মমতাকেই সমর্থন
বিজেপি-বিরোধী I.N.D.I.A শিবিরে নেতৃত্বের প্রশ্নে নতুন করে জোরালো বিতর্ক শুরু হয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিরোধী জোটের নেতৃত্বে দেখতে চান বলে সাফ জানিয়ে দিলেন রাষ্ট্রীয় জনতা দলের (RJD) সুপ্রিমো লালুপ্রসাদ যাদব। তিনি স্পষ্টভাবে বলেছেন, “মমতাকে নেতৃত্বে বসানো উচিত। কারও আপত্তি থাকলেও তাতে কিছু আসে যায় না।” এই বক্তব্যের ফলে বিরোধী জোটের শরিকদের মধ্যে মমতার প্রতি সমর্থন আরও জোরালো হলো, যা কংগ্রেসের জন্য অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মমতার নেতৃত্বে এগোচ্ছে I.N.D.I.A শিবির
২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সর্বভারতীয় স্তরে বিজেপি-বিরোধী জোট গঠনের উদ্যোগ নেন। সেই উদ্যোগের ফলে গঠিত হয় I.N.D.I.A জোট, যার নামকরণও মমতারই করা। সম্প্রতি মমতা প্রকাশ্যে জানান যে, তিনি এই জোটকে নেতৃত্ব দিতে প্রস্তুত। তাঁর মতে, “বাংলায় থেকেই এই দায়িত্ব পালন করতে পারি। আমাকে সুযোগ দিলে সবকিছু মসৃণভাবে চালানোর চেষ্টা করব।”
লালুর সরাসরি সমর্থন
মমতার এই বক্তব্যের পরেই লালুপ্রসাদ যাদব তাঁর সমর্থন জানান। তিনি বলেন, “কংগ্রেসের আপত্তিতে কিছু যায় আসে না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যথেষ্ট যোগ্য নেত্রী। তাঁকেই নেতৃত্ব দেওয়া উচিত।” এর আগে লালুর ছেলে তেজস্বী যাদবও মমতার নেতৃত্বে আপত্তি না থাকার কথা বলেছিলেন। তবে তিনি জোর দিয়েছিলেন সর্বসম্মতির প্রয়োজনীয়তার ওপর।
অন্যান্য শরিকদের মতামত
শুধু লালু বা তেজস্বী নন, সমাজবাদী পার্টি, শিবসেনা (উদ্ধব), এবং YSR কংগ্রেস পার্টির নেতারাও মমতার প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। সমাজবাদী পার্টির মুখপাত্র উদয়বীর সিংহ বলেন, “মমতা যদি নেতৃত্ব দিতে চান, তবে জোটের বাকিদের বিষয়টি নিয়ে ভাবা উচিত। পশ্চিমবঙ্গে বিজেপিকে রুখে তিনি প্রমাণ করেছেন তাঁর যোগ্যতা।”
YSR কংগ্রেসের রাজ্যসভা সাংসদ বিজয়সাই রেড্ডি বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আদর্শ নেত্রী। তাঁর রাজনৈতিক এবং নির্বাচনী অভিজ্ঞতা I.N.D.I.A জোটের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।”
কংগ্রেসের অস্বস্তি
এদিকে, কংগ্রেসের অভ্যন্তরে মমতাকে নেতৃত্বে বসানোর বিষয়ে আপত্তি তোলা হয়েছে। কংগ্রেস নেত্রী বর্ষা গায়কোয়াড় বলেন, “মমতা যা ভাবছেন, সেটা তাঁর দলের জন্য হতে পারে। কিন্তু আমরা কংগ্রেসের নীতি মেনে চলি।”
তবে কংগ্রেসের এই অবস্থান নিয়ে সমালোচনা করেছেন বামফ্রন্টের ডি রাজা। তিনি বলেন, “কংগ্রেসের আত্মসমীক্ষা করা উচিত। তারা যদি শরিকদের কথা শুনত, তবে হরিয়ানা এবং মহারাষ্ট্রের ফলাফল অন্যরকম হতে পারত।”
তৃণমূলের আহ্বান
তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় কংগ্রেসকে অহং সরিয়ে জোটের স্বার্থে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁর মতে, “কংগ্রেসের নেতৃত্বে I.N.D.I.A জোট সফল হয়নি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নেতৃত্বে আনলে জোটের ফলাফল ভালো হবে।”
ভবিষ্যতের দিকনির্দেশ
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, মমতার নেতৃত্ব নিয়ে জোটের শরিকদের মধ্যে আলোচনা আরও তীব্র হবে। এই বিষয়ে শীঘ্রই বৈঠকে বসতে পারেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল এবং শরদ পওয়ার। তাঁদের সমর্থন পেলে মমতার অবস্থান আরও দৃঢ় হতে পারে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে I.N.D.I.A শিবির কতটা এগিয়ে যেতে পারে, তা সময়ই বলবে। তবে লালুপ্রসাদ যাদবের মতো প্রবীণ নেতার সমর্থন পাওয়া মমতার রাজনৈতিক অবস্থানকে অনেকটাই শক্তিশালী করে তুলেছে। কংগ্রেস এখন কী কৌশল নেবে, সেটাই দেখার বিষয়।

