়াবহ দুর্ঘটনা: ভিড়ের চাপে ভেঙে পড়ল ব্যারিকেড, বহু আহত ও মৃতের আশঙ্কা

Share

মহাকুম্ভের ভয়াবহ দুর্ঘটনা

প্রয়াগরাজে মহাকুম্ভে পুণ্যস্নানের সময় ঘটে গেল এক মর্মান্তিক ঘটনা। প্রবল ভিড়ের চাপে ভেঙে পড়ল ব্যারিকেড, পদপিষ্ট হয়ে বহু মানুষ আহত হয়েছেন, আশঙ্কা করা হচ্ছে অনেকের মৃত্যু হয়েছে। ভিড়ের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে চরম আতঙ্ক, হাসপাতালে হাসপাতালে চলছে পরিজনদের খোঁজ।

ভিড়ের চাপে মৃত্যুর ভয়াবহ ছবি

মহাকুম্ভে গঙ্গা, যমুনা ও অন্তঃসলিলা সরস্বতীর সঙ্গমে পুণ্যস্নানের জন্য বুধবার রাত থেকেই লক্ষ লক্ষ মানুষের ভিড় জমতে থাকে। বিশেষত মৌনী অমাবস্যার ‘শাহি স্নান’-এর জন্য তীর্থযাত্রীদের উন্মাদনা ছিল তুঙ্গে। কিন্তু সে রাতেই ঘটে যায় এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। সামনে যাওয়ার পথ অবরুদ্ধ হয়ে পড়ায় পিছন থেকে ক্রমাগত চাপ বাড়তে থাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই ব্যারিকেড ভেঙে পড়ে এবং তীর্থযাত্রীদের একাংশ মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। মুহূর্তের মধ্যে তাদের উপর দিয়ে গড়িয়ে যেতে থাকে অসংখ্য মানুষের পদচিহ্ন।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায় চরম বিশৃঙ্খলার চিত্র উঠে এসেছে। কেউ জানতেন না, কোথায় যেতে হবে। কেউ অন্ধকারে দিশাহীন হয়ে পড়েছিলেন। কেউ বা চিৎকার করছিলেন সাহায্যের জন্য, কিন্তু ভিড়ের চাপে কারও কণ্ঠস্বর শোনা যাচ্ছিল না।

“মায়ের হাত হারিয়ে ফেললাম” – হৃদয়বিদারক দৃশ্য

এই দুর্ঘটনায় কেউ হারিয়েছেন তাঁর বোন, কেউ বাবা-মা, কেউ বা তাঁদের সন্তানকে। এক অসহায় বাবা ছেলেকে খুঁজে পেতে হাসপাতালে ঘুরছেন। মর্গের বাইরে স্তব্ধ হয়ে অপেক্ষা করছেন কেউ কেউ। ভিড়ের চাপে নিঃশেষ হয়ে যাওয়া প্রিয়জনদের ফিরে পাওয়ার আশায় কাটছে মুহূর্তগুলো।

উত্তরপ্রদেশের ফতেহপুরের বাসিন্দা রাম সিংহ নিজে আহত হলেও প্রাণে বেঁচে গেছেন। তিনি জানান, “ভিড়ের চাপে পড়ে গিয়ে চিৎকার করছিলাম, কিন্তু কেউ সাহায্য করতে পারেননি। বন্ধুরাও আমাকে খুঁজে পায়নি। কোনও রকমে নিজেকে টেনে এনে পুলিশের সাহায্যে হাসপাতালে পৌঁছাই।”

ব্যবস্থার অভাবেই বিপর্যয়?

মহাকুম্ভে বিশাল জনসমাগমের কারণে যথাযথ পরিকল্পনা না থাকলে এমন ঘটনা ঘটতে বাধ্য। বিবেক মিশ্র নামের এক তীর্থযাত্রী জানান, “স্নান করার পর মানুষজন কোথায় যাবেন, সেই নির্দেশনা স্পষ্ট ছিল না। ফলে একেক জন একেক দিকে ছুটতে শুরু করেন। ভিড় নিয়ন্ত্রণের জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থাও ছিল না। মাথায় ভারী মালপত্র নিয়ে চলতে গিয়ে অনেকেই ভারসাম্য হারিয়ে পড়ে যান, এরপরই ঘটতে থাকে একের পর এক দুর্ঘটনা।”

রাজ্য ও কেন্দ্রীয় প্রশাসনের তৎপরতা

এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার খবর পেয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথকে ফোন করে সমস্ত রকম সাহায্যের আশ্বাস দেন। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও সরাসরি যোগাযোগ করে পরিস্থিতি সম্পর্কে খোঁজ নেন। বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী (NDRF) এবং র‌্যাপিড অ্যাকশন ফোর্স (RAF) ঘটনাস্থলে উদ্ধারকাজ চালাচ্ছে। পরিস্থিতি যাতে আরও খারাপ না হয়, তার জন্য মোতায়েন করা হয়েছে জাতীয় নিরাপত্তা বাহিনী (NSG)-কেও।

পরিস্থিতি কীভাবে সামলানো হবে?

এই ভয়াবহ অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে প্রশাসনকে ভবিষ্যতে আরও কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ব্যারিকেডের স্থায়িত্ব, ভিড় নিয়ন্ত্রণের যথাযথ পরিকল্পনা, পরিষ্কার দিকনির্দেশনা এবং পর্যাপ্ত উদ্ধার ও চিকিৎসা ব্যবস্থাই একমাত্র এমন দুর্ঘটনা রুখতে পারে।

বর্তমানে আহতদের চিকিৎসা চলছে এবং উদ্ধারকাজ অব্যাহত। কিন্তু যারা তাঁদের প্রিয়জনকে হারিয়েছেন, তাদের কাছে এই ক্ষতি কোনোভাবেই পূরণীয় নয়। মহাকুম্ভের পুণ্যস্নান, যা আধ্যাত্মিকতা ও শান্তির প্রতীক, তা আজ হয়ে উঠেছে ভয়াবহ এক ট্র্যাজেডির স্মারক।

ত্রিবেণী সঙ্গম থেকে পুণ্যার্থীদের সরাতে কঠোর পদক্ষেপ, ঘোড়সওয়ার পুলিশ নামাল যোগী সরকার

Read more

Local News