Sunday, November 30, 2025

ভ্রূণের হৃদ্‌স্পন্দনের নেপথ্যে নজর: ত্রিমাত্রিক এমআরআই মডেলে আগাম সতর্কতার পথ খুলছে চিকিৎসা-বিজ্ঞান

Share

ভ্রূণের হৃদ্‌স্পন্দনের নেপথ্যে নজর!

]গর্ভাবস্থায় ভ্রূণের বৃদ্ধি ঠিকমতো হচ্ছে কি না—বিশেষত হৃদ্‌যন্ত্র ও মস্তিষ্কের মতো অঙ্গগুলির গঠন কতটা স্বাভাবিক—সেই প্রশ্ন বহু মায়ের মনেই উত্তাপ ছড়ায়। জন্মের পর অনেক সময়ই জানা যায়, শিশুর হৃদ্‌যন্ত্রের প্রকোষ্ঠে ছিদ্র রয়েছে, হার্টে ব্লকেজ আছে বা কোনও গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ সঠিক ভাবে তৈরি হয়নি। তখন চিকিৎসার পথ যেমন কঠিন হয়, তেমনই বাড়ে বিপদেরও আশঙ্কা। এই কারণেই গর্ভাবস্থার মধ্যেই ভ্রূণের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের গঠন ত্রিমাত্রিক ভাবে বিশ্লেষণ করা গেলে চিকিৎসকেরা আগেই ঝুঁকি চিহ্নিত করতে পারবেন—সেই লক্ষ্যেই এক অভিনব এমআরআই মডেল তৈরি করলেন এমআইটি-র গবেষকেরা।

শিশুদের হৃদ্‌যন্ত্রে ছিদ্র বা ভেন্ট্রিকুলার সেপ্টাল ডিফেক্ট—যাকে সাধারণ ভাষায় বলা হয় ‘হার্টে ছিদ্র’—নিয়ে জন্মানো শিশুদের সংখ্যা কম নয়। বলিউড অভিনেত্রী বিপাশা বসুর কন্যা দেবীর ক্ষেত্রেও জন্মের কিছু দিন পর এই রোগ ধরা পড়েছিল। মাত্র তিন মাস বয়সে ওপেন হার্ট সার্জারির মতো কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল চিকিৎসকদের। এমন উদাহরণই গবেষকদের ভাবিয়ে তুলছিল—কী করে এই ধরনের রোগ আগেভাগেই শনাক্ত করে শিশুকে বড় বিপদের হাত থেকে বাঁচানো যায়?

আমেরিকার ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি অর্থাৎ এমআইটি, হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুল এবং বস্টন চিলড্রেন’স হসপিটালের চিকিৎসকদের যৌথ উদ্যোগে তৈরি হয়েছে অত্যাধুনিক এই ত্রিমাত্রিক এমআরআই মডেল। প্রযুক্তিটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘ফিটাল এসএমপিএল’ (Fetal SMPL)। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-চালিত একটি শক্তিশালী অ্যালগরিদম ব্যবহার করে এই মডেল ভ্রূণের অঙ্গগঠনের নড়াচড়া থেকে শুরু করে প্রতিটি অংশের আকার-আকৃতি পর্যন্ত বিশদভাবে স্ক্যান করতে পারে।

এখন পর্যন্ত ভ্রূণের হৃদ্‌যন্ত্রের সমস্যা নির্ণয়ে ব্যবহৃত হত ফিটাল ইকোকার্ডিওগ্রাফি। এ ধরনের স্ক্যান ভ্রূণের হার্টের গঠন সম্পর্কে কিছুটা তথ্য দিলেও, সেখানে ত্রিমাত্রিক ছবির অভাব থাকায় জটিল ত্রুটি শনাক্ত করা দুরূহ হয়ে উঠত। কিন্তু ‘ফিটাল এসএমপিএল’-এর ক্ষেত্রে হার্ট, মস্তিষ্ক, ফুসফুস কিংবা মেরুদণ্ড—সবই ত্রিমাত্রিক ভিউতে ধরা পড়বে। কোথায় রক্তপ্রবাহে সমস্যা, কোন অংশে অস্বাভাবিক বৃদ্ধি বা সংকোচন দেখা যাচ্ছে, কোন জায়গায় ছিদ্র বা ব্লকেজের আশঙ্কা—সবই আগাম ধরা সম্ভব।

গবেষকের দাবি, এই থ্রিডি মডেল কেবল রোগ নির্ণয়েই নয়, ভবিষ্যতে ভ্রূণের ওপরে শল্যচিকিৎসার পরিকল্পনাতেও বিপ্লব ঘটাবে। চিকিৎসকেরা আগে থেকেই বুঝতে পারবেন কোন পদ্ধতি প্রয়োগ করলে ঝুঁকি কমবে এবং অস্ত্রোপচারের সময় কোন কোন অঙ্গ বিশেষভাবে নজরে রাখতে হবে।

এই প্রযুক্তি বিশেষ করে সেই সব ক্ষেত্রে অত্যন্ত কার্যকর হয়ে উঠতে পারে, যেখানে জন্মের পরপরই শিশুর অস্ত্রোপচার প্রয়োজন হয় বা জন্মের পর দেরি হলেই বিপদ বাড়তে পারে। জন্মের আগে চিকিৎসা পরিকল্পনা তৈরি হয়ে গেলে নবজাতকের প্রাণরক্ষা অনেকটাই সহজ হবে।

হৃদ্‌যন্ত্রের ছিদ্র, রক্তপ্রবাহের ত্রুটি, মস্তিষ্কের গঠনে অস্বাভাবিকতা কিংবা পেশী-হাড়ের বিকৃতি—এসব সমস্যা সময়মতো ধরা গেলে চিকিৎসার পথ খুলে যায় আরও দ্রুত। সেই কারণেই এই নতুন স্ক্যানিং মডেলকে চিকিৎসা-বিজ্ঞানীরা ভবিষ্যতের ‘লাইফসেভার টেকনোলজি’ বলে আখ্যা দিচ্ছেন।

বর্তমানে মডেলটি পরীক্ষামূলক পর্যায়ে থাকলেও, সফলতা মিললে ভবিষ্যতে বিশ্বজুড়ে মাতৃ-সন্তান স্বাস্থ্য পরিষেবায় বড় পরিবর্তন আনতে পারে এই ত্রিমাত্রিক এমআরআই স্ক্যান—এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা।

Read more

Local News