ভোরের কম্পনে কাঁপল প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপ!
শনিবার ভোরে ঘুম ভাঙার আগেই এক ভয়াবহ ঝাঁকুনি! দক্ষিণ-পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরের পাপুয়া নিউ গিনির নিউ ব্রিটেন দ্বীপ যেন আচমকাই থমকে গেল কম্পনের দোলায়। রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের তীব্রতা ছিল ৬.৯, যা কোনোভাবেই ছোটখাটো কম্পন নয়। তারও আধ ঘণ্টার মধ্যে এল দ্বিতীয় ধাক্কা—এইবার কম্পনের মাত্রা ছিল ৫.৩। এই জোড়া ভূকম্পনের ফলে তৈরি হয়েছে এক নতুন উৎকণ্ঠা, আর তাই সকালের আলো ফোটার আগেই জারি করা হয়েছে সুনামি সতর্কতা।
সমুদ্রের অতল থেকে উঠে আসা ভয়
ভূমিকম্পের উৎস ছিল সমুদ্রের নিচে, প্রায় ১০ কিলোমিটার গভীরে। ভূকম্পনের প্রভাবে সমুদ্রের জলস্তর অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। প্রশান্ত মহাসাগরীয় সুনামি সতর্কতা কেন্দ্র জানিয়েছে, নিউ ব্রিটেন দ্বীপের উপকূলবর্তী এলাকাগুলিতে তিন থেকে ন’ফুট পর্যন্ত উঁচু ঢেউ আছড়ে পড়তে পারে। সুনামির আশঙ্কায় সতর্কতা জারি হয়েছে পাপুয়া নিউ গিনির আরও কয়েকটি দ্বীপে। এমনকি, আশেপাশের দেশ সলোমন দ্বীপপুঞ্জেও এর প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ভূমিকম্পের বলয়ে থাকা দেশ, আশঙ্কা সর্বদাই সঙ্গী
পাপুয়া নিউ গিনি এমন এক ভূখণ্ড, যেটি ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চল ‘প্যাসিফিক রিং অফ ফায়ার’-এর অন্তর্গত। এই রিং-এর মধ্যে থাকা অধিকাংশ দেশেই মাঝেমধ্যেই ভূমিকম্প হয়। যদিও নিউ ব্রিটেন দ্বীপে জনবসতি তুলনামূলকভাবে কম, তবুও ভূমিধসের মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সম্ভাবনা থেকে যায়। এখনই কোনো বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির খবর মেলেনি, তবে স্থানীয় প্রশাসন ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
দক্ষিণ এশিয়ার প্রেক্ষাপটে অতীতের ধাক্কা
এই ভূমিকম্প এমন এক সময়ে এল, যখন দক্ষিণ এশিয়া এখনও মায়ানমারের ভয়াবহ কম্পনের ধাক্কা সামলে উঠতে পারেনি। মাত্র কয়েক দিন আগেই—২৮ মার্চ, সেখানে ৭.৭ ও ৬.৭ মাত্রার দু’টি ভূমিকম্পে মৃত্যু হয়েছিল তিন হাজারেরও বেশি মানুষের। ভেঙে পড়েছিল অসংখ্য বাড়িঘর, সেতু, এবং রাস্তাঘাট। এখনও সেখানে আফটারশকের আতঙ্ক কাটেনি। তার ঠিক এক সপ্তাহের মধ্যে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল আবার কেঁপে ওঠায় গোটা অঞ্চল জুড়ে সতর্কতা আরও বেড়েছে।
সুনামি আতঙ্ক: কতটা প্রস্তুত দ্বীপগুলি?
পাপুয়া নিউ গিনি ও আশেপাশের দ্বীপপুঞ্জে সুনামির ইতিহাস খুব পুরনো নয়। আগেও একাধিকবার এই অঞ্চল জলে ডুবে গিয়েছে বিশাল ঢেউয়ের জেরে। তাই প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রতি মানুষের মনস্তত্ত্বেও ভয় গভীরভাবে প্রোথিত। প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপকূলবর্তী বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরানোর কাজ শুরু হয়েছে। রেড অ্যালার্ট জারি হয়েছে বেশ কিছু এলাকায়।
শেষ কথা
ভূমিকম্প পৃথিবীর সেই বাস্তবতা, যাকে আটকানো সম্ভব নয়। কিন্তু তার প্রস্তুতি নেওয়া যায়। শনিবারের এই জোড়া ভূকম্পন আবারও মনে করিয়ে দিল, প্রাকৃতিক দুর্যোগ কতটা অনিশ্চিত এবং তা কত দ্রুত আঘাত হানতে পারে। আপাতত পাপুয়া নিউ গিনি এবং আশেপাশের দ্বীপগুলির দিকেই চোখ বিশ্ববাসীর। সবার প্রার্থনা একটাই—এই কম্পনের পরে যেন আর কোনো বড় বিপর্যয় না আসে।
ট্রাম্পের ‘পাল্টা শুল্ক’ ঘোষণার অপেক্ষায় বিশ্ব, ভারতের চিন্তা বাড়ছে!