তৃণমূলের ‘সমাধান’, বিজেপির সন্দেহ—রাজনীতির অঙ্কেই বদল ১৪০ গোষ্ঠীর ভাগ্য?
রাজ্যে ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচন সামনে রেখে ওবিসি (অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি) তালিকা নিয়ে এক বড়সড় পদক্ষেপ করল রাজ্য সরকার। সোমবার রাজ্য মন্ত্রিসভা অনুমোদন দিয়েছে ৭৬টি নতুন জনগোষ্ঠীকে ওবিসিভুক্ত করার প্রস্তাবে। ফলে মোট সংখ্যা দাঁড়াল ১৪০-এ। তবে এই সিদ্ধান্তকে ঘিরে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তর্ক। অনেকের প্রশ্ন, ভোটের আগের বছর এই পদক্ষেপ নির্বাচনী লাভ হিসাবেই কি?
তৃণমূল বলছে ‘জট খুলবে’, বিজেপি বলছে ‘তোষণ’
তৃণমূলের একাংশের বক্তব্য, কলকাতা হাই কোর্ট যখন গত বছর মে মাসে ১২ লক্ষ ওবিসি শংসাপত্র বাতিল করেছিল, তখন রাজ্য সরকারের ভাবমূর্তি ধাক্কা খেয়েছিল। নতুন তালিকা সেই সংকট কাটিয়ে তোলার চেষ্টা। শাসকদলের দাবি, এই সিদ্ধান্ত প্রশাসনিক জট মুক্ত করবে। তবে বিজেপির দাবি, মুসলিম জনগোষ্ঠীকে ওবিসি তালিকায় ঢুকিয়ে ভোট টানার চেষ্টা চলছে।
বিজেপি সাংসদ মনোজ টিগ্গার অভিযোগ, “এই সমীক্ষা প্রক্রিয়া নিয়েই প্রশ্ন আছে। সংখ্যালঘু তোষণ করতেই এই সিদ্ধান্ত। এটা নিখাদ ভোটের রাজনীতি।”
আগে ৬৪, এখন ১৪০—প্রক্রিয়ায় কী পরিবর্তন?
এর আগে ৬৬টি গোষ্ঠী ছিল ওবিসিভুক্ত। সেখান থেকে দু’টি বাদ দিয়ে সংখ্যা দাঁড়ায় ৬৪। এবার ৭৬টি নতুন জাতিগোষ্ঠী যুক্ত করে মোট সংখ্যাকে ১৪০-এ নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আগে ওবিসি সংরক্ষণ ছিল ১০ শতাংশ, এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭ শতাংশে। যদিও এই তালিকার পুরোটা এখনও প্রকাশ্যে আসেনি। জানা যাচ্ছে, নতুন তালিকায় মাহিষ্য, তিলি, তামুল ও সাহা—এই চারটি বড় গোষ্ঠীর নাম থাকলে, তা নির্বাচনে তৃণমূলের বড় লাভ এনে দিতে পারে।
জনসংখ্যা ও মেরুকরণের অঙ্ক
বিভিন্ন সূত্রে অনুমান, রাজ্যের ১০ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে প্রায় ১.৭ কোটি মানুষ এই নতুন তালিকার আওতায় আসতে পারেন। মাহিষ্য গোষ্ঠী যেমন গ্রামীণ হুগলি, নদিয়া ও অন্যান্য জেলায় বিস্তৃত, তেমনি উত্তরবঙ্গ ও জঙ্গলমহলেও ওবিসিভুক্তদের উপস্থিতি লক্ষণীয়। তবে যদি দেখা যায়, নতুন তালিকায় মুসলিম গোষ্ঠীর সংখ্যা বেশি, তাহলে বিজেপির হাতে ‘মেরুকরণ’-এর অস্ত্র চলে আসবে বলেই ধারণা রাজনৈতিক মহলের।
আইনি নজরদারির মুখে নতুন তালিকা
২০২৪ সালের মে মাসে হাই কোর্টের রায়েই বাতিল হয়েছিল ১২ লক্ষ শংসাপত্র। এরপর সুপ্রিম কোর্টে রাজ্য আবেদন করে জানায়, নতুন সমীক্ষা চলছে। ওবিসি কমিশনের সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে মন্ত্রিসভা সিদ্ধান্ত নেয়। তবে এই প্রক্রিয়াও আদালতের নজরে। ১৯ জুন হাই কোর্টে রয়েছে নতুন একটি মামলার শুনানি।
রাজ্য সরকারের শীর্ষকর্তারা আশাবাদী—“সমীক্ষা খাতায়-কলমে হয়নি, ভিডিওগ্রাফিও হয়েছে। তাই আদালত আর বাধা দেবে না বলেই মনে করছি।” ৯ জুন থেকে শুরু হওয়া বিধানসভার বাদল অধিবেশনেই নতুন তালিকা পেশ হবে বলে খবর।
পাতিলেবু খেলে মাইগ্রেন কমে? ডাক্তাররা যা বলছেন ভাইরাল টোটকা নিয়ে

