মলদ্বীপের অর্থনৈতিক সংকট!
কখনও পর্যটকদের স্বর্গরাজ্য, কখনও ভূরাজনৈতিক দ্বন্দ্বের কেন্দ্রবিন্দু— মলদ্বীপ এখন এক ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটের মুখে। দেশটির মাথার উপর বিশাল ঋণের বোঝা, যা ২০২৫ ও ২০২৬ সালের মধ্যে শোধ করতেই হবে। কিন্তু সমস্যা হলো, ধার চেয়েও মিলছে না কাঙ্ক্ষিত সহায়তা। এমনকি দীর্ঘদিনের মিত্র চিনও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠছে।
ঋণের চাপে দিশেহারা মলদ্বীপ
আন্তর্জাতিক অর্থভান্ডার (আইএমএফ)-এর আগেই সতর্কবার্তা ছিল, মলদ্বীপ বড় অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। দেশটির বৈদেশিক ঋণ বর্তমানে প্রায় ৩৪০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে, যার একটি বড় অংশই ভারতের ও চিনের কাছ থেকে নেওয়া।
সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো ২০২৫ সালে ৬০ কোটি ডলার এবং ২০২৬ সালে ১০০ কোটি ডলার পরিশোধের বাধ্যবাধকতা। অথচ দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার ভান্ডার একেবারে তলানিতে এসে ঠেকেছে।
পর্যটননির্ভর অর্থনীতি, কিন্তু আয় কমছে
মলদ্বীপের অর্থনীতির প্রধান স্তম্ভ পর্যটন। দেশের মোট আয়ের এক তৃতীয়াংশই আসে এই খাত থেকে। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পর্যটনের প্রবাহ কমেছে। ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক টানাপোড়েনের কারণে বহু ভারতীয় পর্যটক মলদ্বীপে না গিয়ে অন্য দেশকে বেছে নিয়েছেন। এতে পর্যটন খাত থেকে প্রত্যাশিত আয় আসছে না।
সঙ্কট সামলাতে সরকারের কঠোর পদক্ষেপ
এই চরম সংকটের সময়ে মলদ্বীপ সরকার একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে—
- পর্যটকদের উপর কর বৃদ্ধি
- সরকারি কর্মচারীদের বেতন কমানো
- রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার শেয়ার বিক্রি
- বিমানবন্দরের সম্প্রসারণ ও নতুন হোটেল নির্মাণ
এছাড়াও উপসাগরীয় দেশগুলোর কাছে আর্থিক সহায়তার আবেদন করা হয়েছে, কিন্তু এখনও তেমন সাড়া মেলেনি।
চিনের কাছেও সহায়তা চেয়ে হতাশা
মলদ্বীপ সরকার চায়না ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক থেকে ২০ কোটি ডলার বাজেট সহায়তা চেয়েছে এবং ঋণ পুনর্গঠনের অনুরোধ জানিয়েছে। তবে আশ্চর্যের বিষয়, মলদ্বীপের তথাকথিত ‘বন্ধু’ চিন এখনও কোনও স্পষ্ট বার্তা দেয়নি। অথচ প্রেসিডেন্ট মহম্মদ মুইজ্জু ক্ষমতায় আসার পর চিনের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ার চেষ্টা করেছেন এবং বেজিং সফরেও গিয়েছিলেন। এখন প্রশ্ন উঠছে— বিপদের দিনে কি মলদ্বীপকে পরিত্যাগ করছে চিন?
ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন ও প্রভাব
২০২৩ সালে মুইজ্জু ক্ষমতায় আসার পর ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটে। ভারতীয় সেনাদের মলদ্বীপ ছাড়ার নির্দেশ দেন তিনি, যা দুই দেশের সম্পর্কে ফাটল ধরায়। এরপরই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর লক্ষদ্বীপ সফরের সময় মলদ্বীপের কয়েকজন মন্ত্রীর কুরুচিকর মন্তব্য বিতর্ক সৃষ্টি করে। ফলে বহু ভারতীয় পর্যটক মলদ্বীপ বয়কটের ডাক দেন, যা দেশটির পর্যটন শিল্পে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
তবে সংকট বাড়তে থাকায় মুইজ্জু পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন। ভারত সফর করেন এবং প্রতিশ্রুতি দেন যে মলদ্বীপ ভারতের নিরাপত্তা কখনো বিঘ্নিত হতে দেবে না। এর ফলস্বরূপ, ভারত মলদ্বীপকে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে ৬০০ কোটি টাকা সাহায্য বরাদ্দ করেছে।
ভবিষ্যৎ কী বলছে?
বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, যদি এই সংকট নিয়ন্ত্রণে আনা না যায়, তাহলে ২০২৯ সালের মধ্যে মলদ্বীপের ঋণের বোঝা ১১০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে। যা দেশটির জন্য ভয়াবহ আর্থিক বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে, শ্রীলঙ্কার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।
পর্যটন বৃদ্ধি ও ভারত থেকে মুদ্রা বিনিময় চুক্তি স্বস্তি দিলেও এটি দীর্ঘমেয়াদে সংকট সমাধানের জন্য যথেষ্ট নয়। কাঠামোগত দুর্বলতা, আমদানির ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা এবং অর্থনীতির একমুখী প্রবাহ পরিবর্তন না হলে মলদ্বীপের অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ খুব একটা উজ্জ্বল নয়।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে— এই সংকট থেকে বেরিয়ে আসতে মলদ্বীপ আদৌ সক্ষম হবে তো? নাকি ঋণের ফাঁদে পড়ে দেশটির অর্থনীতি এক ভয়াবহ বিপর্যয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে?
ন’মাস পর পৃথিবীতে ফিরছেন সুনীতা উইলিয়ামস! নাসা জানাল অবতরণের নির্দিষ্ট সময়