মতুয়া ভোটের দখল নিতে মাঠে বিজেপি-তৃণমূল, সরব ঠাকুরবাড়িও!
২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটের এখনও প্রায় আট মাস বাকি। তবে এখনই রাজ্য রাজনীতিতে যেন শুরু হয়ে গেছে এক ‘বিরল যুদ্ধ’— লক্ষ্য, মতুয়া ভোটব্যাঙ্ক। ভোটের সময় যতই এগিয়ে আসছে, ততই উত্তপ্ত হচ্ছে ঠাকুরবাড়িকে ঘিরে বঙ্গ রাজনীতি। কারণ, বাংলার ১০০-র বেশি বিধানসভা কেন্দ্রে রয়েছে মতুয়া ভোটারদের গুরুত্বপূর্ণ উপস্থিতি। তার মধ্যে অন্তত ২১টি আসনে মতুয়া ভোটই সংখ্যাগরিষ্ঠ, যা ফল নির্ধারণে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
এক সময়ের তৃণমূলঘেঁষা মতুয়া ভোট আজ বিভাজিত
এক সময়ে মতুয়া সমাজ ছিল তৃণমূল কংগ্রেসের অন্যতম নির্ভরযোগ্য ভোটভিত্তি। ২০১১ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জয়ের নেপথ্যে বড় ভূমিকা ছিল এই সম্প্রদায়ের। কিন্তু ২০১৪ সাল থেকে সেই ছবি বদলাতে শুরু করে। ঠাকুরবাড়ির অন্দরেও বিভাজন তৈরি হয়। বনগাঁ লোকসভা থেকে কপিলকৃষ্ণ ঠাকুরের জয়ের পরে মমতাবালা ঠাকুর এবং মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুরদের মধ্যে দূরত্ব স্পষ্ট হতে থাকে। এই ফাটলই ধীরে ধীরে বিজেপির প্রবেশপথ খুলে দেয়।
২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে বনগাঁয় শান্তনু ঠাকুর এবং রানাঘাটে জগন্নাথ সরকার বিজেপির হয়ে জয় পান। সেই থেকে মতুয়া ভোটব্যাঙ্ক একপ্রকার ভাগ হয়ে যায়। ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনেও সেই বিভাজন ধরে রাখে বিজেপি। এমনকি ২০২৪-এর লোকসভা ভোটেও মতুয়া এলাকা বিজেপির দিকে ঝুঁকে ছিল— এমনটাই বলছে পরবর্তী বিশ্লেষণ।
ঠাকুরবাড়িকে ঘিরে নতুন করে সক্রিয় তৃণমূল
এই ভোট হারের ধারা ভাঙতে মরিয়া তৃণমূলও। ইতিমধ্যেই রাজ্যসভার জন্য মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে মমতাবালা ঠাকুরকে। তাঁর কন্যা মধুপর্ণা ঠাকুরকেও বাগদা থেকে উপনির্বাচনে জিতিয়ে আনা হয়েছে। তৈরি করা হয়েছে ‘মতুয়া উন্নয়ন বোর্ড’, যার শীর্ষে বসানো হয়েছে মমতাবালাকেই। অর্থাৎ, ঠাকুরবাড়ির পুরনো সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করতেই একাধিক কৌশল নিচ্ছে ঘাসফুল শিবির।
পাল্টা হামলা বিজেপির: সরব মতুয়া মহাসঙ্ঘ
তৃণমূলের এই কৌশলের উত্তরে বিজেপিও নিজের দখল ধরে রাখতে চাইছে। সরাসরি মাঠে নামানো হয়েছে অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘকে। সম্প্রতি মুখ্য নির্বাচন আধিকারিকের কাছে তারা স্মারকলিপি জমা দিয়ে অভিযোগ করেছে, মতুয়া ভোটারদের নাম ভোটার তালিকা থেকে ইচ্ছাকৃতভাবে বাদ দেওয়া হচ্ছে। তাদের অভিযোগ, সিএএ-র সমর্থক হওয়া, সনাতন মূল্যবোধে বিশ্বাস রাখা এবং রাজ্যের দুর্নীতির বিরুদ্ধে মুখ খোলার জন্যই তাঁদের লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে।
সিএএ-এর ছায়া
সিএএ অর্থাৎ নাগরিকত্ব আইন বাস্তবায়নের দাবি বিজেপির এক বড় রাজনৈতিক অস্ত্র। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন, যাঁদের নাম কাটা হচ্ছে, তাঁরা সিএএ-তে আবেদন করলেই নাগরিকত্ব পাবেন। শান্তনু ঠাকুরও প্রকাশ্যে এই ইস্যু তুলে ধরে বিজেপির অবস্থান মজবুত করার চেষ্টা করছেন।
ভোটের আগে অভূতপূর্ব উত্তেজনা
এত বছর পর এই প্রথম একসঙ্গে মতুয়া ভোটারদের ঘিরে দু’টি রাজনৈতিক দলের এ রকম সক্রিয়তা নজরে পড়ছে। কারণ, বাংলার প্রায় ৩ কোটি মতুয়া ভোটারের একাংশ যদি দিক বদলায়, তবে ভোটের ভাগ্যও বদলে যেতে পারে। বনগাঁ, রানাঘাট, কৃষ্ণনগর, ব্যারাকপুর— এই চারটি লোকসভা কেন্দ্রের বেশির ভাগ বিধানসভা আসনেই মতুয়া ভোট নির্ণায়ক।
দেখা যাক, ২০২৬-এর বিধানসভা ভোটে শেষ হাসি কে হাসে— ঘাসফুল না পদ্ম?
বিপন্ন ‘ওয়াই’ ক্রোমোজোম! পুরুষের ভবিষ্যৎ কি তবে বিবর্তনের ছাঁকনিতে?

