মণিপুরে প্রতিবাদের নতুন রূপ
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মণিপুরে সম্প্রতি একটি ভিন্নধর্মী প্রতিবাদের সাক্ষী হলো দেশ। কালো পোশাকে সজ্জিত মানুষজন, কালো কাপড়ের মাস্ক, এবং প্রতীকী কফিন নিয়ে কুকি জনজাতির মানুষজন চূরাচাঁদপুরে একটি প্রতিবাদ মিছিলের আয়োজন করেন। তাঁদের দাবিতে ছিল একটাই কথা—‘জাস্টিস ফর ইন্ডিজেনাস পিপল’।
এই স্লোগান মনে করিয়ে দেয় দিল্লিতে মডেল জেসিকা লালের হত্যাকাণ্ডের পরে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়া ‘জাস্টিস ফর জেসিকা’ আন্দোলনের কথা। মণিপুরের এই প্রতিবাদটি ঐতিহাসিক ‘জাস্টিস’ স্লোগানগুলির মতোই ন্যায়বিচারের দাবিকে সামনে নিয়ে এসেছে।
স্লোগানের ইতিহাস এবং মণিপুরের প্রসঙ্গ
‘জাস্টিস ফর’ স্লোগান ভারতের ন্যায়বিচার আন্দোলনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ১৯৯৯ সালে জেসিকা লালের হত্যার পর এই স্লোগান হয়ে ওঠে একটি প্রতীকী প্রতিবাদ। এর পরে রিজ়ওয়ানুর রহমানের মৃত্যু থেকে শুরু করে কাঠুয়ার নাবালিকার ধর্ষণ ও হত্যার মতো ঘটনাগুলিতে একই স্লোগান ব্যবহার করে প্রতিবাদ করেছে জনগণ। বাংলাতেও সাম্প্রতিককালে আরজি কর মেডিকেল কলেজ কাণ্ডে এই স্লোগান শোনা গিয়েছে। মণিপুরের পাহাড়ি অঞ্চলে এই প্রথমবার ‘জাস্টিস ফর ইন্ডিজেনাস পিপল’ নামে স্লোগান উঠল, যা স্থানীয় সমস্যাগুলির প্রতিফলন ঘটিয়েছে।
মণিপুরে অশান্তির সূচনা
মণিপুরে সাম্প্রদায়িক অশান্তির শুরু ২০২৩ সালের মে মাসে। মণিপুর হাই কোর্টের নির্দেশনায় মেইতেই জনগোষ্ঠীকে তফসিলি জনজাতির মর্যাদা দেওয়ার প্রস্তাব নিয়ে উত্তেজনা ছড়ায়। এর বিরোধিতায় পথে নামে কুকি এবং জ়ো সহ জনজাতি সংগঠনগুলি। এই সংঘাতকে কেন্দ্র করে প্রায় ৬০ হাজার মানুষ ঘরছাড়া হন, এবং নিহতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ২০০।
চূরাচাঁদপুর, যা মণিপুরের মিশ্র জনবসতিপূর্ণ পাহাড়ি অঞ্চলগুলির মধ্যে অন্যতম, এই সংঘাতের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে। কুকি জনজাতির দাবি, তাঁদের পূর্বপুরুষেরা মণিপুরের আদি বাসিন্দা। তবে, তাঁদের মিজোরাম ও মায়ানমার থেকে আগমনের ইতিহাস নিয়েও বিতর্ক রয়েছে।
প্রতিবাদের মূল বার্তা
কুকি জনজাতির মিছিলে নকল কফিন ছিল, যা তাঁদের নিহত পরিজনদের প্রতি সম্মান জানায়। স্লোগান ‘জাস্টিস ফর ইন্ডিজেনাস পিপল’ তাঁদের অস্তিত্ব এবং অধিকার সুরক্ষার বার্তা বহন করে। কালো রঙের পোশাক এবং প্রতীকী কফিন নিয়ে এই প্রতিবাদ তাঁদের সাম্প্রতিক অশান্তি এবং নিপীড়নের বিরুদ্ধে এক নীরব কিন্তু দৃঢ় অবস্থান প্রকাশ করে।
ন্যায়বিচারের দীর্ঘ পথ
মণিপুরে চলমান সংঘাত এবং এর সামাজিক প্রভাব দেশব্যাপী এক গভীর প্রশ্ন তুলে ধরেছে। কুকি জনজাতির এই প্রতিবাদ শুধুমাত্র তাঁদের নিজস্ব অধিকারের দাবি নয়, বরং এটি দেশের প্রতিটি প্রান্তে নিপীড়িত মানুষের জন্য এক প্রতীকী আন্দোলন।
এই স্লোগান এবং প্রতিবাদ কেবলমাত্র স্থানীয় পর্যায়ে নয়, বরং গোটা দেশকে আবারও ন্যায়বিচারের জন্য একত্রিত হতে উদ্বুদ্ধ করবে বলে আশা করা যায়।

