Wednesday, April 9, 2025

“মমতা জেলে যাবেন!” — বিধানসভা ভোটের আগে চাপ বাড়াচ্ছে বিজেপি

Share

মমতা জেলে যাবেন!

পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচন হতে আর বড়জোর ন’মাস বাকি। এই সময়ের মধ্যে রয়েছে উৎসব, ছুটি, রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ, আর ঠিক তার মধ্যেই ফের রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়াতে মাঠে নামল বিজেপি। এবার তারা স্পষ্ট ভাষায় বলছে— মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর মন্ত্রিসভা জেলে যাবেন। এবং এই হুঁশিয়ারি যেন একেবারে নতুন কৌশল নয়, বরং একটা দীর্ঘমেয়াদি নির্বাচনী পরিকল্পনার অংশ।

গত বৃহস্পতিবার শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণার পরেই যেন বিজেপির এই আক্রমণ আরও জোরদার হয়। কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী এবং রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীকে দায়ী করে বলেন, ‘‘যে কোনও অযোগ্য প্রার্থীর চাকরি হয়েছে, তার দায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।’’

এর জবাবে মুখ্যমন্ত্রীও চুপ করে থাকেননি। তিনি পাল্টা বলেন, ‘‘চাকরি বাতিল হয়েছে, সেটা দুঃখজনক। কিন্তু যারা মামলায় প্রথমে গিয়েছিল, তারা তখন একবারও ভাবেনি কারা যোগ্য আর কারা অযোগ্য? সরকারকে তো ভাবার সুযোগই দেওয়া হয়নি।’’

কিন্তু এখানেই থেমে থাকেনি বিজেপি। বরং আরও একধাপ এগিয়ে গিয়ে বিজেপি বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী তুলে ধরেন ২০২২ সালের মে মাসে রাজ্য মন্ত্রিসভার একটি বৈঠকের নথি। তিনি দাবি করেন, সেই বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বেই অতিরিক্ত প্রায় ছ’হাজার শূন্যপদ তৈরির সিদ্ধান্ত হয়, এবং সেই ভিত্তিতে ‘অবৈধভাবে টাকা নিয়ে চাকরি বেচা’ হয়েছে।

শুভেন্দুর অভিযোগ— “যদি ওই বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সভাপতিত্ব করে থাকেন, তাহলে তিনি জানতেন সব কিছু। তাঁর ভাইপো এবং প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মাধ্যমে এই দুর্নীতির ছক আঁকা হয়েছিল।”

দিল্লি থেকে সুকান্ত মজুমদারও সেই সুরে বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বেই এই দুর্নীতি হয়েছে। তাঁর মন্ত্রিসভার প্রত্যেক সদস্যকেই জেলে যেতে হবে। একা পার্থ চট্টোপাধ্যায় এই দুর্নীতির জন্য দায়ী হতে পারেন না। পুরো ক্যাবিনেট দায়ী।”

বিজেপির এই কৌশল নতুন নয়। দিল্লি, ঝাড়খণ্ড, তেলঙ্গানা— সব জায়গায় ভোটের ঠিক আগে মুখ্যমন্ত্রী বা তাঁদের পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে প্রচার চালিয়েছে গেরুয়া শিবির। কোথাও কোথাও মুখ্যমন্ত্রী গ্রেফতারও হয়েছেন। বিজেপির বক্তব্য অনুযায়ী, এবার একই রাস্তায় হাঁটছে তারা বাংলাতেও।

বিরোধীরা বলছেন, বিজেপি আসলে প্রশাসনিক কাজকর্ম নয়, নির্বাচনমুখী রাজনীতিকেই সামনে রেখে এগোচ্ছে। তাতে কিছুটা হলেও চাপ তৈরি হচ্ছে তৃণমূল শিবিরে। যদিও মুখ্যমন্ত্রী এখনও প্রকাশ্যে লড়াইয়ের মেজাজেই রয়েছেন। তবে রাজনীতির চেনা হিসেব বলছে, সামনে আরও অনেক উত্তেজক পর্ব আসছে— যেখানে কেন্দ্র বনাম রাজ্য লড়াই আরও তীব্র হবে, আর সেই লড়াইয়ের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

এই মুহূর্তে প্রশ্ন একটাই— বিজেপির এই রাজনৈতিক চাপ কৌশল, বাংলার মাটি কতটা গ্রহণ করবে?

চাকরি বাতিলের ধাক্কায় শিক্ষক সঙ্কট, রাজ্যের স্কুলগুলিতে অনিশ্চয়তা

Read more

Local News